ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন ক্যান্সার এর কিছু উপসর্গ বা লক্ষণ রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব । আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব  ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে।

এছাড়াও আলোচনা করব ক্যান্সার কি? ক্যান্সারের কারণ, ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ, ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে, ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা, ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে, কি কি ক্যান্সার এর লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

ক্যান্সার কি?

পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে তৈরি। মানুষ সহ অন্যান্য যত প্রাণী আছে তাদের দেহের বৃদ্ধি হয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। এই কোষ গুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায় আবার নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। মোটকথা পুরনো কোষের জায়গায় নতুন কোষ জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষ গুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে ও নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম নেয়।

কিন্তু যখন কোষ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখন ত্বকের নিচে মাংসের দলা বা চাকা দেখা যায়। এটাকে সাধারণত টিউমার বলা হয়। অনেকক্ষেত্রে টিউমার তেমন কোনো ক্ষতি করে না কেবল ফুলে থাকে এটি "বেনাইন টিউমার" নামে পরিচিত। একই সাথে কিছু ক্ষতিকর টিউমার রয়েছে এই ক্ষতিকর টিউমার গুলো "ম্যালিগন্যান্ট টিউমার" বা ক্যান্সার নামে পরিচিত। মোটকথা ক্ষতিকর টিউমার গুলো থেকে ক্যান্সার এর সৃষ্টি।

ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলো কি কি?

একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের শরীরে ক্যান্সার দেখা দিলে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আমরা এখন দেখে নিব ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলো কি কি?

দ্রুত ওজন কমে যাওয়াঃ ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে দ্রুত ওজন কমে যাওয়া হল একটি। যদি কোন ব্যক্তির কোন কারন ছাড়াই হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে ওজন কমতে থাকে তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়। এটি ক্যান্সার এর অন্যতম একটি উপসর্গ।

শরীরে দীর্ঘদিনের ব্যথাঃ কোন ব্যক্তি যদি দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের কোন অংশে ব্যথা অনুভব করেন কোন ঔষধ খাওয়ার পরেও কাজ করছে না তাহলে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। ধরুন আপনার মাথাব্যথা হচ্ছে এটি মাথায় টিউমার এর ফলে ও হতে পারে আবার অন্য কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। আবার অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ঘাড়ের ব্যথায় ভুগে থাকেন। ব্লাড ক্যান্সার এর এটি একটি অন্যতম লক্ষণ।

অস্বাভাবিক মাংসপিণ্ডঃ আমাদের শরীরে কোন ধরনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা মাংস জমাট হলে এটি টিউমার এর একটি লক্ষণ। আর এই টিউমার থেকে ক্যান্সার ছড়াতে পারে। তাই শরীরের কোন ধরনের টিউমার দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঘন ঘন জ্বরঃ জ্বর যেকোনো ব্যক্তির হতে পারে। সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তন বা যে কোন কারনে জ্বর হতে পারে। কিন্তু আপনার শরীরে যদি দীর্ঘদিন ধরে জ্বর থাকে। আবার ঘন ঘন জ্বর হয় তাহলে এটি ক্যান্সারের একটি লক্ষণ। ব্লাডক্যান্সারে সাধারণত ঘন ঘন জ্বর হয়।

খাবারে রুচি হারিয়ে যাওয়াঃ নিয়মিত বদ হজম বা পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। এটি গলার ক্যান্সার এর একটি লক্ষণ। আবার শরীরে ক্যান্সার দেখা দিলে খাবারে রুচি হারিয়ে যাই।

ত্বকে পরিবর্তনঃ ত্বকে অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা চাকা চাকা জাতীয় কিছু দেখা দিলে এটি  ক্যান্সার এর একটি লক্ষণ আবার ত্বকে অতিরিক্ত তিল বা আঁচিলে দেখা দিলে এটি ক্যান্সার এর একটি লক্ষণ। যদি আঁচিলের রঙ, আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দীর্ঘস্থায়ী কাশিঃ দীর্ঘদিন ধরে কাশি দেখা দিলে এটি ফুসফুস ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। আপনার যদি দীর্ঘদিন ধরে কাশি হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কারণ দীর্ঘদিন ধরে কাশি কোনো ভালো লক্ষণ নয়। 

