গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় - গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য যা গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় এবং গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয় সম্পর্কে। অনেক মহিলাদেরই গর্ভাবস্থায় এ সমস্যাটি হয়ে থাকেন তাই আপনাদের জন্য গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় সে সম্পর্কে জানা জরুরী এবং গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয় সম্পর্কে জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয়

তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় এবং গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় - গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকের সাদা স্রাব

অনেক মহিলাদের গর্ভ অবস্থায় সাদা স্রাবের লক্ষণটি পরিলক্ষিত। অপ্রীতিকর লক্ষণ ছাড়াই যোনি স্রাব একটি পরম আদর্শ এবং বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, "বলেছেন প্রসূতি-স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাইভা পিকাউসকাইট - প্রথম থেকে তৃতীয় ত্রৈমাসিক, তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

আরো পড়ুনঃ স্কিন ক্যান্সারের লক্ষণ - স্কিন ক্যান্সার কেন হয়

অনেক মহিলারা এ নিয়ে সংশয়িত হন এবং গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় এ নিয়েও চিন্তিত থাকেন। গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে সাদা স্রাব একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। যে লক্ষণ গুলো থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে সে লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জেনে নিন।

১। রঙ লাল বা সবুজে পরিবর্তন।

২। ক্ষরণের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য এবং তীক্ষ্ণ বৃদ্ধি।

৩। গন্ধ পরিবর্তন।

৪। জ্বালা, চুলকানি বা ব্যথা।

৫। এই কারণগুলির যে কোনও একটি হলে দূত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয়

প্রায় মহিলারাই সাদা স্রাবের সাথে পরিচিত কারণ এটি মহিলাদের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যম। কিন্তু অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয়?সাদাস্রাব মহিলারা তাদের মাসিক চক্রের মাঝখানে দেখতে পায় কিন্তু যখন গর্ভবতী হয় তখন এই সাদাস্রাব এর পরিমাণ বাড়তে থাকেডাক্তারি ভাষায় সাদাস্রাব কে লিউকোরিয়া বলা হয়।

গর্ভাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। গর্ভাবস্থায় 13 তম সপ্তাহ থেকে শুরু হতে পারে। গর্ভ অবস্থায় যত দিন বাড়তে থাকবে সাদাস্রাব এর পরিমাণ বাড়তে থাকবে। সাদাস্রাব আমাদের সার্ভিক্স কে অর্থাৎ জরায়ুর মুখ আর্দ্র ও স্বাস্থ্যকর রাখতে অতিরিক্ত সময় ধরে কাজ করে।এ টি তার একটি পার্শপ্রতিক্রিয়া।

গর্ভাবস্থায় এস্ট্রোজেন হরমোনের  বৃদ্ধি পায়।আশেপাশে সময় রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় স্রাব গন্ধযুক্ত বা হালকা গন্ধযুক্ত দুধের মত সাদা পরিস্কার হয়ে থাকে। যা গর্ভাবস্থাতেও দেখা যায়। গর্ভ অবস্থায় যে সময়গুলোতে সাদা স্রাব হয়ে থাকে সেগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১। প্রথম তিন মাস 

২। দ্বিতীয় তিন মাস

৩। তৃতীয় তিন মাস

নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

প্রথম তিন মাসঃ সাধারণত প্রথম তিন মাস অল্প সাদা স্রাব দেখা দিয়ে থাকে। কেননা এর সঙ্গে সংযুক্ত একজন মহিলা সেই বয়সন্ধিকাল থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা নাও যেতে পারে।

দ্বিতীয় তিন মাসঃ দ্বিতীয় তিন মাস গর্ভ অবস্থায় এর সাথে যুক্ত সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া সাধারণত গর্ভধারণের 13 তম সপ্তাহে এতদিন ধরে দেখা যায়।এর থেকেও বেশি পরিমাণ দেখা যেতে পারে এবং সম্ভবত প্রতি সপ্তাহে এবং দিনে দিনে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

তৃতীয় তিন মাসঃ গর্ভাবস্থায়ী তৃতীয় তিন মাসে সাদাস্রাব খুব ভারী এবং অস্তিত্বকর হয়ে উঠতে পারে। এবং প্রসব এর সময় মত  এগিয়ে আসে তত সাদা স্রাব বৃদ্ধি পায়  এবং সাথে সাথে এর পরিমান ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রতিটি মায়ের সন্তান প্রসব করার দিন যত বাড়বে ততো বেশি সাদাস্রাব এর পরিমাণ বাড়তে থাকে।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব ও চুলকানি

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় এ বিষয়ে আপনাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছি। অনেকে আছেন যারা গর্ভাবস্থায়ী সাদা স্রাব ও চুলকানি নিয়ে ভুগে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত স্বাভাবিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চল একান্ত জরুরী।

গর্ভাবস্থায় অনেকেরই যোনিদ্বারে চুলকানি হয়। গর্ভাকালীন নানান শারীরিক ও হরমোনগত পরিবর্তনের কারণে শরীরের অন্যান্য অংশের পাশাপাশি যোনিপথে চুলকানির সৃষ্টি হয়। তবে কখনো কখনো এই চুলকানি যোনিপথে ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ক্যান্সারের লক্ষণ ও প্রতিকার

১। হরমোনগত পরিবর্তন

২। ঘাম

৩। যৌনাঙ্গের চুল

৪। অতিরিক্ত সাদা স্রাব

৫। প্রসাধনীর স্পর্শকাতরতা

৬। ঔষধ

হরমোনগত পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরের হরমোনগুলো ওঠানামা করে। এতে যোনিপথের স্বাভাবিক পরিবেশে পরিবর্তন আসে। যার কারনে চুলকানির সৃষ্টি হতে পারে।

