দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি

মুসলমান ধর্মে দেনমোহর বিবাহের জন্য বাধ্যতামূলক একটি নিয়ম। এই দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে অনেকে গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাদের জন্য আজকে আমরা দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করব। যারা দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জানতে চান তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত করতে থাকুন।

দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি

তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন। বিষয়টি জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি

দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি

বিয়ের সময় আমরা স্ত্রীকে যে নগদ অর্থ উপহার সম্পদ বা স্বর্ণ দিয়ে থাকি সেটাই দেনমোহর। এটা স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ। এবং এটি প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য ও তার স্ত্রীকে তার প্রাপ্য দেনমোহর  ফিরিয়ে দেওয়া। আপনি যদি আপনার স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ না করেন তাহলে অবশ্যই দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি আপনাকে এ দুনিয়াতে এবং পরকালে আল্লাহ পাক দিয়ে থাকবেন।

অনেক বিবাহিত পুরুষ আর্থিক সমস্যার কারণে অনেকেই দেনমোহর বাকি করে বিয়ে করে থাকে। এবং সেটা পরে শোধ করার আশ্বাস দিয়ে থাকেন। তবে সংসার জীবনে অনেকেরই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত হয়ে যায়।

আরো পড়ুনঃ পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান

আর আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেলে অবশ্যই আপনাকে দেনমোহর পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে দেনমোহর পরিশোধ না করলে আইনের দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি পাওয়ার পাশাপাশি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি কখনোই ক্ষমার যোগ্য হবেন না।

অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা গায়ের জোর দেখিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করতে চায় না। এবং স্ত্রীর দিক থেকে কোন তালাকের বিষয় উঠলে বা ডিভোর্স হয়ে গেলে অবশ্যই দুই এক বছরের মধ্যে তার দেনমোহর পরিশোধ না করলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

আপনি যদি সংসার করা অবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ না করে মারা যান। তাহলে তার স্বামীর সম্পতি থেকে তার ওয়ারিশগণ অবশ্যই আপনাকে তার প্রাপ্য দেন মোহর পরিশোধ করে দিতে হবে। দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি ভয়াবহ এবং এটি প্রত্যেক পুরুষ যদি দেনমোহর পরিশোধ করতে সচেতন থাকে তাহলে আমাদের এই শাস্তি ভোগ করতে হবে না এবং দুনিয়াতে এবং পরকালে আমরা সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারব।

কিন্তু আপনি যদি দেনমোহরের বিষয় নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করেন আপনার স্ত্রীকে তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা দেন মোহরের অংশ বুঝিয়ে না দেন তাহলে অবশ্যই আইনের শাস্তি আপনার জন্য ভয়াবহ হবে তাই আগে থেকেই সাবধান হন।

দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি

বিয়ে হলো একটি পুরুষ ও একটি নারীর সম্পর্কের জন্য সামাজিক স্বীকৃতি। প্রত্যেক নারী পুরুষের পূর্ণ বয়স হলে বিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক। যার মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা বোধ রীতি নীতি ঠিক থাকে। আর বিয়ে করতে হলে অবশ্যই আপনাকে মোহরানা দেওয়ার মত সম্পদ থাকা জরুরি। কারণ প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পুরুষের উপর মোহরানা ওয়াজিব করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মোহরানার গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইসলামিক দৃষ্টিতে দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি রয়েছে।

তা সামাজিক শৃঙ্খলাবোধ এবং ইসলামিক রীতিনীতি বজায় রাখতে অবশ্যই আপনাকে বিয়ের দিন দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। অনেক পুরুষ রয়েছে যার সাধ্যমত অর্থ না থাকায় পরবর্তীতে মোহরানা দেওয়ার কথা দিয়ে থাকেন। ইসলামে এদের সম্মতি রয়েছে। এ অবস্থায় আপনি আপনার স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবেন।

তবে আপনি যদি সহবাসের পূর্বে আপনার স্ত্রীকে তার নাইট্য মোহরানা পরিশোধ করেন এটি সবথেকে উত্তম। অনেক পুরুষ আছে যারা মোহরানা কথা দিয়েও মোহরানা পরিশোধ করে না তাদের জন্য তাদের স্ত্রী স্পর্শ করা হারাম হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ মহরম মাসে রোজা কয়টি

প্রত্যেক স্ত্রী যদি স্বামী তার প্রাপ্য মোহরানা না পরিশোধ করে তাহলে ওই স্বামীকে কিয়ামতের দিন যেনা কারীর কাতারে দাঁড় হতে হবে।

তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা)/ তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। (সূরা নিসা-৪)

প্রত্যেক নারীকে মোহরানার মাধ্যমে তার স্ত্রীকে হালাল করার নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে তাই অবশ্যই সকল পুরুষের উচিত তার স্ত্রীকে বিয়ের দিন বা পরে মোহরানার টাকা যত সম্ভব তাড়াতাড়ি শোধ করা।

তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম

মোহরানা দেওয়া একটি বাধ্যতামূলক কাজ। দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর হয়ে থাকে এবং সমাজের চোখে এটি খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ। অনেক ব্যক্তি রয়েছে যারা দেনমোহরে অত গুরুত্ব না দিয়ে বাকিতে দেনমোহর করে বিয়ে করে থাকে এবং পরবর্তী তারা দেনমোহর দিতে নারাজ হয়ে থাকে এ নিয়ে সংসারে কলহলের সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সে পরিণত হয়।

আপনি যদি বাকি তে দেনমোহর করে থাকেন তাহলে সেটা বিয়ের কয়েক মাস পরে বা ১/২ বছরেও শোধ করতে পারবেন এবং অনেকেই আছে যারা সংসারে এ নিয়ে বিভিন্ন অশান্তির সৃষ্টি করে থাকে।  এবং পরেও ডিভোর্সের পরিণত হয়। কিন্তু আপনার ডিভোর্স হয়ে গেল আপনার দেনমোহরের টাকা আপনি নায্য প্রাপ্য হিসেবে পেয়ে যাবেন কারণ এটি স্বামীর ঋণ যা দিতে সে বাধ্য।

ডিভোর্সের পরও আপনি এ দেন মোহরের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। তবে বিয়ের পর যদি কোন পুরুষ দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করে তাহলে তার স্ত্রী সহবাসে যেতে অস্বীকার করতে পারেন। মোহরানা প্রতিটা পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক তাই অবশ্যই আপনাকে বিয়ের পর বা তালাকের পরও মোহরানা পরিশোধ করতে হবে।

দেনমোহর মামলার রায়

দেনমোহর বা মোহরানা অবশ্যই বাধ্যতামূলক একটি নিয়ম। প্রত্যেক পুরুষকে বিয়ের মাধ্যমে পালন করতে হয়। অনেকে আছে যারা সমসাময়িক সমস্যার কারণে বিলম্বে মোহরানা আদায় করে থাকে। দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি অনেক ভয়াবহ হয়ে থাকে। অনেকেই এ শাস্তি তোয়াক্কা না করে দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে আপত্তি জানিয়ে থাকে। তাহলে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে তার ওপরে মামলার পদক্ষেপ নিতে পারবে।

আরো পড়ুনঃ বেতের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়

২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের ২১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে এবং রায়ে এ বিষয়ে কিছু মতবাদ প্রকাশ হয়েছে। তার স্বামীর পাশাপাশি তারা আত্মীয়-স্বজন যে কেউ দেনমোহর পরিশোধের দায়িত্ব নিতে পারবে।

এছাড়া পারিবারিক আদালতে মামলা করে স্বামীর জমি মোহরানা হিসেবে পুনরুদ্ধার করতে পারবেন স্ত্রী। একইসঙ্গে রায়ে মুসলিম আইনের অধীনে কোনো বৈধ সম্পত্তি, নগদ বা মূল্যবান জিনিসপত্র দেনমোহর হিসেবে নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসলিম বিয়েতে এটি যুগান্তকারী রায় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, এ রায়ের ফলে স্বামীর অবর্তমানে (দেনমোহর পরিশোধ না করে মারা গেলে) স্ত্রী তাঁর এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।

তথ্য: lawyersclubbangladesh.

দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তিঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি, দেনমোহর পরিশোধ না করে স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে কি? তালাকের পর দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম, দেনমোহর মামলার রায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখন আপনি যদি দেনমোহর পরিশোধ না করার শাস্তি সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন