থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ - থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

প্রিয় বন্ধুরা আপনি নিশ্চয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোষ্টটি ওপেন করেছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন কারণ আজকের এই পোস্টে আমরা থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। আমাদের দেশে অনেকেই থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগে থাকেন এবং থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না।

থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ

আজকের এই পোস্টে আমরা থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে জানাবো। তাহলে চলুন আর দেরি না করে থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ - থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ

আমরা অনেকেই আছি যারা থ্যালাসেমিয়া রোগটি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানিনা। এবং খুব কম মানুষ আছেন যারা থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানেন কিন্তু এ রোগটি হওয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না। তাই আজকের এই পোস্টটিতে আমরা থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো।

আরো পড়ুনঃ নিউমোনিয়া রোগের কারণ ও তার প্রতিকার

থ্যালাসেমিয়া হলো রক্তে এক ধরনের অসুস্থতা। যা আমাদের বংশীয় রক্তের মাধ্যমে এর একটি ছড়িয়ে থাকে। আমাদের শরীর যখন থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয় তখন স্বাস্থ্যকর লাল রক্ত কণিকা উৎপন্ন করে এবংআপনার শরীরের স্বাভাবিকের চেয়ে কম পরিমাণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সক্ষম হয়।

হিমোগ্লোবিন হল লাল লোহিত কনিকায় নিহিত এক ধরনের প্রোটিন যা অক্সিজেন বহন করে থাকে। হিমোগ্লবিন লাল লোহিত কনিকার খুব প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। প্রত্যেক মানুষের নরমাল, থ্যালাসেমিয়া মেজর, অথবা থ্যালাসেমিয়া মাইনর হয়ে থাকেন।

বাবা এবং মা উভয়ের থ্যালাসেমিয়া জিন থাকলে ভূমিষ্ট শিশুর শতকরা ২৫ ভাগ থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। থ্যালাসেমিয়া তখনই হয় যখন এই ২টি প্রোটিন উৎপন্নে সাহায্যকারী জিনে কোন ত্রুটি দেখা দেয়। বাবা-মা যেকোনো ১ জনের কাছ থেকে ত্রুটিপূর্ণ জিন গ্রহন করে। থ্যালাসেমিয়া মাইনর, থ্যালাসেমিয়া মেজর থেকে অনেকটা নিরাপদ।

থ্যালাসেমিয়া প্রধানত ২ ধরনের হতে পারেহিমোগ্লোবিন ২ ধরনের প্রোটিন দ্বারা তৈরি আলফা গ্লোবিন ও বিটা গ্লোবিন।

১. আলফা থ্যালাসেমিয়া  দেখা দেয় যখন আলফা গ্লোবিন প্রোটিনের সাথে সম্পর্কিত জিন পরিবর্তিত থাকে বা অনুপস্থিত থাকে।

২. জিনগুলো যখন ত্রুটিপূর্ণ বেটা গ্লোবিন প্রোটিন উৎপন্নে বাঁধা দেয় তখন বেটা থ্যালাসেমিয়া হয়।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ

দেশে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু-কিশোর রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৭ থেকে ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। অনেকে আছেন যারা এ রোগের লক্ষণ সম্পর্কে জানেন না তাই আজকের এই পোস্টে আমরা থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিতভাবে কিছু তথ্য তুলে ধরব তাহলে চলুন থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ গুলো কি তা জেনে নিন।

থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণঃ

১। চোখের রঙ হলদে হয়ে যাওয়া।

২। খাওয়াতে অরুচি দেখা দেয়।

৩। চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

৪। মুখের হার অস্বাভাবিক দেখা

৫। শরীরে দুর্বলতা অনুভব করা

৬। অল্পতেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়া

৭। ইউরিনের এর রং গাড় হয়ে যাওয়া

৮। লিভার বড় হয়ে যায় ঠিকমতো শরীরের বৃদ্ধি হয় না

৯। শরীর ঠিকমত বৃদ্ধি হয় না

১০। পেটে পিড়া দেখা দেয়

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের খাবার

যারা থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছেন তারা নিশ্চয়ই থ্যালাসেমিয়া রোগের খাবার সম্পর্কে সচেতন হতে চান তাই আজকের এই পোস্টে আমরা থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। তাহলে চলুন থ্যালাসেমিয়া রোগীদের খাবার সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ যক্ষা রোগের কারণ ও তার প্রতিকার

থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য আয়রন খাবার গুলো কম খেতে দেওয়া উচিত আর যদি আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে নিয়ম করে আয়রন যুক্ত খাবার খেতে দিতে হবে এবং ওষুধও খাওয়াতে পারেন। এবং অতিরিক্ত লৌহজাতীয় খাবার থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পরিহার করা উচিত।