ঘামঃ গর্ভাবস্থায় যোনিপথে ঘাম হতে পারে। এই ঘাম যোনিপথ ও এর আশেপাশের ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ঘাম এবং তলে পড়া অন্তর্জাল থেকে বাতাস চলাচল না করার কারণে যোনিতে চুলকানি—এমনকি ইনফেকশন হতে পারে।

যৌনাঙ্গের চুলঃ গর্ভাবস্থায় যৌনাঙ্গের চুল বড় হয়ে গেলে তার সাথে আশেপাশের ত্বকের ঘর্ষণ হতে পারে৷বিশেষ করে আঁটসাঁট প্যান্ট বা অন্তর্বাস পরলে এমন ঘর্ষণের সম্ভাবনা বাড়ে। এখান থেকে চুলকানি হতে পারে।

অতিরিক্ত সাদা স্রাবঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেশি সাদা স্রাব স্বাভাবিক। এতে ভয় কোন কারণ নেই। এই স্রাব যোনিপথকে ইনফেকশন থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্রাবের সংস্পর্শে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হতে পারে। ফলে সেখানে চুলকানি হতে পারে।

প্রসাধনীর স্পর্শকাতরতাঃ গর্ভাবস্থায় যৌনাঙ্গ ও যোনিপথ বেশি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। একারণে কিছু ডিটারজেন্ট, সাবান ও বডি ওয়াশের সংস্পর্শে আসলে সেখানে চুলকানি হতে পারে।

ঔষধঃ অ্যান্টিহিস্টামিন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় কিছু ঔষধ আপনার যৌনাঙ্গ সুস্থ করে দিতে পারে যার ফলে যৌনাঙ্গে চুলকানি হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় যৌনিদার চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া কিছু উপায়ঃ

নরম সুতি কাপড়

চুলকানি থেকে রক্ষা সুতির পাতলা অন্তর্বাস পরলে আরাম পেতে পারেন। সুতি কাপড়ের ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরলে ভালো হয়।খুব টাইট বা আঁটসাঁট অন্তর্বাস ও পায়জামা না পরাই ভালো।

চুলকানোর বিকল্প নিয়ম

চুলকানি অসহনীয় একটি জিনিস যেটি দমিয়ে রাখা কঠিন। কিন্তু চুলকানি ওঠা স্থানে চুলকালে কয়েক মুহূর্ত আরাম লাগলেও তা চুলকানির তাড়নাকে বাড়িয়ে দেয়।  ছাড়া চুলকানোর ফলে ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত সৃষ্টি হয়। এসবের ভেতর দিয়ে জীবাণু ঢুকে ত্বকে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।

চুলকানি উঠলেও যৌনাঙ্গ ও যোনিপথ না চুলকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। চুলকানোর পরিবর্তে আঙুলের ত্বক দিয়ে চুলকানি স্থান চেপে ধরে থাকুন। কখনোই নখ দিয়ে চুলকাবে না এবং নখের আঙ্গুল ছোট রাখার চেষ্টা করবেন।

ঠাণ্ডা সেঁক

ভেজা কাপড় ও বরফ চুলকানি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এজন্য বরফ এক টুকরা মোটা সুতি কাপড়ে মুড়িয়ে যৌনাঙ্গের যে স্থানে চুলকাচ্ছে সেখানে সেঁক দিতে পারেন। এভাবে ৫–১০ মিনিট আলতো করে চেপে ধরে রাখুন। এতেও কাজ না হলে, চুলকানি না কমা পর্যন্ত এভাবে আরও কিছুক্ষণ ধরে রাখতে পারেন।

মেনথলযুক্ত ক্রিম-লোশন

যৌনাঙ্গের বাইরের অংশে মেনথল অথবা ক্যালামাইনযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো গর্ভাবস্থায় ব্যবহার করা নিরাপদ এবং চুলকানি থেকে কিছুটা আরাম দিতে পারে।

যৌনাঙ্গ ও যোনিপথের পরিচ্ছন্নতা

ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ছত্রাক সহজে বংশবৃদ্ধি করে। তাই যৌনাঙ্গ সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। যোনিপথের বাইরের অংশটুকু পানি ও সাধারণ সাবান দিয়ে ধোয়ার পরে ভালোমতো শুকিয়ে নিন।

বেকিং সোডা

বেকিং সোডা যৌনাঙ্গের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এজন্য একটা বড় গামলায় কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১–২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এবার গামলায় এমনভাবে বসুন যেন আপনার পা দুটো ফাঁকা হয়ে থাকে এবং সোডা মেশানো পানি যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে যায়। এভাবে ১০ মিনিট ধরে বসে থাকুন। দিনে দুইবার করে পর পর কয়েকদিন এটি করলে ভালো ফল পাবেন।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব একটি স্বাভাবিক ঘটনা হলো আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি, গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয় সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা জরুরী।

আরো পড়ুনঃ ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

১। গর্ভাবস্থায় কিংবা এমনি মহিলাদের যৌনিদার সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরী।

২। যৌনিতে বাতাস মুক্ত করতে হবে এবং এটি সূক্ষ্ম রাখার চেষ্টা করতে হবে। 

৩। চিনি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। 

৪। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

৫। চিকিৎসক খাবার ওষুধ বা ত্বকের উপরে লাগানোর জন্য ওষুধ দিতে পারে। 

৬। গর্ভবতী হলে সাদা স্রাব বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে হবে।

উপরোক্ত করণীয় গুলো মানলে গর্ভাবস্থায় আপনার শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং সাদা স্রাবের কারণে যৌনিদার ইনফেকশন এবং ক্ষতি সংশয় থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয় - গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকেরে আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব কেন হয়? গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব হলে করণীয়, সাদা স্রাব হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url