সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

বর্তমানে বেশিরভাগ সন্তান জন্মগ্রহণ করে সিজারের মাধ্যমে। সিজার এবং নরমাল ভাবে জন্মগ্রহণ করার মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যখন কোন মায়ের সিজারের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয় সাধারণত তখন বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সিজারের পরে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা।

সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

অনেক মহিলারা ভয়ের মধ্যে থাকে যে সিজারের পরে হয়তো বা তাদের সিজার করা জায়গাতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। যদি কখনো এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আপনার করণীয় কি হবে? এবং আপনি কিভাবে বুঝবেন? এ বিষয়গুলো জানানো হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ

সাধারণত আগে যখন বাচ্চা জন্মগ্রহণ করত তখন নরমাল ডেলিভারী এর মাধ্যমে বাচ্চাদের জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে নরমাল ডেলিভারির ঝুঁকি না নিয়ে বেশিরভাগ পিতা-মাতা রয়েছে যারা তাদের সন্তানকে সিজারের মাধ্যমে জন্ম দিয়ে থাকে। কিন্তু সে যাদের মাধ্যমে জন্ম দেওয়ার ফলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

আরো পড়ুনঃ বসন্ত রোগের ৮টি লক্ষণ - বসন্ত রোগ কিভাবে ছড়ায়

  • বিশেষ করে যদি ভালো হাসপাতালে সিজার করা না হয় তাহলে এই সম্ভাবনা গুলো বেশি হয়ে থাকে। হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এর মধ্যে সিজার করা।
  • সাধারণত সিজার করতে যে সকল যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হয় সেগুলো সঠিকভাবে জীবন মুক্ত না করা। দীর্ঘদিন ধরে সিজারের পক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করা।
  • সিজারের সময় রোগীকে যে পোশাক পড়ানো হয় সাধারণত সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার না করা এবং এটির মধ্যে জীবাণু থাকার কারণে অনেক সময় ইনফেকশন হতে পারে।
  • সিজারের পরে যেই বেডে রাখা হয় সাধারণত সেই বেডের কাপড় ভালো ভাবে পরিষ্কার না করা এবং দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা।
  • সিজার করার পর পর তার সাথে বাইরের মানুষদের অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করা এবং তাদের জীবাণু যুক্ত হাত এর কারণে অনেক সময় ইনফেকশন হতে পারে।
  • যে সকল নারীদের পুষ্টি জনিত সমস্যায় রয়েছে সাধারণত এই পুষ্টি জনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় সিজারের পর ইনফেকশন হতে পারে।
  • সিজারের উপরে যে পানি ব্যবহার করা হয় সাধারণত ওই পানিতে জীবাণুমুক্ত না থাকে তাহলে অনেক সময় ইনফেকশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • যদি কোন গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাহলে সিজারের পরে অনেক সময় ইনফেকশন এর লেখা দিতে পারে।
  • যে সকল হাসপাতলে এক বেড থেকে অন্য বেডের দূরত্ব কম সাধারণত এ সকল হাসপাতলে সিজার করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় একে অপরের ইনফেকশন এর সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়
ছবিঃ banglaparenting.firstcry

যদি সিজারের পরে ইনফেকশন হয় তাহলে বেশি ভয় পাবেন না কারণ এটি তেমন কোন মারাত্মক বিষয় নয়। যে আপনার রোগীর কাটা জায়গায় ইনফেকশন হয়েছে তাই বলে কাউকে মারা যাবে এমনটা নয়। শুধু কয়েকদিন কষ্ট করতে হবে এরপরে ভালোভাবে যত্ন নিলেই এবং ইনফেকশন দূর করার ওষুধ গুলো লাগালেই তাড়াতাড়ি এখান থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।

সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ

এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যদি সিজারের পরে আপনার ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনার কাটা জায়গাতে ইনফেকশন হয়েছে? সাধারণত এই বিষয়টি বোঝার জন্য বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে আমাদেরকে এই লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। আপনাদের একটি তথ্য জানিয়ে রাখি যে সিজার করে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।

