নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টে আপনাদের জন্য নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট নিয়ে এসেছি। কারণ শীতকালে আমাদের বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগে আক্রমণ করে থাকে, তার মধ্যে একটি হলো নিউমোনিয়া। তাই আজকের এই পোস্টে নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিশেষ কিছু তথ্য জানাবো। নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা উচিত।

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার

তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করি।

সূচিপত্রঃ নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার

নিউমোনিয়া রোগ কি

প্রিয়া পাঠক আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ পোস্টটিতে আপনাদের জন্য নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষ কিছু আলোচনা করতে চলেছি। আপনাদের শিশুর ও বয়স্ক ব্যক্তি অনেক সময় নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। তাই আজকের এ পোস্টে আমরা নিউমোনিয়া রোগ কি সে সম্পর্কে আগে জানব।

নিউমোনিয়া হল একটি ফুসফুসের সংক্রমণ যাতে একটি বা উভয় ফুসফুসেরই বায়ু থলি স্ফীত হয়ে যায়। যখন বাতাসের থলি তরল বা পুঁজ (পিউলিয়েন্ট উপাদান) দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায় তখন কফ বা পুঁজ সহ কাশি, জ্বর, ঠান্ডা লাগা এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক সহ বিভিন্ন প্রজাতির কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে।কারও রোগটি হলে তাঁর শরীরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের স্বাভাবিক আদান প্রদান প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

আরো পড়ুনঃ শীতে টনসিল ভালো করার উপায় - টনসিলের লক্ষণ

রোগটি হলে ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেহে বাতাসের আদান প্রদান প্রক্রিয়া অনেক বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। যার কারণে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড শরীরে জমা হয়ে দ্রুত মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, কিডনি ইত্যাদিকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে রোগী দ্রুত মৃত্যু হতে পারে।

নিউমোনিয়া রোগ হওয়ার কারণ

শীতকালে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। আর এসব কারণেই বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিউমোনিয়া এক আতঙ্কের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের এই পোস্টে আপনাদের জন্য আমরা নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষ কিছু আলোচনা করব। নিউমোনিয়া রোগে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা দেয়। কিন্তু নিউমোনিয়া রোগ হওয়ার কারণ সম্পর্কে কি আপনারা জানেন? তাহলে চলুন নিউমোনিয়া রোগ হওয়ার কারণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

এটি বায়ুবাহিত অত্যন্ত সংক্রামক একটি রোগ।যার কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫ বছরের কম বয়সী শতকরা ২২ জন শিশু মারা যায়। এ রোগের জীবাণু বিভিন্ন প্রকারে ছড়িয়ে থাকে।রোগাক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাহলে আসুন নিম্নলিখিত নিউমোনিয়া রোগের কারণ গুলো জেনে নিন।

১। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কোন সুস্থ ব্যক্তি আসলে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা কোন জিনিস ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁর শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।

২। এ রোগের জীবাণু সুস্থ মানুষের নাক ও মুখে থাকতে পারে। যা শ্বাস গ্রহনের মাধ্যমে ফুসফুসে ছড়িয়ে এ রোগ হতে পারে।

৩। আবার কিছু ক্ষেত্রে জীবাণু রক্তের সাহায্যেও ফুসফুসে সংক্রমিত হতে পারে।

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ

অনেক মা নির্দিষ্ট সময়ের আগে শিশুর জন্ম দেয়, এবং শিশুর ওজন কম হওয়া, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, টিকা সময়মত না নেওয়া এবং অন্য কোন শারীরিক অসুস্থতার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে পরবর্তী জীবনে সহজেই সে নিউমোনিয়ায় শিশুটি  আক্রান্ত হয়ে থাকে।

আজকের এই পোস্টে আমরা নিউমোনিয়ার রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করছি। নিউমোনিয়া কি এবং কেন হয় সে সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। এখন নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ গুলো কি সে সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

১। শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া

২। জ্বর, কাশি অথবা শ্বাসকষ্ট হওয়া।

৩। বয়স অনুযায়ী শ্বাস দ্রুত মনে হওয়া

৪। অস্থিরতা ভাব হওয়া

৫। খাবারে অরুচি হওয়া 

৬। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

আরো পড়ুনঃ কান পাকলে করণীয় ও চিকিৎসা

৭। পেটে ব্যথা হওয়া।

৮। মারাত্মক নিউমোনিয়ার হলে শ্বাস নেয়ার সময় বুকের নিচের অংশ ভিতরে ঢুকে যাওয়া

৯। শ্বাসকষ্টের কারণে রোগীর খিঁচুনি হতে পারে

১০। নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নাক ফুলে উঠতে পারে। মুখ ও , কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে ঠোঁটে চারিপাশ নীল হয়ে যেতে পারে,এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।  

নিউমোনিয়া কাদের বেশি হয়

নিউমোনিয়া যে কারোরই হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা জরুরী। নিউমোনিয়া কাদের বেশি হয় এ সম্পর্কে অনেকেই অবগত না। চলুন তাহলে আমরা নিউমোনিয়া কাদের বেশি হয় সে সম্পর্কে জেনে নিন।

১। শিশু ও বয়স্কদের মাঝে এ রোগটি দেখা দিতে পারে।

২। যদি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তাহলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

৩। যারা ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন, তাদেরও এই রোগটি দেখা দিতে পারে।

৪। যারা বিভিন্ন নেশা দ্রব্য যেমন ধূমপান এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের এ রোগটি হতে পারে।

৫। যারা স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করছেন।

৬। এবং অনেকেই আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস ইত্যাদি বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার

আজকের এই পোস্টে আপনাদের জন্য নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ইতিমধ্যে কিছু করে ফেলেছি। নিউমোনিয়া হচ্ছে ফুসফুসে জীবাণুর সংক্রমণজনিত একটি রোগ।বয়স্কদের বেশী হলেও শিশু, তরুণ সহ স্বাস্থ্যবান লোকদেরও রোগটি হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাহলে চলুন আজকের এই পোস্টটিতে আমরা নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিই।

১। নিউমোনিয়ার প্রতিরোধ করতে হলে বাড়ির সকলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরী। তাই দিনে সবাইকে কমপক্ষে দুইবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত।

২। আর যদি কোন শিশু অপরিণত বয়সে জন্ম নেয় তাহলে তাদের ব্যপারে অতিরিক্ত সতর্কতা থাকা জরুরি।

৩। অপরিণত বা স্বল্প ওজনের শিশুরা পরবর্তীতে খুব সহজেই  বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাই গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অপরিণত বা স্বল্প ওজনের শিশুর জন্ম না হয়।

৪। কারও ঠাণ্ডা বা কাশি হলে অথবা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।

৫। শিশুকে চুলা এবং সিগারেটের ধোঁয়া এবং দূষিত ধোঁয়া থেকে দূরে রাখবেন।

৬। যারা বয়স্ক এই রোগটিতে ভুকে থাকেন, তারা পুষ্টিকর খাবারের গ্রহণ করবেন। তাদের জামা কাপড় এবং ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। ধূমপান এবং নিশাদব্য থেকে বিরত থাকবেন।

৭। শিশুরা বেশি নিউমোনিয়া সংক্রান্ত রোগে ভুগে থাকে এবং তারা যেন অপুষ্টির শিকার না হয়, তাই তার জন্মের প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে তাকে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি পুষ্টিকর খাবারও খাওয়াতে হবে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায়

৮। অপুষ্টিকর শিকার হন অনেক শিশু। এদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায় অনেক।তাই শিশুর বয়স ২ বছর পুর্ণ হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই অন্যান্য খাবারের সঙ্গে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোও চালিয়ে যেতে হবে।

৯। আপনার শিশুকে সময়মতো তার টিকাগুলো দিবেন।

১০। আর অন্যের সামনে হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় হাত বা রুমাল দিয়ে অবশ্যই মুখ ঢেকে নিতে হবে।

১১। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তি থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে সহজেই রোগটির সংক্রমন থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব।

শেষ কথাঃ নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টটিতে আমরা নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেছি। নিউমোনিয়া জটিল এবং মারাত্মক ফুসফুস সংক্রান্ত একটি রোগ। এর থেকে বাঁচতে হলে নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা উচিত। আপনারা যারা আমাদের এই পোস্টটি পড়েছেন এবং নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জেনেছেন আশা করি অনেক উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url