অকারণে রক্তক্ষরণঃ কোন ব্যক্তির যদি কাশির সময় যদি রক্তক্ষরণ হয় তাহলে এটি ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারি। এটি সাধারণত ফুসফুস ক্যান্সারের একটি লক্ষণ।

মল-মূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তনঃযদি ঘন ঘন মল-মূত্রের বেগ অনুভব হয় তাহলে ক্যান্সার নিয়ে ভাবনার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ঘন ঘন ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ। মূত্রত্যাগের সময় অন্ত্রে ব্যথা বা রক্তক্ষরণ মূত্রথলির ক্যান্সারের উপসর্গ।

আরো পড়ুনঃ টিউমার ভালো করার ৯ টি উপায় জেনে নিন।

দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিঃ আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিবোধ করেন বা অবসাদে ভোগেন, তবে সেটা অনেক রোগের কারণই হতে পারে এবং ক্যান্সারের কারণেও হতে পারে। মলাশয়ের ক্যান্সার (colon cancer) বা রক্তে ক্যান্সার (blood cancer) হলে সাধারণত এমন লক্ষণ দেখা যায়।

অন্যান্য লক্ষণঃ  উপরিউক্ত লক্ষণগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর শরীরে। তার মধ্যে রয়েছে- পা ফুলে যাওয়া, শরীরের আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হওয়া ইত্যাদি।

ক্যান্সারের কারণ 

একজন মানুষের শরীর বিভিন্ন ভাবে ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে। আমরা এখন ক্যান্সারের কারণ গুলো দেখে নিব।

  • ক্যান্সারের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্থূলতা বা ওজন বেশি হওয়া। ওজন বেশি হলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়। সেখান থেকেই ক্যান্সার উৎপন্ন হয়।
  • নেশাজাতীয় দ্রব্য যেমনঃ মদ্যপান, সিগারেট খাওয়া, জর্দা, পান, গুল ইত্যাদি খাওয়া ক্যান্সারের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
  • বাইরের ফাস্ট ফুড , অস্বাস্থ্যকর খাবার , তেলে ভাজা খাবার ইত্যাদি ক্যান্সারের কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
  • অনেক সময়ই বংশানুক্রমে ক্যান্সার হতে পারে।

ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ

যেকোনো ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। আমরা এখন দেখব ক্যান্সার রোগীর মৃত লক্ষণ গুলো।

উদাসীনতাঃ ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হলো উদাসীনতা। রোগী যেকোনো সংবাদ,বিনোদন,খেলাধুলা সব কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কারো সাথে কথা বলতে চাই না খুব বিরক্তি বোধ করে। যেসব কাজ করে রোগী আনন্দ পেত সেগুলো তে আর আগ্রহ পায় না মোটকথা রোগী উদাসীন হয়ে যায়।

ক্ষুধামন্দ ভাবঃ বেশিরভাগ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ক্ষুধা লাগে না। খাওয়া-দাওয়া তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কিছু খেতে চাই না। পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা হারিয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষুধা হারিয়ে যেতে থাকে।

ক্লান্তি ও দুর্বলতাঃ মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি। কোন কিছু করতে আগ্রহ পাই না।

ঘুমের আকাঙ্ক্ষাঃ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সব সময় শুধু ঘুমাতে চাই। দিনের বেশিরভাগ সময় বিছানায় কাটাই।

আরো পড়ুনঃ শিশুর জ্বর কমানোর কার্যকরী উপায়গুলো জেনে নিন।

খাবার খেতে সমস্যাঃ খাদ্যনালীর ক্যান্সারের আক্রান্ত একজন রোগী মৃত্যুর বেশ কিছুদিন আগে থেকে খাবার গিলতে পারে না। খাদ্য নালীতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ায় খাদ্যনালী বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে রোগীর খাবার খেতে চাইলেও খেতে পারে না।

চামড়া কুচকে যাওয়াঃ মৃত্যুর আগে মুহুর্তে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর চামড়া কুঁচকে যায়।  যেহেতু একজন ক্যান্সার রোগী ভালোমতো খাবার খেতে পারে না আবার এত বড় অসুখ তার শরীরে রয়েছে তাই চামড়া কুঁচকে যায়। এটিও ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি।

ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে?

মানুষ সহ অন্যান্য যত প্রাণী আছে তাদের দেহের বৃদ্ধি হয় কোষ বিভাজনের মাধ্যমে। এই কোষ গুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায় আবার নতুন কোষের সৃষ্টি হয়। এভাবেই মানুষের দেহের বৃদ্ধি হয়।কিন্তু যখন কোষ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখন ত্বকের নিচে মাংসের দলা বা চাকা দেখা যায়। এটাকে সাধারণত টিউমার বলা হয়। আর ক্ষতিকর টিউমার থেকে ক্যান্সার রোগের সৃষ্টি হয়।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে? আমাদের সমাজে অনেকেই জানেন না ক্যান্সার ছোঁয়াচে কি না।ক্যান্সার কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। সাধারণত যখন কোষ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে সেখান থেকে ক্যান্সার এর সৃষ্টি হয়।

অনেকেই মনে করেন ক্যান্সার ছোঁয়াচে বিশেষ করে যৌনাঙ্গে ক্যান্সার এই ধরনের ধারণা রয়েছে। তবে এই ধারণাটি ভুল ক্যান্সার কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়।

আবার আমাদের সমাজে আরো যে সকল অন্যান্য ধরনের ক্যান্সার রয়েছে সে গুলোকে ছোঁয়াচে মনে করে রোগীকে আমাদের সমাজে খারাপ চোখে দেখা হয়। এর ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী হীনমন্যতায় ভোগেন। কিন্তু আমরা যদি রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করে তাকে সাহস দেই তাহলে একজন রোগী মানসিক ভাবে প্রশান্তি লাভ করে।

ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা

একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী সাধারণত শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর খাবারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আমরা এখন দেখে নেব ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা গুলো।

  • একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর কেমোথেরাপি দেওয়ার সময় হজমের সমস্যা দেখা যায়। এজন্য ক্যান্সার রোগীর নরম ভাত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে একই সাথে হালকা তেল-মসলা দিয়ে তরকারি খেতে দিতে হবে।
  • ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা তে সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। ক্যান্সার আক্রান্ত হলে শরীরে ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন , হিমোগ্লোবিন কমে যায় তাই এই ধরনের খাবার খেতে দিতে হবে।
  • একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আঙ্গুর ফল ও কিউই খেতে পারে।
  • ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা তে প্রতিদিন একটি করে রসুন রাখতে পারেন। রসুন একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সেইসঙ্গে থাকে আর্জিনাইন, অলিগোস্যাচারাইডস, ফ্ল্যাভোনয়েডস ও সেলেনিয়াম। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপযোগী। গবেষণা রিপোর্ট বলছে, যদি কেউ প্রতিদিন রসুন খান, তাহলে তাঁর পাকস্থলী, কোলন, অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়।
  • ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে স্যুপ খেতে দেয়া যেতে পারে। টমেটো স্যুপে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তা ক্যান্সার প্রিভেন্ট করতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে ?

অনেকেই মনে করেন ক্যান্সার মরণব্যাধি রোগ। ক্যান্সার হলে মানুষ মারা যায়। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক উন্নত হওয়ায় ক্যান্সার সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব।কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে ?

একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী কতদিন বাঁচবে তা নির্ভর করে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর।হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। ডাক্তার রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। চিকিৎসা করে দেখা গেছে অনেক রোগী ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে। ক্যান্সারের ধরন, ক্যান্সার হবার স্থান, প্যাথলজিক্যাল গ্রেড, ক্লিনিক্যাল স্ট্যেজ, চিকিৎসার ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে বলা যায় রোগীর পরিনতি কি হতে পারে। তবে কত দিন বাঁচবে এমন কথা কোন ডাক্তার বলেন না।

ক্যান্সার হলো শরীরের একটি পরগাছার মতো। শরীরের একটি স্বাভাবিক কোষ কোন কারনে কোনভাবে পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সার কোষে রুপান্তর হয়। তারপর এগুলোর একটা থেকে দুইভাগ হয়ে দুইটা, চারটা, ষোলটা, চৌষট্টিটা, এইভাবে অসংখ্য কোষ তৈরি হয়ে টিউমার আকার ধারন করে। যে কারণে স্বাভাবিক কোষ ক্যান্সার কোষে রুপান্তর হয় সেই কোষটি উঠিয়ে নিলেও ক্যান্সার কোষ তার নিজস্ব ক্ষমতা বলে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঔষধ প্রয়োগ করে ক্যান্সার সেল মেরে ফেলা যায়। সাথে স্বাভাবিক কোষেরও মৃত্যু হতে পারে। 

ক্যান্সার কোষ বিভিন্ন পথে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে বাসা বাঁধতে থাকে। শরীরের পুষ্টিতে ভাগ বসায়। তাই, রোগী রুগ্ন  হতে থাকে। ক্যান্সার স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী রক্ত শুন্য হয়ে পড়ে। ক্যান্সার কোষ থেকে সাইটোকাইন নিঃসৃত হয়ে রোগীর ক্ষুধামান্দ ও সাভাবিক কোষের ক্ষতি করতে থাকে। রোগী শুকিয়ে যায়। মুখে ও খাদ্যনালীতে ক্যান্সার হলে  খাদ্য গিলতে না পেরে অনাহারে রোগী মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পায়ু পথে ক্যান্সার হলে পায়খানা বন্ধ হয়ে রোগী মারা যায়। 

ক্যান্সার মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে । ক্যান্সার ছড়াছড়ির উপর নির্ভর করে চিকিৎসক গণ চারটি স্টেজে ভাগ করেন ১ থেকে ৪ পর্যন্ত। স্টেজ নাম্বার যতো বেশি হবে রোগীর পরিনতি ততো খারাপ হবে। কিছু কিছু ইনভেসিভ ক্যান্সার আছে সেগুলো মেটাস্টেসিস না হয়ে আশেপাশের টিস্যুতে সীমাবদ্ধ থাকে। এগুলোকে লোকালি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা দেখে নিন।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন প্রথম স্টেজে যদি কোন রোগীর ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং সঠিক চিকিৎসা দেয়া হয় তাহলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু চতুর্থ স্টেজে চলে গেলে চিকিৎসা করেও রোগীকে বাঁচানো অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠেনা।

ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে? এমন প্রশ্নের উত্তর দেয়া মুশকিল। তবে প্রথমদিকে ক্যান্সার ধরা পড়লে ক্যান্সারের চিকিৎসা করা সম্ভব এবং রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। সাধারণত ক্যান্সার হওয়ার ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

আমরা উপরে আলোচনা করেছি ক্যান্সারের লক্ষণগুলো। এখন আমরা দেখে নেবো ক্যান্সারের প্রতিকার।

  • স্থূলতা বা ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। এজন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  • অতিরিক্ত গরম পানি পান করা যাবে না এতে খাদ্যনালীর ক্ষতি হতে পারে এখান থেকে খাদ্যনালীর ক্যান্সার হতে পারে।
  • যে কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলতে হবে। নেশাজাতীয় দ্রব্য ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম কারণ
  • বাইরের ফাস্টফুড অস্বাস্থ্যকর তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এতে করে শরীর সুস্থ থাকবে।
  • বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধী।
  • বয়স ৪০ থেকে ৪৫ এর উপরে হলে নিয়মিত চিকিৎসার উপর থাকতে হবে।

শেষ কথাঃ | ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার

ক্যান্সার একটি মরণব্যাধি রোগ হলেও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটি ভালো করা সম্ভব। আজকের এই পোস্টে ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার সহ আরো বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছি আপনাদের সাথে যেন ক্যান্সার রোগ নিয়ে পুরো ধারণা পেয়ে যান। এই পোস্টে আরো আলোচনা করেছি ক্যান্সারের কারণ, ক্যান্সার রোগীর মৃত্যুর লক্ষণ, ক্যান্সার কি ছোঁয়াচে, ক্যান্সার রোগীর খাবার তালিকা, ক্যান্সার হলে কতদিন বাঁচে, কি কি ক্যান্সার এর লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলো।

পোষ্ট টি আপনার উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে যেন তারাও এই পোস্ট টি পড়ে ক্যান্সার এর লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো জানতে পারে খুব সহজেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন