ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি - কোরবানি দেওয়ার নিয়ম

প্রিয় ভিউয়ার্স আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সকলেই ভাল আছে। আপনারা অনেকেই হয়তো নিজের সাধ্যমত পশু কুরবানি দিবেন। ঈদুল আযহার সময় অনেকেই ভাগে কুরবানি দিয়ে থাকেন তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের আমরা ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি সে বিষয়ে জানাবো। ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান।

ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি

তাই আপনাদের জন্য আমরা ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি সে বিষয়ে জানাতে এসেছি। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে সামনে ঈদ উল আযহা উপলক্ষে ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি সে বিষয়ে জেনে নেই।

সূচিপত্রঃ ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি - কোরবানি দেওয়ার নিয়ম

কোরবানি দেওয়ার নিয়ম

মুসলমানদের জন্য কুরবানী দেওয়া সুন্নতে মুকাদ্দা ও ওয়াজিব। প্রত্যেক মুসলমানই চাই আল্লাহ তাআলার এই সুন্নতের মুকাদ্দা ও ওয়াজিব কাজটি আমল করার।  সে জন্য আমাদের কোরবানি দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ভাগে কোরবানি দেওয়া যাবে কি এ বিষয়ে আপনাদের বিস্তারিতভাবে জানাবো। চলুন তাহলে কোরবানি দেওয়ার নিয়ম টুকু কি তা জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ কোরবানির পশু হারিয়ে গেলে করণীয়

মে ব্যক্তির নির্ধারিত পরিমান অর্থ সম্পদ রয়েছে তার জন্য কোরবানি দেওয়া অত্যাবাসক।নিসাব হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর সমমূল্যের নগদ টাকা ও ব্যবসার পণ্য বা সম্পদ।হিজরি বছরের জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কুরবানির পশু জবাই করতে হয়। কুরবানি দেওয়ার জন্য শর্ত হলো এ দিনগুলোতে পরিবারের জীবিকা নির্বাহের খরচ ছাড়া অতিরিক্ত নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ বা টাকার মালিক হলেই তার ওপর কুরবানি আবশ্যক।

স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক, মুসলিম যদি 'নিসাব' পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাঁদের পক্ষ থেকে একটি কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব ।

কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স ১ বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স ২ বছর এবং উটের বয়স ৫ বছর হতে হবে। দুম্বার ১ বছর পূর্ণ না হলেও যদি ১ বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হতে হবে।কোরবানির পশু যেমনঃ গরু, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।

আপনি যদি নিজের কোরবানির পশু নিজে জবাই করতে চান তাহলে সেটি হবে সবচাইতে উত্তম কাজ। কিন্তু আপনি যদি জবাই করতে পারেন তাহলে আপনি অন্যের দ্বারা সাহায্য নিতে পারেন কিন্তু কোরবানির পশু জবাই করার সময় আপনাকে অবশ্যই সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। কোরবানির পশুর জবাই করার সময় অবশ্যই আপনার অস্ত্র অনেক ধারালো হতে হবে। কোরবানির পশুটি না কষ্ট পাই।

১। শ্বাসনালী

২। খাদ্যনালী

৩। রক্ত চলাচলের নালীদ্বয় 

বক্ষস্থল হতে গলদেশের মধ্যবর্তী কোন স্থানে জবেহ করা বাঞ্চনীয়।কোরবানির পশুর মাথা দক্ষিণ এবং পেছনের দিক উত্তর দিকে রেখে কেবলামুখী করে শায়িত করে দোয়া পড়বেন।

এরপর নিম্নলিখিত এ দোয়াটি পড়বেনঃ

দোয়াঃ “ইন্নী ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতী ওয়াল আরদা হানীফাঁও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন, ইন্না সালাতী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্য়ায়া ওয়ামামা-তী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবর” বলে কোরবানির পশু জবেহ করার পর পাঠ করবেন- “আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী (অংশীদার থাকলে- ‘ওয়া মিন’ বলার পর প্রত্যেকের নাম ও বাপের নাম বলবেন) কামা তাক্বাব্বালতা মিন খলীলিকা ইব্রাহীমা আলাইহিস্ সালাম ওয়া হাবীবিকা মুহাম্মদিনিল্ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।”

ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি

কুরবানি হলো আল্লাহ তায়ালার জন্য আত্মত্যাগ করা। তাই প্রতি বছরই মমিন মুসলমানরা আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে কোরবানি করে থাকেন। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানী করে থাকেন। আমাদের  সমাজে ভাগে পশু কোরবানি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অনেকে এ বিষয়ে জানতে চান ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাগের কোরবানি দেওয়া যাবে কি? সে বিষয়ে চলন জেনে নিন।

শরিয়তে ভাগে কোরবানি দেওয়ার জায়েজ আছে। ভাগে কোরবানি বলতে বোঝানো হয় যে, একটি পশুকে একের অধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি দেওয়া। সাধারণত একটি পশু থেকে সর্বাধিক ৭ ব্যক্তি কোরবানি দিতে পারবেন।

তবে চাইলে যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করতে পারে। একটি বড় পশুকে সাত ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।একটি বড় পশু সাত ভাগের কম বা একজন ব্যক্তিও কোরবানি দিতে পারবেন।

গরু বা উট ভাগে কোরবানি দেওয়া যায়। ছাগল দিয়ে ভাগে কোরবানি করা যায় না এবং এর প্রচলনও নেই। এর কারণ ছাগল আকারে ছোট এবং বাজার দরে গরুর থেকে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। তাই আপনি উঠ বা গরু সাত ভাগে কোরবানি করতে পারবেন।

ভাগে কুরবানী দেওয়ার নিয়ম কি

কোরবানি আমাদের সকলেরই সমর্থ্যে না জুটার কারণে আমরা ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকি। আপনারা অনেকে ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন আশা করি ইতিমধ্যে আপনাদের সে উত্তরটি আমরা দিতে পেরেছি। আবার অনেকেই ভাগে কুরবানি দেওয়ার নিয়ম কি সে বিষয়ে জানতে চান তাই আপনাদের সুবিধার্থে আমরা ভাগে কুরবানী দেওয়ার নিয়ম কি সে বিষয়েও জানাবো।

আমরা যেহেতু নিম্ন শ্রেণীর মানুষগুলো সকলেই ভাগে কুরবানি  দিয়ে থাকি কিন্তু এভাবে কুরবানী দেওয়া কি আমাদের জন্য শুদ্ধ হচ্ছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কি অর্জন করতে পারছি? আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের এই কুরবানি  কবুল করছেন? এই নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগিয়ে তুলে।

নিজের অর্থে কেনা পশুটি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে জবাই করার মাধ্যমে একজন প্রকৃত মুসলমান মূলত নিজেকে আল্লাহর কাছে সমপর্ণের শিক্ষা নেয়।

কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সমান হতে হবে।কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২০৭)

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগেকোরবানি করা জায়েয। (মুসলিম, হাদিসঃ ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২০৭)

অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে, তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে অংশীদারদেরও কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা জরুরি। (বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/২০৮, কাজিখানঃ ৩/৩৪৯)

বেনামাজির সাথে কোরবানি দেওয়া যাবে কি

সমাজে যেমন আমরা বিভিন্ন পেশার মানুষ বসবাস করে থাকি তেমনি ভালো মন্দ মানুষও থাকে। কেউবা হারার পথে কেউ বা হারান পথে উপার্জন করে চলেছে। আর হারাম উপার্জন আল্লাহ তাআলার কাছে অপছন্দনীয়। আর হারাম উপার্জনের ইবাদত আল্লাহতালা কখনোই কবুল করে থাকেন না আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে আপনাদের সামনে বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করতে চলেছি।

কোরবানি হলো পৃথক পৃথক বিষয়। ঘরোয়া উটের জন্য সাতটি ভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে তবে কেউ যদি সাধ্য অনুযায়ী একটি উট ও গরু কোরবানি দিতে পারে সেটি আরো উত্তম। তবে না পারলে ও গরু সাত ভাগে একটি অংশ সে কোরবানি দিতে পারবে।

আপনি যদি হালাল উপার্জন করে থাকেন এবং হালাল নিয়তে কোরবানির জন্য আপনার অর্থ ব্যয় করে থাকেন তাহলে সেটি আল্লাহতালা অবশ্যই কবুল করবেন। আর যে ব্যাক্তি নামাজ না পড়ে হারাম টাকায় কুরবানি করে থাকেন সেটি ইসলাম অনুযায়ী কখনোই শুদ্ধ নয়। তবে কোরবানি কবুল হওয়া না হওয়া আল্লাহর উপর নির্ভর করে থাকে।

আপনার টাকাটি যদি হালাল হয়ে থাকে এবং কোরবানির জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যয় করে থাকেন এবং আপনি যদি মনে করে থাকেন আমার কোরবানি কবুল হয়েছে আর যে ব্যক্তির টাকা হারাম টাকা উপার্জন করে, নামাজ পড়েন না আল্লাহ তায়ালা তার কোরবানি কবুল করেননি এ কথাটি যথাযথ নয়। এবং দলিলেও প্রমাণিত নয়।

তাই আমাদের ইবাদত কবুল করা না করা সেটি আল্লাহর উপরে নির্ভর করবে। তবে আপনার হালাল টাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করলে আল্লাহ তা'আলা আপনার অংশটি অবশ্যই কবুল করবেন।

কোরবানি ও আকিকা একই সঙ্গে দেওয়া যাবে কি

আমাদের সমাজে অনেকে কুরবানি ও আকিকা একই সঙ্গে দেওয়া যাবে কি এ বিষয়ে জানতে চান। কেউ কেউ আবার কুরবানি  ও আকিকা একই সঙ্গে করেও থাকেন। যারা আকিকা সময়মতো দিতে পারেন না এবং পরবর্তীতে নিয়ত করে থাকেন কোরবানির সঙ্গে আকিকা দিব।

অনেকেই ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি  এই বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে থাকেন। যারা কোরবানি ও আকিকা একই সঙ্গে দেওয়া যাবে কিনা জানতে চান তারা আমাদের এই আর্টিকেলে মনোযোগ সহকারে করত থাকুন।

আরো পড়ুনঃ কোরবানির পশু জবাই করার নিয়ম

কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে অংশীদার হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই শুদ্ধ হবে। কুরবানীর পশুতি আকিকার নিয়মে ভাগ করতে পারবেন ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।

১। শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকিকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকারগোশত খেতে পারবে। (ইলাউস সুনানঃ ১৭/১২৬)

২। ফাতাওয়া শামীসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সাথে আকীকা সহীহ। (রদ্দুল মুহতারঃ ৬/৩২৬, হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুরঃ ৪/১১৬)

কোরবানির গোশত কয় ভাগে ভাগ করতে হয়

প্রতিবছরই আমরা ঈদুল আযহার সময় কুরবানি করে থাকি এবং কুরবানির গোশত বন্টন করে থাকি। যারা নিম শ্রেণীর লোক তারা ভাগে কুরবানী দিয়ে থাকেন। এবং ধনী লোকেরা একটি গোটা পশু কোরবানি করে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ভাগে কোরবানি দেওয়া যাবে কি এ বিষয়ে জানতে পেরেছি। তাহলে কোরবানির গোশত কয় ভাগে ভাগ করত  হয় সে বিষয়ে  জেনে নিন।

প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য কুরবানী দেওয়া ওয়াজিব। যার অর্থ সম্পদ সমপরিমাণ নেই তারপর আল্লাহ তায়ালা কোরবানি ওয়াজিব করেননি।কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে কোরবানির গোশত কয় ভাগ করতে হবে তার ইঙ্গিত এসেছে।মহান আল্লাহ তাআলা এ সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়ে ঘোষণা করেন 

-وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ كَذَلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ 

‘আর কাবার জন্য উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো।

এরপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আহার করাও, যে কিছু চায় না তাকে এবং যে চায় তাকেও। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ (সুরা হজঃ আয়াত ৩৬)

কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন বলে উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন ইমামগণও কুরবানির গোশতকে তিনভাগ করাকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। কোরবানির মাংস আত্মীয় ও গরীবদের মাঝে বিতরণ না করাটা খুবই গর্হিত কাজ।

অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররাই কোরবানির পশুর গোশতকে উল্লেখিত তিন ভাগে ভাগ করাকে মুস্তাহাব এবং উত্তম বলেছেন।

তিন ভাগ সমান না করলে কোরবানি হবে না; এমনটি ভাবার কারণ নেই…তবে হ্যাঁ, কেউ যদি তিন ভাগ করার ক্ষেত্রে কম-বেশি করে তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কোরবানি হবে না বা কোরবানি নষ্ট হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কিংবা চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা কোরবানি দাতার জন্য কোরবানির পশুর গোশত একেবারে পাল্লায় মেপে তিন ভাগে ভাগ করা আবশ্যক কোনো বিষয় নয়।

কোরবানির পশুর এ গোশত ভাগ না করে এমনিতেই প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-অসহায়কে দেয়া যাবে। এ জন্য ভাগ করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে কোরবানির গোস্ত তিনভাগের একটি অংশ একটি জায়গায় জমা করা হয় এবং সেখান থেকেই গরিব মিসকিন ফকির ও প্রতিবেশীকে বন্টন করা হয় কিন্তু আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছামত কোরবানির গোশত আপনার আত্মীয়-স্বজন অপরূপ মিসকীনদের বন্টন করে নিজে খেতে পারবেন।

অনেকেই থাকেন যারা কৃপণতা করেন। কষ্ট করে কোরবানি দিয়ে তিন ভাগ না করে বাবা প্রতিবেশী ও ফকির মিসকিনকে না বিলি করে নিজেই ভক্ষণ করে থাকেন। যা একটি গুনাহ ও গর্হিত কাজ।

কুরবানীর অর্থ হলো উদারতা ও মনের কৃপণতা দূর করা তাই আল্লাহ তা'আলা আমাদের কুরবানী করার আদেশ করেছেন এর মাধ্যমে আমাদের কৃপণতা দূর হবে।

আমাদের প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বন্টন করে নিজে খাওয়া আমাদের সকলকে আল্লাহতালা বোঝার ও হালাল সম্পদের কুরবানী দেওয়ার ও কোরবানির গোশত সঠিকভাবে বন্টন করার তৌফিক দান করুন (আমিন)

কোরবানির মাসায়েল

প্রতিবছর মুসলমান জাতি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা দুইটি ঈদ পালন করে থাকে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের মাধ্যমে ঈদুল ফিতর পালিত হয়ে থাকে এবং ঈদুল আযহা হয়ে থাকে একটি হালাল পশু আল্লাহর উদ্দেশ্যে জবাই করার মাধ্যমে। আজকের এই আর্টিকেলে ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি এ বিষয়ে আপনাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি। কুরবানীর বেশ কিছু মাসায়েল আছে যা আমাদের জন্য জানা জরুরী। চলুন তাহলে কোরবানির মাসয়েল সম্পর্কে কিছু জেনে নিন।

কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’{মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীসঃ ৩৫১৯, আত্তারগীব ওয়াত্তারহীবঃ ২/১৫৫}

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।

১। কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা - ১ঃ প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

২। নেসাবের মেয়াদ

মাসআলা - ২ঃ কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। {বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২}

যাকাতের জন্য এসব পরিমাণ এর সম্পদ কোনো এক বছর হওয়া লাগে কিন্তু এখানে কোরবানির জন্য তা নয় কোরবানির ৩ দিনের মধ্যে যেকোনো দিন থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে।

৩। কুরবানীর সময়

মাসআলা - ৩ঃ মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। {মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫}

কোরবানির সময় আমাদের খেয়াল রাখা উচিত মোট তিন দিন কুরবানী করা যায় তাই এই সময়গুলো পার হলে কোরবানির উত্তম হবে না তাই আমাদের সময়ের মধ্যে কোরবানি করা উত্তম।

৪। মুসাফিরের জন্য কুরবানী

মাসআলা - ৫ঃ যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। {ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫}

৫। দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম

মাসআলা - ৭ঃ দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। {বাদায়েউস সানায়েঃ ৪/১৯২}

আরো পড়ুনঃ কোন ধরনের পশু কোরবানি দেওয়া উচিত

৬। কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা - ১২ঃ উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। {কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫}

৭। কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

মাসআলা - ১৮ঃ যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি - কোরবানি দেওয়ার নিয়মঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক গণ আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কোরবানি দেওয়ার নিয়ম, ভাগে কুরবানি দেওয়া যাবে কি? ভাগে কুরবানি দেওয়ার নিয়ম কি? বেনামাজির সাথে কোরবানি দেওয়া যাবে কি? কোরবানি ও আকিকা একই সঙ্গে দেওয়া যাবে কি? কোরবানির গোশত কয় ভাগে ভাগ করতে হয়? কোরবানির মাসায়েল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইট এর নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন