থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ

শুক্রবার আসরের পরের আমল ৩১শে ডিসেম্বর থার্টি ফাস্ট নাইট হিসেবে বিশ্বের সবার কাছে পরিচিত কিন্তু এই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে ইসলাম আমাদের কি বলে? এ বিষয়ে আমরা কতটুকু জানি এবং মানি। নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে এবং পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে পালিত হয়ে থাকে ৩১শে ডিসেম্বর বা থার্টি ফার্স্ট নাইট। এ দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত আনন্দের সাথে উদযাপিত হয়ে থাকে কিন্তু ইসলামে এটি উদযাপন করা জায়েজ কিনা? বিষয়টি জানতে হবে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের আমরা থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করব। থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়তে থাকুন।

সূচিপত্রঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

পোস্ট ভূমিকা

থার্টি ফাস্ট নাইট সম্পর্কে অনেকে আমরা জানতে চাই, কারণ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে থার্টিফার্স্ট নাইট অনেক আনন্দ উদযাপনের সাথে পালিত হয়ে থাকে কিন্তু এই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে আমরা অনেকেই সঠিক ভাবে জানিনা। আসলে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা ইসলামে কখনোই জায়েজ নয়। এটি একটি ঘৃণিত ও অবৈধ কাজ।

কিন্তু অনেকেই এই থার্টি ফাস্ট নাইট কে ঘিরে বিভিন্ন আনন্দ উল্লাস করে থাকেন। এটি একটি খ্রিষ্টানীয় ধর্মীয় উৎসব। খ্রিস্টানরা ৩১শে ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট বারোটা এক মিনিটে এ উৎসবটি পালন করে থাকেন এবং একে ঘিরে বিভিন্ন রকমের জঘন্যতম কাজ অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব

থার্টি ফাস্ট লাইন নাইট পালন করে থাকে খ্রিস্টান দ্বিজাতীয়রা কিন্তু এখন বর্তমানে সময়ে মুসলমানরাও অধিকাংশ এই থার্টি ফাস্ট নাইট অনেক উদযাপনের সাথে পালিত করে আসছেন। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের আমরা থার্টিফার্স্ট নাইট কাকে বলা হয়?

থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎপত্তি, থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ, থার্টিফার্স্ট  নাইট সংক্রান্ত হাদিস, থার্টি ফাস্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে এই সম্পর্কে যাবতীয় বিষয় গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। এ সকল বিষয়গুলো জানতে হলে মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন।

থার্টি ফার্স্ট নাইট কাকে বলা হয়

যে থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে এত নাচানাচি এবং সারা বিশ্বে এটি অনেক আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে উদযাপিত হয়ে থাকে সেই থার্টি ফাস্ট নাইট কাকে বলা হয় সে বিষয়ে আপনাদের জানাবো। নতুন বছরের শুরু এবং পুরনো বছরের শেষ ৩১ শে ডিসেম্বর ১২ঃ০১ মিনিটে থার্টিফার্স্ট নাইট পালিত হয়ে থাকে। এটি একটি খ্রিস্টানীয় ধর্মীয় উৎসব যা খ্রিস্টান বিজাতীরা অনেক আনন্দ উদযাপনের সাথে পালন করে থাকে।

আর এটি সারাবিশ্বে থার্টিফার্স্ট নাইট হিসেবে এ রাত্রি আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। এই থার্টি ফার্স্ট নাইট কে ঘিরে অনেক খারাপ কুকর্ম ও সামাজিক শিষ্টাচার লংঘন করে থাকে। অনেকে নেশা গান বাদ্যযন্ত্র নিয়ে মেতে থাকে যা ইসলামে একটি খারাপ ও অনৈতিক কাজ হিসেবে বিবেচিত। এবার আমরা থার্টি ফার্স্ট নাইট এর উৎপত্তি সম্পর্কে নিচে আলোচনা করব।

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর অর্থ

থার্টি ফার্স্ট নাইট আমরা সকলেই জানি এটি একটি উৎসবের দিন কিন্তু থার্টি ফার্স্ট নাইটের অর্থ কি তা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। থার্টি ফাস্ট নাইট একটি ইংরেজি শব্দ। চলুন আমরা থার্টিফার্স্ট নাইটের অর্থ কি এ বিষয়ে জেনে নিন। থার্টি অর্থ ত্রিশ। ফার্স্ট অর্থ প্রথম এবং নাইট অর্থ রাত। অর্থাত অর্থাত তুই ফার্স্ট নাইটের অর্থ হল একত্রিশ এর রাত।

আর এই দিনটিকে ইংরেজির প্রথম বর্ষ বরণ করার উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। এটি একটি খ্রীষ্টানীয় সংস্কৃতি বা উৎসব। খ্রিস্টানীয় ক্যালেন্ডার হিসেবে এই দিনটিকে পালিত করা হয়। বিভিন্ন দেশে এ দিনটিকে পাবলিক হলিডে হিসেবে পালিত করা হয়। নতুন বছরকে বরং এবং পুরনো সকল স্মৃতিকে মনে করে এই দিনটিকে পালন করে থাকে। থার্টি ফার্স্ট নাইট কে নিউ ইয়ার ইভও বলা হয়। বিভিন্ন আনন্দে মুখরিত হয়ে থাকে এই দিনটি।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কতটুকু জায়েজ? এ বিষয়ে আমরা অনেকেই হয়তো না। জানার কারণে থার্টি  ফার্স্ট নাইট অনেক আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে উদযাপন করে থাকি। আপনাদের মনে অনেকেরই প্রশ্ন থাকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি নাজায়েজ? হ্যাঁ বন্ধুরা ৩১ নাইট উদযাপন করা একটি নাজায়েজ ও অবৈধ কাজ।

এটি ইসলাম একটি অবৈধ কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত এবং এটি একটি বিজাতীয় ধর্মীয় উৎসব কিন্তু অনেক মুসলমান রয়েছে যারা জেনে বুঝে এই বিজাতীয় খ্রিষ্টান উৎসবটিকে অনেক আনন্দে উদযাপনের সাথে পালন করে থাকে তারা কখনোই ইসলামে মুমিন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য নয়।

কারণ থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা একটি নাজায়েজ কাজ আর যে ব্যাক্তি বিজাতীয়দের ধর্মে উৎসবে যোগদান করে সে কখনোই খাঁটি মুমিন হতে পারবেনা এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুঘ্রান তার নাকে এসে পৌঁছাবে না।

থার্টিফার্স্ট নাইট এর রাত্রিতে অনেক যুবক যুবতী খারাপ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে থাকে। ধুমপান বাদ্যযন্ত্র আতশবাজি যত খারাপ এবং অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে এ রাত্রেই। আর এইসব বিষয়গুলো ইসলামে নাজায়েজ এবং এ বিষয়গুলোকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ রাতকে ঘিরে অনেক মানুষ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ড সাথে জড়িত হয়ে এ দিনটিকে অনেক আনন্দের সাথে পালিত করে থাকে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ

এর সাথে সাথে আমরা মুসলমানরা বেচারীদের সাংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়ে খারাপ কর্মকান্ডের সাথে লিপ্ত হয়ে থাকি। দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী একটি জীবন কিন্তু এই দুনিয়া নিয়ে আমরা কত ভোগ বিলাসিকতা নেশা এবং কুকর্মর সাথে লিপ্ত হয়ে এ জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলছি এবং সাথে সাথে আখেরাতের জীবনকেও হারিয়ে ফেলছি।

আমরা হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উম্মত আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে আমার উম্মতেরা যারা বিজাতীয় সংস্কৃতিতে নিজেকে জড়াবে তারা কখনো মুসলিম হতে পারে না। যারা খারাপ এবং ঘৃণিত মানুষ তারাই কেবল জড়িয়ে থাকে আর যারা মমিন মুসলমান রয়েছে তারা কখনোই এ কাজগুলোতে নিজেকে জড়াবে না।

যে মুসলিম  থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করল সে কখনোই নিজেকে মুসলমান হিসেবে দাবি করতে পারে না। কারণ ইসলামে থার্টিফার্স্ট নাইট একেবারেই নাজায়েজ ও অবৈধ কাজ। তাই আসুন আমরা যদি প্রকৃত মুসলমান হয়ে থাকি পরকালে চিরস্থায়ী জান্নাত কে পেতে চাই তাহলে সকল কুকর্ম এবং ইসলামে নাজায়েজ কাজগুলো থেকে এবং ৩১শে ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন থেকে দূরে থাকবো (ইনশাল্লাহ)

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে হাদিস

থার্টিফার্স্ট নাইট রীতি শুরু হয়েছে খ্রিস্ট প্রচলন থেকে। আর এ দিবস পালনের মাধ্যমে বিয়েজাতীয়দের সাদৃশ্য অর্জন করা হয়। আর ইসলাম বিজাতীয়দের সাংস্কৃতি পালন করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। আর কোনো মুসলিম যদি বিজাতীয়দের সাংস্কৃতে যুক্ত হয়ে থাকেন তাহলে তিনি কখনোই নিজেকে মুসলিম বলে যেন দাবি না করে। কারণ একজন প্রকৃত মুসলিম কখনোই বিজাতিদের সাংস্কৃতিতে জড়াতে পারে না।

কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মে জড়িত হয় সে কখনো মুসলিম হতে পারে না এবং তার আমল কখনোই গ্রহণ হবে না।

থার্টি ফার্স্ট নাইটে একটি খ্রিস্টানীয় সাংস্কৃতি যা কখনোই একজন মুসলমান এর সাথে জড়িত হতে পারে না কারণ এ রাতকে ঘিরে নানা রকম কর্ম এবং ইসলামী নাজায়েজ কাজগুলো হয়ে থাকে এ রাতে এমন সব কর্মকাণ্ডগুলো হয়ে থাকে যা ইসলামের কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে চলুন এ ব্যাপারে আমরা নিজে আলোচনা করি।

আতশবাজি, পটকাবাজিঃ ইসলামে আতশবাজি বা পটকা বাজি দুটোই নিষিদ্ধ করা হয়েছে কারণ এটি কখনো ভালো কাজ হতে পারে না। এ সময় আনন্দে আত্মহারা হয়ে অনেকেই আতশবাজি ও পটকা বাজি ফুটিয়ে থাকেন বিভিন্ন রাস্তা সড়ক ছাদে প্রকাশ্য জনসম্মুখে উচু আওয়াজে পটকা ফোটানো হয় যা জনগণকে অনেক কষ্ট দিয়ে থাকে এবং যারা অসুস্থ ব্যক্তি তারা অনেক ভয় পান এবং অস্বস্তি লাভ করেন। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়; তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সুরা আল আহজাব, আয়াত : ৫৮)

অর্থ অপচয়ঃ এ রাত উপলক্ষে যেসব আয়োজন করা হয় সর্বক্ষেত্রেই থাকে অর্থ-অপচয় । অথচ ইসলাম যাবতীয় অর্থ অপচয় থেকে বারণ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আদম সন্তান, তোমরা প্রত্যেক সালাতের সময় সুন্দর পোশাক পরো। খাও, পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালবাসেন না।’ (সুরা আল আরাফ, আয়াত : ৩১)

আঁটসাঁট পোশাক পরাঃ তরুণ-তরুণীরা নগ্নপ্রায় পোশাক পরে তা দেখে পুরুষরা আকৃষ্ট হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন, যে নারীরা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, পরপুরুষকে আকৃষ্ট করে, নিজেরাও আকৃষ্ট হয়, যাদের মাথা বাকা উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের মতো; তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১২৮)

ট্যাটু আঁকাঃ ট্যাটু বা উল্কি অঙ্কন বলতে বুঝায়, শরীরের চামড়ায় সুঁই বা এ জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করা। ইসলামের দৃষ্টিতে ট্যাটু আঁকা হারাম।

উমর (রা.) বর্ণনা করেন, "যে নারী নকল চুল ব্যবহার করে, অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয়, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করে নেয় কিংবা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে দেয়, আল্লাহর রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।" (বুখারি, হাদিস: ৫৫৯৮, মুসলিম, হাদিস : ৫৬৯৩)

গান-বাজনা করাঃ ডিজে পার্টি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, কনসার্ট, অশ্লীল নৃত্য, ফানুস উড়ানো ইত্যকার কাজগুলো ছাড়া কোনো বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয় না। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’। (সুরা লুকমান, আয়াত: ৬ আয়াত)

মাদক সেবন করাঃ এ রাতে তরুণ-তরুণীরা মাদক রাজ্যে নেশা সেবনে মাতাল হয়ে থাকেন। আর এ মাতাল অবস্থায় ঘরে নানা অপকর্ম।  আল্লাহ তাআলা মাদক থেকে নিষেধ করে বলেন, ‘মুমিনগণ, মদ-জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি, ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ।

সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। মদ ও জুয়ার মাধ্যমে শয়তান তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে চায়, চায় আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। কাজেই তোমরা কি এসব থেকে বিরত হবে না? (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৯০-৯১)

জেনা ব্যভিচারঃ এ রাতে যুবক-যুবতীরা অবাধে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়। আবাসিক হোটেল, কমিউনিট সেন্টার, পানশালা, নাচঘর, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাবগুলো পরিণত হয় একেকটি অঘোষিত পতিতালয়ে। সতীত্ব হারায় আমাদের উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। আল্লাহ তাআলা জেনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হতেও বারণ করে বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বানি ইসরাইল, আয়াত ২২) নবিজি (সা.) বলেন, অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান।

থার্টি ফাস্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

৩১শে ডিসেম্বর ১২ঃ০১ মিনিট সারা বিশ্বে থার্টিফার্স্ট নাইট হিসেবে ও উযাপিত হয়ে আসছে বহু যুগ থেকে কিন্তু থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সে বিষয়ে অনেকেই হয়তো আমরা জানিনা। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের আমরা থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব এবং আপনাদের জানাবো।

আপনারা যদি ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী চলতে চান এবং সকল প্রকার কুকর্ম এবং ইসলামী নাজায়েজ কাজগুলো থেকে বিরত থাকতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে এ বিষয়ে জানা জরুরী।

থার্টি ফার্স্ট নাইট আমাদের কাছে খুব পরিচিত রাত। এটি একটি বিজাতীয় খ্রিস্টান সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান। যা খ্রিস্টানদের সাথে সাথে সারা বিশ্বের মুসলমানরাও এ সাংস্কৃতির অংশে জড়িয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই খ্রিস্টান সংস্কৃতির সাথে মুসলমানের জড়ানো কি বৈধতা রয়েছে? তা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে উপরে আলোচনা করেছি। কারণ থার্টিফার্স্ট নাইট একটি বিধর্মীও এবং নাজায়েজ উৎসব।

তাই এ কাজে জড়ানো কখনোই মুসলমানের উচিত নয়। এ রাতকে ঘিরে অনেক যুবক-যুবতী অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে এবং পুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য সাজসজ্জা এবং পোশাক আশাকে নিজেকে আকৃষ্ট করে তোলে। এ সম্পর্কে মহা মহানবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যারা পোশাক থাকা অবস্থায় নগ্ন থাকে এবং নিজেকে খারাপ কাজে লিপ্ত করে পুরুষকে আকৃষ্ট করে তারা কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

থার্টি ফাস্ট নাইট এর ইতিহাস

থার্টি ফাস্ট নাইটের ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের আমরা কিছু বিষয়ে তুলে ধরব এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানলে আপনারা থার্টিফার্স্ট নাইটের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন ইতিহাস শুরু হয় সর্বপ্রথম খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষের সূচনা বা উদযাপিত হয় ইংরেজ জিনিয়াস সিজনের পড়ে ১৫ সম্রাট জমশিদ এই খ্রিস্টপূর্ব ৮০০  সালে এই নববর্ষের প্রচলন শুরু করেন।

সে বর্ষপঞ্জিকা নাম দেওয়া হয় জিনিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। আর তার এই ধারাবাহিকতা পারস্য এখনো নওরোজ ঐতিহ্যগত  জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। তার পরবর্তীতে পারস্য হতে ক্রমান্বয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই উৎসবটি বিস্তার লাভ করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের নির্দিষ্ট কিছু সময় অনুযায়ী এবং নিয়ম অনুযায়ী এবং উৎসবটি পালিত হয়ে আসছে। তবে ব্যাবিলনে নববর্ষ শুরু হতো মহাবিশুবের ২০ শেই মার্চের দিন এবং গ্রিকদে নববর্ষ পালিত হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী ২১শে ডিসেম্বর।

আরো পড়ুনঃ রবিউল আউয়াল মাসে কি ফজিলত রয়েছে

আর এভাবেই বিভিন্ন রীতিমতি অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হতো। তবে বর্তমান সময়ে আমরা থার্টি ফাস্ট নাইটের ইতিহাস পায় পূর্বে নিয়ম গুলোর পরবর্তীতে খ্রিস্টানীয় রীতি অনুযায়ী গোটা বিশ্বে এই খ্রিষ্টীয়ো গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার বা ইংরেজি বর্ষের সূচনা শুরু হয় যা থার্টি ফার্স্ট নাইট ৩১শে ডিসেম্বর পালিত হয়।

শুধু মুসলিম দেশগুলোকে বাদ দিয়ে এই গহনার কাজ শুরু হয়।আর ইংরেজিদের গণনা শুরু হয় ইংরেজদের আবিষ্কারের মাধ্যমে নয় এটি গ্রেগোরিয়ান বা খ্রিস্টানদের আবিষ্কার। তাই আমরা এটিকে সাধারণভাবে ইংরেজি নববর্ষ না বলে গ্রেগোরিয়ান নববর্ষ বলতে পারি। যেহেতু 1752 সালে ১ ই জানুয়ারি বানাবো বর্ষার প্রথম দিন কে ইংরেজি নববর্ষ পালন করে থাকে। তাহলে আমরা থার্টি ফার্স্ট নাইটের ইতিহাস থেকে বুঝতে পারি এটি একটি গ্রেগোরিয়ান নববর্ষ।

থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইসলাম

আমরা জানি যে বর্তমানে আমাদের এই পৃথিবীতে যতগুলো দেশ রয়েছে সাধারণত সবাই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করে থাকেন। এমনকি অনেক মুসলিম দেশ রয়েছে যারা এই দিনটি পালন করেন। আবার কিছু কিছু দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় ডিসেম্বর মাসের শেষ রাত। সাধারণত এটি খৃষ্টান ধর্মের মানুষদের একটি প্রচলিত অনুষ্ঠান বলা যায়।

এখানে ইসলাম অথবা মুসলিমদের কোন সম্পর্ক নেই। তাই এই অনুষ্ঠানে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কোন ভূমিকা থাকার কথা নয় কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যায় যে মুসলিম ঘরের সন্তানেরা এই অনুষ্ঠানের বেশি মনোযোগ দিয়ে থাকে। এবং তাদের ভূমিকা সব থেকে বেশি পাওয়া যায়। সাধারণত এই রাতে আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয় যেখানে অনৈতিক কাজকর্ম হয়ে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, "আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে অনুসরণ করবে বা সে ধর্মের নিয়মগুলো সে পালন করবে তার আমল কখনো গ্রহণ করা হবে না। যার কারণে সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের শামিল হবে" { সূরা আল ইমরানঃ ৮৫} এছাড়া আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মুশফিকদের সাহায্য কখনও গ্রহণ করতেন না।

বর্তমান সময়ে মুসলিম সমাজে অনেক যুবক যুবতী রয়েছে যারা থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করার জন্য হারাতে বাড়ি থেকে বাইরে বের হয়। একজন অপরজনকে অভিনন্দন জানানোর মাধ্যমে এমনকি আতশবাজি এবং পিকনিক করার মাধ্যমে তারা এই রাত পালন করে থাকে। সাধারণত এখানে অসামাজিক কিছু কার্যক্রম ও চলে যেমন নেশার দ্রব্য পান করা।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা ইসলামে বৈধ

আপনি যদি উপরের আলোচনা গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। আপনাদের আবার জানিয়ে রাখি যে থার্টি ফার্স্ট নাইট হল খ্রিস্টান ধর্মীয় অবলম্বীদের একটি মনগড়া আচার অনুষ্ঠান। সাধারণত এখানে পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বের মানুষেরা এই দিনটি পালন করেন।

অন্যদের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে এমনকি বিশ্বের যে সকল মুসলিম দেশ রয়েছে এই হতভাগা মুসলিমরাও তাদের সাথে এই রাত পালন করে থাকে। এর মাধ্যমে এ রাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কিছু যুবক যুবতি রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের নেশা দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে এমনকি যৌনকর্মে ও লিপ্ত হয়।

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কি জায়েজ

ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে সকল আচার অনুষ্ঠান অন্য ধর্মাবলম্বীর মানুষেরা পালন করে থাকে সেগুলো কখনোই পালন করা যাবে না। এছাড়া যে অনুষ্ঠানে পর্দা করা হয় না এমনকি নাচ-গান এর আয়োজন করা হয় সাধারণত সেই সকল আচার অনুষ্ঠান ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারে হারাম এবং অবৈধ। তাই আমরা বলতে পারি যে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা অবৈধ।

আমাদের শেষ কথা

আর কিছুদিন পর উদযাপন করা হবে থার্টি ফার্স্ট নাইট। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের কি করা উচিত? আমরা কি এই রাতে অন্যান্যদের সাথে দিনটি উদযাপন করব কিনা? এই ধরনের প্রশ্ন অনেকের মনেই জাগে। আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

যেহেতু এই রাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যক্রম করা হয় এবং নারী-পুরুষ একত্রে মিলিত হয় সাধারণত তাই ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই রাত পালন করা একেবারেই নিষিদ্ধ এবং হারাম। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেল থেকে বিষয়গুলো জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন। এই ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url