  • সিজারের পরে যদি আপনার কাটা জায়গায় চারপাশের লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যায় তাহলে বুঝতে হবে সিজারের জায়গাটিতে ইনফেকশন হয়েছে।
  • যে জায়গাতে সিজার করা হয়েছে সাধারণত উক্ত জায়গাটি প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা করবে এমনকি মাঝেমধ্যে পেট ব্যথা করতে পারে।
  • যদি আপনার সিজার করা জায়গাতে ইনফেকশন দেখা দেয় তাহলে আপনি যখন প্রসাব করতে যাবেন তখন প্রচুর পরিমানে কষ্ট হবে।
  • আপনার যে জায়গাতে সিজার করা হয়েছে সাধারণত সেই জায়গা থেকে দুর্গন্ধযুক্ত পূঁজ বা লাল রঙ্গের রস বের হতে পারে।
  • সিজারের জায়গাতে যদি ইনফেকশন হয় তাহলে এর ব্যথার কারণে উক্ত জায়গাটি এমনকি সমস্ত পেট এবং পুরো শরীর ফুলে যেতে পারে।
  • ইনফেকশন হলে সাধারণত প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হয় এর কারণে অনেক সময় জ্বর জ্বর ভাব এমনকি প্রচন্ড পরিমাণে জ্বর আসতে পারে।
  • অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাসিকের রাস্তা দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হতে পারে আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় খারাপ রক্ত বের হতে পারে ইনফেকশন এর কারণে।

সিজারের পর ইনফেকশন হলে করণীয়

আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে সিজারের পরে ইনফেকশন কেন হয়? সাধারণত যদি কারো হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে বুঝবে এর লক্ষণ সমূহ। এখন কোন কারণে যদি আপনার এই সমস্যাটি দেখাতে তাহলে আপনাকে অবশ্যই এখান থেকে বাঁচার উপায় এবং আপনার করণীয় গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। সাধারণত সিজার করে ডাক্তাররা এই বিষয়ে বিস্তারিত বলে থাকেন।

১। যদি সিজারের পরে আপনার ইনফেকশন হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পূর্বের রোগীদের ব্যবহার করা কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না।

২। যে কোন জিনিস ব্যবহার করার আগে জীবাণু মুক্ত আছে কিনা এই বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি না থাকে তাহলে অবশ্যই আগে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে তারপরে ব্যবহার করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যথার ওষুধের নাম কি

৩। যদি কোন কারণে সিজারের পরে ইনফেকশন হয়ে যায় তাহলে আপনাকে অবশ্যই কাটা জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে সবসময়। খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ময়লা উক্ত জায়গাতে না পারে।

৪। যেহেতু ইনফেকশন এর কারণে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হতে পারে তাই সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। জোরে জোরে হাঁটলে অনেক সময় উক্ত জায়গাটি ব্যথা পায় যার ফলে রক্ত বের হয়ে যেতে পারে।

৫। রোগীকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে কারণ উপরোক্ত জায়গাতে কখনো ময়লা এবং ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। সাধারণত এগুলোর কারণে অনেক সময় জীবনের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ইনফেকশন আরো বাড়িয়ে দেয়।

৬। যদি সিজার করা জায়গা পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই গরম পানি এবং তার মধ্যে জীবাণু নাশক মিশিয়ে তারপরে পরিষ্কার করতে হবে।

সিজারের পর সেলাই ফুলে যায় কেন

অনেক সময় দেখা যায় যে সিজারের পরে সেলাই করার স্থান ফুলে যায়। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী রয়েছে যারা এর কারণ সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখেনা। সাধারণত উপরোক্ত জায়গাটি কেন ফুলে যায় এ সম্পর্কে তাদের কোন বিষয় জানা নেই। যদি অস্বাভাবিক ভাবে জায়গাটি ফুলে যায় তাহলে অনেক সময় বিপদের কারণ হতে পারে।

সিজার হলো একটা অপারেশন। সাধারণত সিজার করা হলে এ সময় মায়ের অনেক রক্ত প্রবাহ হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়টিকে খুবই হালকার মধ্যে নিয়ে থাকে। তবে এটি একটি জটিল অপারেশন। অপারেশন করে বাচ্চা বের করার পরে সাধারণত জায়গা থেকে সেলাই করে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক সময় ইনফেকশন এর কারণে আবার বিভিন্ন রকম কারণে জায়গাটি ফুলে যেতে পারে।

সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়
ছবিঃ banglaparenting.firstcry

একজন নারীর স্বীকার করার পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে একটা দীর্ঘ সময় পার করতে হয়। যে জায়গাটি সিজার করা হয় সাধারণত জায়গাটা সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়। কয়েকদিন পর এই সুতা গুলো খুলে নেওয়া হয় এবং আস্তে আস্তে চামড়া গুলো সংযুক্ত হয়ে যায়। সাধারণত সেলাই করা জায়গাটা ফুলে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ইনফেকশন।

ইনফেকশন থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে কি করতে হবে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। বিষয়টি তেমন কোন জটিল সমস্যা নয় তবে অনেক সময় জটিল হয়ে যেতে পারে। তাই আগে থেকে নিজেকে সতর্ক থাকতে হবে। ইনফেকশন এর কারণে যেন আমাদের ক্ষতি না হয় এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে সব সময়।

সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে

আরো একটি কমন প্রশ্ন শোনা যায় সাধারণত যে সকল মায়েরা সিজার করে বাচ্চা জন্ম দিতে চাই সাধারণত তারা এই ধরনের প্রশ্ন করে থাকে। সিজার হল জটিল একটি অপারেশন সাধারণত সিজার করার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দীর্ঘ একটা সময় পাঠিয়ে দিতে হয়। যেহেতু অচেতন করে সিজার করা হয় সেও তো সিজার করার সময় তেমন কোন ব্যথা হয় না।

তবে যখন সিজার সম্পন্ন হয়ে যায় এবং আপনার অচেতন ভাব কেটে যায় তখন ব্যাথা অনুভব হতে থাকে। প্রথম অবস্থায় কয়েকদিন প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা থাকবে এটা স্বাভাবিক। আপনি সঠিকভাবে ঘুমাতে পারবেন না। এমনকি ঘুমের ঘোরে বামদিক ডান দিক ঘোরাফেরা করতে পারবেন না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যথা থাকে।

সিজারের পর কতদিন পর সেলাই শুকায়

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে সেটি হল সিজারের পর কতদিন পরে সেলাই শুকায়? সাধারণত এক একজনের ক্ষেত্রে বিষয়টি এক এক রকম হয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রেই খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় বিশেষ করে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে তাদের আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কিছুটা সময় লাগে।

আরো পড়ুনঃ মাথা ভারী হলে করণীয় - মাথা ভারী লাগার কারণ

সাধারণত সিজারের পরে জায়গাটিকে জোড়া লাগানোর জন্য সেলাই করা হয় তবে শরীরের সাথে মিশে যায় এরকম সুতা ব্যবহার করা হয় না। সিজার করার পরে সাধারণত সেলাই শুকাতে ৭/৮ দিন সময় লাগে। সাধারণত সেলাই শুকিয়ে যাওয়ার পরে সুতা কেটে বের করে নেওয়া হয় এরপর একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই জায়গাটি সঠিকভাবে জোড়া লেগে যায়।

সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ, লক্ষণ ও করণীয়
ছবিঃ momjunction

আমাদের শেষ কথা

যেহেতু বর্তমান সময়ে প্রচুর পরিমাণে শিকার করা হচ্ছে তাই প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। বিশেষ করে কোন নারী যেন সিজারের পরে ইনফেকশন এর মধ্যে আক্রান্ত না হয় এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে। যদিও ইনফেকশন হলে তেমন কোনো ভয়ের কারণ নেই একটু বেশি কষ্ট হবে এটাই সমস্যা। এর কিছুদিন পরেই এটি এমনিতে ভালো হয়ে যাবে।

তবে এই কষ্ট নেওয়ার প্রয়োজন নেই যদি একটু সতর্কতা অবলম্বন করা যায় তাহলে। আশা করি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে সিজারের পরে বিস্তারিত বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url