মাছ মাংস

থ্যালাসেমিয়া রোগের জন্য সব ধরনের মাছ ও মাংস খাওয়া ঠিক নয়। কারণ অনেক মাংস ও মাছে অতিরিক্ত লৌহ থাকে যা থ্যালাসেমিয়া রোগীর ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। যেমন গরুর মাংস, খাসির মাংস, কলিজা, ইলিশ মাছ, কই মাছ, চিংড়ি মাছ বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছের শুটকি ভর্তা শিং মাছ টেংরা মাছ ডিমের কুসুম এ সমস্ত খাবার গুলোতে গ্রহের পরিমাণ থাকে অধিক যার কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীর এগুলো পরিহার করা উচিত।মুরগীর মাংস, রুই, কাতলা, পাংগাস, বোয়াল, মাগুর, সরপুঁটি, পুঁটি এই মাছ মাংস গুলো খেতে পারেন।

শাকসবজি 

মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঢেড়স, কাঁচা কলা, ঝিংগা, পাকা টমেটো, লাউ, চাল কুমড়া থ্যালাসেমিয়া রোগীদের এই ধরনের শাকসবজি গুলো খেতে হবে।শাকসবজিতে অতিরিক্ত লৌহ থাকে যা থ্যালাসেমিয়া রোগী খেতে পারবে না। যেমন কচু শাক পালং শাক লাল শাক ফুলকপি শাক ফুলকপি পুঁইশাক কাঁচা টমেটো পুদিনা পাতা ধনেপাতা কাকরোল কাঁচা পেঁপে সাজনা ইত্যাদি শাকসবজি গুলোতে অতিরিক্ত লৌহ থাকে যার কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের এ সমস্ত শাকসবজি এড়িয়ে চলাই উত্তম।

ফল  

পাকা আম, লিচু, পেয়ারা, কলা, পাকা পেঁপে, কমলা লেবু, আপেল, আঙ্গুর,আতা, আমলকি, লেবু থ্যালাসেমিয়া রোগ হলে আপনার এই ফর্মুলগুলো খেলে অনেক পাবেন।এগুলোতে লৌহ কম থাকে যার কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগী এ সমস্ত ফল খেতে পারে তবে অতিরিক্ত লৌহ আছে এমন ফলগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন আনারস বেদেনা শরিফা খেজুর তরমুজ।

খাদ্যশস্যজাত

চাল, ময়দা, পাউরুটি, মসুর ডাল, মধু, দুগ্ধজাত খাবার (দই, ছানা, পনির, রসগোল্লা) ইত্যাদি।দুগ্ধজাত খাবারের পরিমাণ কম থাকে বলে থ্যালাসেমিয়ার রোগী এসব মিষ্টি ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারবে।এসব খাদ্যশস্য থেকে তৈরি খাবারে লৌহ কম থাকে। এছাড়াও অন্যান্য ডালে থেকে মসুর ডালে লৌহের পরিমাণ কম থাকে যার কারনে থ্যালাসেমিয়া রোগীর খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো রাখা যেতেই পারে।

থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার

প্রতিবছর ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস পালিত হয়।থ্যালাসেমিয়া মূলত একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এ রোগের প্রতিকার ও সচেতন হওয়া আমাদের সকলেরই জরুরী। তাই আজকের এই পোস্টে থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে আপনাদের কাছে বিস্তারিত কিছু তথ্য তুলে ধরেছি। তাহলে চলুন থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ।থ্যালাসেমিয়ার অনেক প্রকারভেদ আছে। যেমন বিটা থ্যালাসেমিয়া, আলফা থ্যালাসেমিয়া, এস বিটা থ্যালাসেমিয়া, হিমোগ্লোবিন এস ডিজিজ, হিমোগ্লোবিন ডি পাঞ্জাব, হিমোগ্লোবিন ডি আরব, ই বিটা থ্যালাসেমিয়া, হিমোগ্লোবিন ই ডিজিজ,ইত্যাদি।থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী এক নয়।

আরো পড়ুনঃ কান পাকলে করণীয় ও চিকিৎসা

বাহকের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না, তেমন কোনো চিকিৎসাও লাগে না। তবে একজন থ্যালাসেমিয়ার রোগী পরবর্তী প্রজন্মে রোগ বহন করতে পারেন। তাই এ রোগের বাহকদের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিহত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন থ্যালাসেমিক শিশুর জন্ম হ্রাস করা যায়।

স্বামী ও স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক বা যাদের এক বা একাধিক থ্যালাসেমিক শিশু আছে তারা গর্ভস্থ ভ্রুণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালাসেমিক শিশু নির্ণয় এবং তা পরিহার (গর্ভপাত) করতে পারেন।

থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ - থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণঃ শেষ কথা

থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ, থ্যালাসেমিয়া রোগের লক্ষণ, থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url