বসন্ত রোগের ৮টি লক্ষণ - বসন্ত রোগ কিভাবে ছড়ায়

বসন্ত একটি অত্যন্ত ভাইরাস সংক্রমক রোগ, যা সবারই মানবদেহে একবার না একবার হয়ে থাকে। তাই আমাদের সকলকে বসন্ত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের আমরা বসন্ত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানাবো। আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনি অবশ্যই বসন্ত রোগের লক্ষণ এবং বসন্ত রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বসন্ত রোগের ৮টি লক্ষণ

তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আমরা বসন্ত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ বসন্ত রোগের ৮টি লক্ষণ - বসন্ত রোগ কিভাবে ছড়ায়

বসন্ত রোগ কি

গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীরে কিছু মৌসুমী রোগ দেখা দেয়। এই সময়ে যে রোগটি বেশি মানুষ শিকার হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে জলবসন্ত বা চিকেনপক্স। এটি যে শুধু গ্রীষ্মকালেই হয় তা নয় বছরের যে কোনো সময়ই এ রোগ হতে পারে, তবে গরমকালে বা শীত-গরমের তারতম্যের সময় এ রোগটি বেশি দেখা দিয়ে থাকে। জল বসন্ত বা চিকেন  পক্স এ দুইটি নামে বসন্ত রোগটি পরিচিত এটি সাধারণত ভাইরাস সংক্রমক একটি রোগ। যা ভেরিসেলা জোস্টার নামক একটি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে।

বসন্ত রোগ কিভাবে ছড়ায়

জলবসন্ত একটি ভাইরাস জীবাণুবাহিত রোগ। ভ্যারিসিলা জোসটার ভাইরাসের দ্বারা মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে অন্যরাও সংক্রমিত হয়। ছোট বড় সকলেই এই জল বসন্তে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে এক থেকে পাঁচ বছর শিশুদের এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ হাত পা ব্যথা করার ৮টি কারণ

এই রোগটি বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের শুরুতে বা শীতের শেষের দিকে আবহাওয়া তারতম্যের কারণে এ রোগটি আমাদের শরীরে দেখা দিয়ে থাকে।জল বসন্ত বা চিকেন পক্স বিভিন্ন ভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে জল বসন্ত একটি ছোঁয়াচে রোগ।

আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই এটি ছড়াতে শুরু করে।দেহে জীবাণু প্রবেশের ১৪ থেকে ১৬ দিনের মাথায় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে এ জীবাণু দেহের মধ্যে ২১ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে বসন্ত রোগটি যেভাবে ছড়ায় তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১। জলবসন্ত সাধারণত মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।

২। বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়।

৩। আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে।

৪। আক্রান্ত ব্যক্তির চামড়ার ঘোষণে বা ফুসকুড়ির রস শরীলে লাগলে।

উপরোক্ত এই সকল বিষয়গুলো থেকে বসন্ত রোগ ছড়ায় তাই আমাদের উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বসন্ত রোগটি সকলেরই শরীরে সাধারণত একবার দেখা দিয়ে থাকে।

বসন্ত রোগের ৮টি লক্ষণ

আমাদের শরীরে বসন্ত রোগ দেখা দিলে তার অবশ্যই কিছু লক্ষণ রয়েছে এই লক্ষণ গুলো সম্পর্কে আপনি যদি জানতে পারেন তাহলে আপনি খুব সহজে বুঝতে পারবেন আপনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাই আমাদের সকলেরই বসন্ত রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে চলুন আমরা বসন্ত রোগের লক্ষণগুলো কি তা জেনে নিই। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে।

লক্ষনঃ

১। প্রথমে ত্বকে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে যা ফুসকুড়িতে পরিণত হয়।

২। ফুসকুড়ি দেখা দেওয়ার ২-৩ দিন আগে থেকেই শরীর ব্যথা অনুভূত হয়।

৩। জ্বর দেখা দেয়

৪। পেটব্যথা হতে পারে।

৫। লালচে ফুসকুড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়। 

৬। ফুসকুড়িতে পানি জমে, যা পরবর্তীতে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়।

৭। কাশি ও পাতলা পায়খানাও হতে পারে। 

৮। সাধারণত ২ সপ্তাহ থেকে ১ মাস পর্যন্ত এই রোগের স্থায়িত্ব হয়ে থাকে।

বসন্ত রোগ হলে করণীয়

জলবসন্ত বা চিকেন পক্স ভাইরাস সংক্রামক রোগ, যা ভেরিসেলা জোস্টার ভাইরাস দ্বারা হয়। গ্রীষ্মের শুরুতে বা শুষ্ক আবহাওয়ায় ভাইরাসটির আক্রমণ একটু বেশি দেখা দিয়ে থাকে। ছোট বড় প্রায় সকল বয়সী, নারী-পুরুষ সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার একটু বেশি, বিশেষ করে ১-১০ বছরের কম বয়সীদের বেলায়।

আরো পড়ুনঃ মাথা ভারী হলে করণীয় - মাথা ভারী লাগার কারণ

জল বসন্ত আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ কোনো ঔষুধের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু বাড়তি যত্ন এবং সতর্কতা হলে এরা থেকে নির্মূল পাওয়া সম্ভব। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভালোভাবে যত্ন নিন তার ব্যবহার যে সকল জিনিসপত্র আলাদা করে রাখুন এবং আক্রান্ত হওয়ার ৫/৬ দিন পর কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা মাখিয়ে পাঁচ ছয় দিন গোসল করেন।

এতে করে শরীর থেকে সকল ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে এবং বসন্ত দাগ গুলো নির্মূল করতে অবশ্যই সাথে ডাবের পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। বসন্ত রোগ প্রতিরোধ করতে শিশুকে ভ্যাকসিন দিয়ে রাখুন।

বসন্ত রোগ হলে যা খাবেন যা খাবেন না

বসন্তের আরামদায়ক আবহাওয়ায় রোগ–জীবাণুর সংক্রমণ বেশি হয়। এ সময় জলবসন্তসহ নানা রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। এই রোগ প্রাণঘাতী রোগ না হলেও যথাযথ পুষ্টিকর খাবার না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। অনেকেই এই রোগ দেখা দিলে অনেক কুসংস্কার মেনে বেঁচে চলে এবং প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকে যার ফলে আমাদের শরীর আরো পুষ্টিহীন হয়ে পড়ে।

এ সময়ের জন্য রোগীরা বেশি মসলাযুক্ত খাবার না খায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করছেন তারা অবশ্যই মায়ের বুকের দুধ পান করা থেকে বিরত থাকবেন না। এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে যেন অবশ্যই খাদ্যের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ক্যালরি ও খনিজ পদার্থ থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই বসন্ত রোগ হলে যা খাবেন এবং যা খাবেন না সে বিষয়ে আপনাদের জানাবো।

বসন্ত হলে যা খাবেননাঃ

লেবু জাতীয় ফলঃ লেবু জাতীয় ফলের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা দ্রুত আমাদের শরীরে খনিজ উৎপাদনে সাহায্য করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে লেবু জাতীয় খাবার শিশুদের না খাওয়াই ভালো।কারণ, উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক অ্যাসিডের কারণে লেবুর রস মুখের ভেতরে গেলে ক্ষতস্থানে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়।

চর্বিযুক্ত খাবারঃ চর্বিযুক্ত খাবার বিশেষ করে নারকেল, মাখন, চকলেট, বাদাম ও পনির শরীরের প্রদাহ বাড়ায়। এসব খাবারে খুব বেশি পরিমাণে চর্বি থাকে। এ ধরনের চর্বি জলবসন্তের গুটির জ্বালাপোড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এ সকল চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

অরগিনিনসমৃদ্ধ খাবারঃ চীনাবাদাম, ওয়ালনাট, পিনাট বাটার, চকলেট, বীজ ও কিশমিশে প্রচুর পরিমাণ অরগিনিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। অরগিনিন শরীরের উপকারী অ্যামিনো অ্যাসিড হলেও এই উপাদান জলবসন্তের জীবাণুর বংশ বিস্তার ঘটায়। তাই এসব অরগিনিনসমৃদ্ধ সমৃদ্ধ খাবার থেকে বিরত থাকবেন।

মসলাযুক্ত খাবারঃ অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার জলবসন্তের রোগীদের দেওয়া যাবে না। রোগীর মুখের ভেতরে ঘা থাকে বলে এ সময় এ ধরনের খাবার বাদ দেওয়া উচিত।

অতিরিক্ত লবণঃ অতিরিক্ত লবণ আমাদের শরীরের জন্য সব সময়ই ক্ষতিকর। জলবসন্তের সময় এ ধরনের খাবার মুখের ক্ষত বাড়িয়ে দেয়।

বসন্ত হলে যা খাবেনঃ এ সময় রোগীর কম মসলা জাতীয় খাবার তৈরি করে দেবেন এবং ফলের রস, দই, ডাবের পানি, মাছ, মাংস, ডিম, কম স্নেহযুক্ত আইসক্রিম, রান্না করা পাতলা ডালের পানি ,স্যুপ, মিল্ক শেক ইত্যাদি বেশি করে এ সময় রোগীকে খেতে দেবেন একবার না পারলে অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পরপর বারবার খেতে দিবেন।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুগণ আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের বিভিন্ন রকমের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়। আপনি যদি বসন্ত রোগ সম্পর্কে জানতে চান তা অবশ্যই আপনাকে এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ যে সকল ছোয়াচে রোগ ভয়ঙ্কর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বসন্ত রোগ। আশা করি আপনারা আজকের এই আর্টিকেল থেকে বসন্ত রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ মাথা ব্যথার ওষুধের নাম কি

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। কারন আমরা নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে এই ধরনের প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url