সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়

রমজান একটি পবিত্র মাস। আর এই মাসের আমল গুলো আল্লাহ তায়ালার কাছে বিশেষ মর্যাদাবান। রমজানের রোজা রাখার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেহরি তাই সেহরি ছাড়া কখনোই রোজা রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা অনেকেই সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়? এই বিষয়টি সম্পর্কে জানিনা। আজকের এই আর্টিকেলে সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়

আপনি যদি সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। তাহলে চলুন দেরি না করে সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়? বিষয়টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়

সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়

রোজা পালনের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত ও অধিক পুণ্যের কাজ। ক্ষুধা না থাকলেও রমজান মাসে শেষ রাতে যে খাবার রোজা করার উদ্দেশ্যে খাওয়া হয়, তা-ই সেহরি। আপনি যদি শেষ রাতের দিকে খাবার নাও খেতে পারেন তবে সামান্য একটু পানি পান করাকেও সেহরি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেহরি খাওয়ার মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতের ওপর আমল করা হয়।

আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালে রোজার ক্যালেন্ডার

সেহরি খাওয়ার মধ্যে অফুরন্ত রহমত, বরকত, নিয়ামত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত নিহিত রয়েছে।’ (বুখারি ও মুসলিম)আজকের এই আর্টিকেলে আমরা সেহেরী খাওয়ার আগে কি আমল করতে হয় সে সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চলেছি।

সেহরির আগে অনেক আমল রয়েছে। অনেক নফল ইবাদত আল্লাহ তালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য আদায় করতে পারেন। আপনি চাইলে তাহাজ্জুদ এবং নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। এবং তাসবিহ তাহলিল গুলো পাঠ করতে পারেন। সেহরির সময় আরামের ঘুম পরিহার করে জাগ্রত হওয়া আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ ও ইবাদত।

এতে শেষ রাতে ওঠার অভ্যাস হয়। কেননা শেষ রাতে আল্লাহর রহমত অবিরাম ধারায় বর্ষিত হতে থাকে। এ সময় আল্লাহ প্রেমিকেরা সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনোবাক্যে মোনাজাত, নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে লিপ্ত থাকেন। এ সময়টি আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভের সর্বোত্তম সময়।এবং সেহরি খাওয়া শেষ করে এ নিয়তি করবেন।

রোজার নিয়ত-

نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم

(নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।)

অর্থঃ হে আল্লাহ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরয করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ হতে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী। তবে কেউ আরবিতে উচ্চারণ করতে না পারলে বাংলায় মনে মনে উপরোক্ত দোয়ার অর্থটি পাঠ করতে পারেন।

সেহরি করার ফজিলত

রোজার সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম অংশ হল সেহরি আর সেহরি শব্দের অর্থ হলো শেষ রাতের খাবার।ইসলামি পরিভাষায় রোজা বা সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ভোররাতে সুবহে সাদিকের আগে যে খাবার গ্রহণ করা হয়, তাই সেহেরি। আজকেরে আর্টিকেলে আমরা সেহেরির আগে কি আমল করতে হয় এ বিষয়ে আমাদের আপনাদের ইতিমধ্যেই জানিয়েছি। সেহেরির অনেক ফজিলত রয়েছে। চলুন তাহলে সেহেরি করার ফজিলত গুলো কি তা জেনে নিই।

সাহ্‌রি একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ সুন্নাত। তাকওয়া অর্জন এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম। নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা সাহ্‌রি খাও, কেননা সাহ্‌রিতে রয়েছে বরকত।’ (বুখারি, হাদিস: ১৮০১)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আমাদের রোজা আর আহলে কিতাবদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহ্‌রি খাওয়া আর না খাওয়া।’ (মুসলিম, আলফিয়াতুল হাদিস, পৃষ্ঠা: ১৩১)।

আরো পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

যেসব মুসলমান শেষ রাতে আল্লাহ পাকের হুকুম মেনে সেহরি খেতে বসে, আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তাদের জন্য বিশেষ রহমত অবতীর্ণ করেন এবং মহান আল্লাহর ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ দোয়া করতে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ)

ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে হজরত রাসুল (স) বলেন, কেউ যদি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, আল্লাহতায়ালা তার গুনাহ মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। ইফতারি প্রদানকারী একটি রোজার সওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর সওয়াব সামান্য কমানো হবে না।বায়হাকি, মেশকাত : ১৭৪)।

সেহরি খাওয়ার সঠিক সময়

রমজান মাসে অনেকেই আল্লাহ তাআলার ইবাদত বন্দেগী করতে এবং তারাবি নামাজ আদায় করতে অনেক দেরি করে ফেলে এবং অনেকেই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। যার কারণে শেষ রাতে আর সেহরি খেতে ওঠেন না। এটি করলে কখনও সেহেরির নিয়ম সঠিক হবে না।

আজকের আর্টিকেলে আমরা সেহেরির আগে কি আমল করতে হয় এ বিষয়ে ইতিমধ্যে অনেক কিছু আলোচনা করেছি। সেহরি খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে অনেকেই জানেন না, তাই অনেকেই প্রথম রাতের দিকে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। 

সেহরি খাওয়ার সময়-

বর্তমানে সেহেরির শেষ সময় হচ্ছে প্রায় রাত ৩টা ৪০ বা ৪২ এর কাছাকাছি সময়ে। অনেকেই আছেন যারা রাত বারোটার সময় সেহরি হিসেবে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। যা কখনোই সেহেরি খাওয়ার নিয়ম নয়। এটা করলে আপনার শরীর অনেকটাই সারাদিন রোজা রেখে ক্লান্ত এবং অসুস্থ হয়ে পড়বেন। সেহরি খাওয়ার সঠিক সময় শুরু হয় মধ্যরাত থেকে। আর শেষ হয় ফজরের আগে।

যদি কেউ মধ্যরাতের আগে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে, তবে তাকে সাহরি গ্রহণের জন্য শেষ রাতে ওঠতে হবে। আর মধ্যরাতের পরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সাহরি খাওয়ার বরকত ও হুকুম আদায় হয়ে যাবে।

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সাহরি খাওয়া ও ফজরের আজান হওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান কতটুকু? উত্তরে যায়েদ বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ’৫০ অথবা ৬০ আয়াত পড়তে যতক্ষণ সময় লাগে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)

আরো পড়ুনঃ ইফতারের আগে কি আমল করতে হয়

৫০/৬০ আয়াত বলতে মধ্যম ধরনের আয়াত বোঝানো হয়েছে । যা তেলাওয়াতে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগবে। সে আলোকে ফজরের আজানের ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে সাহরি খাওয়া। অতএব সাহরি খাওয়ার সুন্নাত ও সঠিক সময় হলো ফজরের ১৫/২০ মিনিট আগে সাহরি খাওয়া।

সেহেরির আগে কি আমল করতে হয় ভিডিও

প্রিয় বন্ধুরা উপরে আলোচনায় আমরা সেহেরী সম্পর্কে অনেকগুলো তথ্য জেনেছি। রোজা করার জন্য সেহরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি করার অনেক ফজিলত রয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ সেহরি করেছেন এবং আমাদেরকে সেহরি করা সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছেন। এখন আমরা সেহেরির আগে কি আমল করতে হয় ভিডিও সম্পর্কে আলোচনা করব। সেহেরির আগে কি আমল করতে হয় ভিডিও উল্লেখ করা হলো।

সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়ঃ শেষ কথা

সেহেরির আগে কি আমল করতে হয়? সেহরি খাওয়ার সঠিক সময়, সেহরি করার ফজিলত, সেহেরির আগে কি আমল করতে হয় ভিডিও সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url