জাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা

সুস্বাদু কালো বেগুনি রঙের মৌসুমী ফল জাম। এটি খেতে কে না পছন্দ করে। তাই জামের সিজনে সকলে জাম খেতে মেতে উঠে। জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি কি জানেন? আজকে এই আর্টিকেলে আমরা জাম খাওয়ার উপকারিতাও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের আমরা বিশেষ কিছু জানাবো।

জাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা

যারা জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ জাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা 

জাম খাওয়ার উপকারিতা

মৌসুমী ফল গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাম। গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এটি জুন, জুলাই বা আগস্ট মাসেও পাওয়া যায়। এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ এবং এতে অনেক ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে জাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম, কিন্তু পুষ্টিতে ভরপুর। এই ফলের বীজ, পাতা ও ছালের ঔষধি মূল্য রয়েছে এবং এটি বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাগুলোতে ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুনঃ করমচা খাওয়ার উপকারিতা

জাম খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। বিভিন্ন ওষুধে গুণে গুণান্বিত এই ফলটি। আর্টিকেলে আমরা জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাতে এসেছি।

জাম খাওয়ার উপকারিতা:-

  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
  • ডায়াবেটিক রোগীদের জটিলতা  দূর করে 
  • হার্ট সুস্থ রাখে
  • ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে
  • হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে
  • ইনফেকশন দূর করে
  • জন্ডিস ও অ্যানিমিয়া নিরাময় করে
  • রক্তে ​​শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে

ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছেএই ফলের নির্যাসে প্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য আছে, যা প্রমাণ করে যে এই ফলের নির্যাস ক্যান্সার কোষকে প্রিভেন্ট করে। এটি ফ্রি রেডিক্যালসকে নিউট্রিলাইজ করতেও ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিক রোগীদের জটিলতা  দূর করেঃ ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য এটি বেশ উপকারী, বিভিন্ন গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। জামের পাতা, ছাল এবং বীজ ডায়াবেটিস-এর জন্য সবচেয়ে উপকারি অংশ।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ জামে আছে অ্যালজিনিক অ্যাসিড (alginic acid) বা অ্যালজিট্রিন (algitrin), অ্যান্থোসিয়ানিন (anthocyanin) ও অ্যান্থোসায়ানাডিনস (anthocyanidin)-এর মতো পুষ্টিসমূহ যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং এই যৌগগুলো শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসসমৃদ্ধ যা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ রাখতে অসামান্য অবদান রাখে। এছাড়াও জমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমা এবং হাটের সুরক্ষা করে।

ইমিউনিটি বৃদ্ধি করেঃ ভিটামিন-সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সাধারণ সিজনাল ফ্লু এর বিরুদ্ধে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট আপ করে। সেই সাথে এটি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। এটি স্কিনের জন্যও দারুণ উপকারী।

হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগীদের ও বয়স্ক মানুষদের খাবার তালিকায় এই সুস্বাদু ফলটি রাখা উচিত। জাম ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম ও আয়রন হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য খুবই দরকারি উপাদান।

ইনফেকশন দূর করেঃ এতে ম্যালিক অ্যাসিড (malic acid), গ্যালিক অ্যাসিড (galic acid), অক্সালিক অ্যাসিড (oxalic acid) এবং ট্যানিনস (tannins)- এর মতো যৌগ রয়েছে। এতে একইসাথে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটড়ি প্রোপার্টিজ আছে। জাম শরীর থেকে টক্সিন এলিমেন্টস ও ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে।

জন্ডিস ও অ্যানিমিয়া নিরাময় করেঃ যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তারা এই জাম ফলটি খেতে পারেন।জামের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে আয়রন একটি। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কম, তাদের জন্য এটি দারুণ উপকারী। জামে থাকা আয়রন অ্যানিমিয়া ও জন্ডিস নিরাময় করে এবং রক্ত স্বল্পতাজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য জাম খুব ভালো কাজ করে।

রক্তে ​​শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ এতে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ-এর কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, যা স্টার্চ ও চিনিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরে শক্তির যোগান দেয়। এবং জামের বীজ ৩০% শর্করার মাত্রা কমাতে পারে।

জাম খাওয়ার অপকারিতা

জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের আমরা বিস্তারিতভাবে জাম সম্পর্কে জানাবো। জাম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে তবে এর অপকারিতা রয়েছে কিনা তা আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি নিশ্চয় জানতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ যৌন ক্ষমতা বাড়াবে যে সকল খাবার

জাম একটি গ্রীষ্মকালীন অন্যতম ফল এর রয়েছে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর করতে সাহায্য করে। জামে রয়েছে  ভিটামিন বি১ বি২ বি৩ বি৬ ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক উপকারী।

আপনার দাঁতকে মজবুত করতে সাহায্য করে। জাম, জামের পাতা, জাম গাছের ছাল, জামের বিচি, এই সকল উপকরণ দিয়ে আপনি ওষুধের কাজ করতে পারবেন। কারণ জাম খুবই কার্যকরী একটি ফল। জামের কোন অপকারিতা নেই।

জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময়

জাম আমাদের বাংলাদেশে ছাড়াও বিভিন্ন দেশে চাষাবাদ হয়ে থাকে যা আমাদের কাছে একটি খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় ফল। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করছি। জাম ফল জামের পাতা ছালে রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুন। তাই আমরা বলতে পারি জাম একটি উপকারী ফল। জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময় রয়েছে যেগুলো সময় খেলে আপনি ভালো ফল পেতে পারেন।

জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল:-

১। কোন কিছু খাবার আধা ঘন্টা বা একঘন্টা পর আপনি জাম খাবেন।

২। রাতে ঘুমানোর দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে আপনি যে কোন ফল খাবেন তাই আপনি জাম ফলটি এ সময় বুঝে খাবেন।

৩। যেকোনো ফল আপনি দুপুরে না খেয়ে সকালে বা বিকালে খাওয়ার অভ্যাস করুন অথবা রাতে শোয়ার দুই ঘন্টা আগে। ভালো ফল পাবেন।

৪। যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন তারা নিয়ম মেনে জাম খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

জামের বিচির চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম

জাম যেমন একটি উপকারী ফল, তেমনি জামের বিচিতে রয়েছে বিভিন্ন রোগের উপকারিতা। ডায়াবিটিসে জাম বিশেষ উপকারী। জামের মধ্যে থাকা একটি বিশেষ উপাদান খাবারের স্টার্চকে ভেঙে দেয়। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকে।তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে ইতিমধ্যে অনেক কিছু আলোচনা করেছি। চলুন তাহলে জামের বিচির চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু জেনে নিন।

১। জাম পরিষ্কার করে একটি পাত্রে রাখুন।

২। ফল থেকে বীজ ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য একটি কাচের জারে রেখে দিন।

৩। বীজগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন যাতে গায়ে শাঁস না লেগে থাকে। 

৪। পরিষ্কার কাপড়ে বীজগুলো ছড়িয়ে ৩ থেকে ৪ দিন রোদে শুকোতে দিন। 

৫। শুকিয়ে গেলে বাইরের খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের সবুজ অংশ বার করুন। 

৬। সবুজ অংশটি সহজেই আঙুলের চাপে ভাঙতে পারবেন। 

৭। সবগুলি ভেঙে আরও কিছুদিন রোদ্রে শুকোতে দিন। 

৮। এবার শুকনো বীজগুলো মিক্সিতে ভালো করে গুঁড়ো করে নিন। 

৯। ভালো করে গুঁড়ো করার পর চালুনিতে চেলে নিন। তারপর জামের বীজের গুঁড়ো একটি বায়ু-নিরোধক কাচের জারে রেখে দিন এবং প্রয়োজন মতো ব্যবহার করুন। 

১০। এক গ্লাস জলে এক চা-চামচ জামের বীজের গুঁড়ো মিশিয়ে রোজ সকালে খালি পেটে পান করুন।

জাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতাঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক গণ আজকের এই আর্টিকেলে জাম খাওয়ার উপকারিতা, জাম খাওয়ার অপকারিতা, জাম খাওয়ার উপযুক্ত সময়, জামের বিচির চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম অর্থাৎ জাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। জাম যেহেতু সবার কাছে পরিচিত একটি ফল তাই খাওয়ার আগে অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।

আরো পড়ুনঃ আমের বিচির ১১টি উপকারিতা ও গুনাগুন

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন