রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বিশেষ একটি তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। কারণ সামনেই রমজান মাস। রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব অত্যাধিক তাই রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে আমাদের সকলেরই জানা জরুরি। অনেকেই আছেন যারা রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চান।

রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা

তাই আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি আমরা রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে আলোচনা করব। তাহলে আর দেরি না করে রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন।

সূচিপত্রঃ রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা

রোজার গুরুত্ব

রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার এবাদত এর একটি পবিত্র মাস এ মাসের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে, যা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আমরা তা জানতে পারব। আজকের এই আর্টিকেলে আরো থাকছে রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা। তাহলে চলুন রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

আরো পড়ুনঃ রমজানের প্রস্তুতি কিভাবে নেব

রোযা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রোযার স্থান। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ্য প্রাপ্তবয়স্ক  নারী পুরুষদের পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।"-সহীহ বুখারী, হাদীস: ১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০৮০ (১৭-১৮)

হাদীস প্রমাণিত যে, রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয, ইসলামের আবশ্যক বিধানরূপে রোযা পালন করা ও বিশ্বাস করাও ফরয।

তাছাড়া কোনো শরয়ী ওযর ছাড়া কোন মুসলমান যদি রমযান মাসের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে তাহলে সে বড় পাপী ও জঘন্য অপরাধীরূপে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। হাদীস শরীফে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।

রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা

রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন কারণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আপনাদের জানাতে চলেছি। রহমত বরকত ও মাগফেরাত এর মাস রমজান।

তাই রোজা সঠিক নিয়মে পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে অনেকেই জানতে চাই। তাহলে চলুন রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে সঠিকভাবে জেনে নিন।

রমজান মাসে রোজা পালন করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে। রোজা অবস্থায় আপনার হাত-পায়ের নখ বা চুলদাড়ি কাটেন তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না। কারণ রোজা ভঙ্গের সাথে হাত পায়ের নখ এবং চুল দাড়ি কাটার কোন সম্পর্ক নেই। রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে পানাহার করা এবং সহবাস করার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ হয়ে থাকে।

রোজা অবস্থায় শরীরের অবাঞ্ছিত পশম মন্ডন করা বা কামানো, ছাঁটা বা কাটা অথবা উপড়ানো জায়েজ আছে; এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের খেলাফ যেন কোন কাজ না হয় সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত।

পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে এমন কোন কাজ যেন আমরা না করি যে সকল কাজে আমাদের রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। রোজা হল ইবাদতের একটি পূর্ণ মর্যাদা সম্পন্ন মাস। তাই আসুন এই মাসে আমরা সঠিক নিয়মে রোজা গুলো পালন করে থাকি।

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা সে বিষয়ে আশা করি জ্ঞান লাভ করতে পেরেছেন।

রোজা ভঙ্গের কারণ

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আমরা ইতিমধ্যে রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। রমজান মাসে রোজা করা একটি ফরজ কাজ হিসেবে গণ্য। তাই সকলেরই আমাদের গুরুত্বসহকারে রমজানের মাসে রোজা গুলো সঠিক নিয়মে পালন করা উচিত। অনেকেই আছেন যারা রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্ক আপনাদের সামনে আলোচনা করব।

আরো পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

১। রোজা অবস্থায় আপনি যদি ইচ্ছাকৃত আহার করেন তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে কিন্তু সেটা অনিচ্ছাকৃত খেলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না।

২। রোজাদার সিয়াম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে, তাকে সেই রোজা কাযা করতে হবে এবং ওই রোজার কাফফারা আদায় করতে হবে।

৩। পানাহারের কাজ করে এমন ইনজেকশন গ্রহণ করাতেও রোজা ভঙ্গ হবে।  কারণ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কিংবা অন্য কোন কারণে শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানো হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।এবং পায়ুপথে কিছু ঢুকালেও আপনার রোজা ভঙ্গ হবে। 

রীরের শক্তি বৃদ্ধির করে যেমন গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহারে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ খাবার যেই কাজ করে এক্ষেত্রে অনেকটা একই কাজ করছে এটি। তবে শুধুমাত্র অপারগতায় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ইনসুলিন, পেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন নেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৪। মহিলাদের হায়েয বা নিফাস হলে অর্থাৎ মাসিক রক্তস্রাব শুরু হলে অথবা সন্তান প্রসব করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সমান সংখ্যক রোজা কাযা করে নিতে হবে।

৫। হস্তমৈথুন, আলিঙ্গন, অথবা চুম্বনের মাধ্যমে বির্যপাত ঘটালে রোজা ভঙ্গ হবে। তবে স্বপ্নদোষ বা রোগের কারণে বির্যপাত হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে রোজাদারের কোন ইচ্ছা ছিল না।

৬। সাহরি গ্রহণের সময় মনে করে পানাহার করলো, কিন্তু দেখা গেলো সুবহে সাদিক শেষ হয়ে গেল। সে রোজা হবে না।

৭। রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট-মাজন ব্যবহার করা মাকরুহ। কেননা তা কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।

৮। গোসল ফরজ হয়েছে, এমন অবস্থায় নাপাক থেকে সারাদিন অতিবাহিত করলে এ অবস্থায় আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৯। গড়গড়া কুলি করা অথবা নাকে বেশি গভীরে পানি দিলে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

১০। রোজা অবস্থায় পরনিন্দা করা, মিথ্যা বলা, চোগলখুরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা, নাটক-সিনেমা দেখা ও যেকোন গুনাহের কাজে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

১১। রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত মুখভরে বমি করলে। আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

১২। শরীরের কোন অংশ কাটলে সে থেকে রক্তক্ষরণ হলে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

রোজার ফজিলত

আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আমরা যেমন রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা এ বিষয়ে জানতে পেরেছি তেমনি রোজা ভঙ্গের কারণগুলো সম্পর্ক সঠিকভাবে জানতে পেরেছি। প্রত্যেক মুসলমানের কাছে রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যার মাধ্যমে আমাদের অনেক গুনাহ খাতা আল্লাহ তায়ালা মাফ করে থাকেন রোজার অনেক ফজিলত রয়েছে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আমরা রোজার ফজিলত সম্পর্ক সঠিকভাবে জানব।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পবিত্র রমজানের ফজিলত,গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,পবিত্র রমজান মাস দয়া,কল্যাণ ও ক্ষমার মাস। এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস৷ এ মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন,এর রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান৷ রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস তথা পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর জান্নাত আমাদের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে ৷ তিনি তোমাদেরকে এ মাসে সম্মানিত করেছেন। 

তিনি (সা.) আরো বলেছেন,জান্নাতের মধ্যে আটটি দরজা আছে।এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান৷ এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করতে পারবে৷ রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিতে যে ত্রিশটি রোজা পালন করবে আল্লাহ তা'আল তাকে আরশের ছায়া প্রদান করবেন। রোজদারের  মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশক হতেও পবিত্র ও সুগন্ধিময়।নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি প্রকৃতই দূর্ভাগা বা হতভাগ্য যে রমজান মাস পেয়েও মহান আল্লাহর ক্ষমা হতে বঞ্চিত হয়।

হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম) 

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন,যারা এই মাসে অর্থাৎ পবিত্র রমজান মাসে নিজ ব্যবহার ও আচার আচরণকে সুন্দর করবে তারা সেদিন সহজেই পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। যারা এই মাসে ভৃত্য বা অধীনস্তদের কাজ কমিয়ে দেবে মহান আল্লাহ শেষ বিচার দিবসে তার হিসাব সহজ করে দেবেন।

এই মাসে নফল নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন,যে একটি ফরজ নামাজ আদায় করবে তাকে অন্য মাসের সত্তুরটি ওয়াজিব নামাজ আদায়ের সওয়াব দান করবেন।

আরো পড়ুনঃ সাহু সিজদা কি কারণে দিতে হয়

তাই আসুন আমরা সকল রমজান মাস গুলো আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য ৩০ টি রোজা রেখে পার করি। এবং যে কাজগুলো থেকে আল্লাহ তায়ালা বিরত থাকতে বলেছেন আমরা তা থেকে বিরত থাকি। রমজান মাস অনেক ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। এ মাসের সকল গুনাহ খাতা থেকে যেন আমরা বাঁচতে পারি আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন আমীন।

রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনাঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা? রোজার ফজিলত, রোজা ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url