পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান

যারা সদ্য বিয়ে করেছেন এবং বিয়ে করার পর দেনমোহরের কথা চিন্তা করছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেকেই গুগলের সার্চ করে পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে জানতে চান তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে পড়লে পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন।

পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান

তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জেনে নেই। বিষয়গুলো জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান

দেনমোহর কি

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরব। ইসলামে দেনমোহরের গুরুত্ব অনেক। কারণ বিয়ে সময় একজন স্বামী তার স্ত্রীকে বিয়ের মুহূর্তে উপহার দিয়ে থাকেন।দেনমোহর বা মোহরানা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইসলামে এটির গুরুত্ব অপরিসীম।

আরো পড়ুনঃ জিলকদ মাসের আমল ও ফজিলত

দেনমোহর হচ্ছে বিয়ে উপলক্ষে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রুপা বা স্থাবর সম্পত্তি দান করা। ইসলামে যখন একটি নারী ও পুরুষের বিবাহ হয়ে থাকে তখন মোহরানা ধার্য করা হয়। মোহরানা  হলো স্ত্রীর প্রতি একটি সম্মানি। যা স্বামী তার স্ত্রীকে খুশি হয়ে দিয়ে থাকে। মোহরানা হলো একজন স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার।

দেনমোহর কখন দেওয়া হয়

ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী যখন কোন শুদ্ধ নারী-পুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন সে স্বামী যেন তার স্ত্রীকে কিছু উপহার বা সম্মানী দিয়ে ঘরে নিয়ে আসে এটাই হল মহরানা। ইসলামের প্রত্যেক নারীর জন্য মহরানা নির্ধারণ করা হয়েছে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। অনেকেই মোহরানার ওপর গুরুত্ব দেয় না যা মোটেও ঠিক নয়। একজন পুরুষের সাধ্য অনুযায়ী তার স্ত্রীকে তার সাধ্যমত সম্মানী দিয়ে বা উপহার দিয়ে বিয়ে করা উচিত।

আর এই মোহরানা আমাদের সকল পুরুষদের আদায় করা উচিত। একটি নারী পুরুষের সুখী জীবন যাপনের জন্য এবং স্থায়ী আবাসস্থলের জন্য বিবাহ বন্ধন আবশ্যক। ঠিক তেমনি একজন নারীকে বিবাহের সময় তার মোহরানা দেওয়া আবশ্যক।

অনেকেই এ ব্যাপারে সজাগ না হয়ে পরবর্তীতে মোহরানা পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে ভেবে থাকেন এবং সুযোগ বুঝে তা কেউ পরিশোধ করেন আবার কেউবা পরবর্তীতে পরিশোধ করে থাকেন। কিন্তু বিয়ের সময় নগদ মোহরানায় বিয়ে করা উচিত।ইসলাম নারীকে যেসব অধিকার প্রদান করেছে-এর মধ্যে অন্যতম হলো মোহরানা। দেনমোহর ছাড়া বিয়ে হতে পারে না। 

মোহরানার বিষয়ে পবিত্র কুরআন কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে নবি! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছ।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৫০)

কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে বিবাহ করে এবং দেনমোহর পরিশোধ না করে তাহলে সেটা ব্যভিচারের সমতুল্য হয়ে থাকে এবং  সেই স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায়।

আল্লাহর রাসূল (সা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো একটা পরিমাণ মোহরানা ধার্য করে কোনো নারীকে বিয়ে করল, অথচ আল্লাহ জানেন তা পরিশোধ করার ইচ্ছে তার নেই, এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে তার স্ত্রীকে প্রতারিত করল এবং অন্যায়ভাবে তার সতীত্ব নিজের জন্য হালাল মনে করে ভোগ করল এমন ব্যক্তি কিয়ামতে ‘জিনাকারী ব্যভিচারী হিসাবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ)।

তাই সকল মুসলমান ভাইদের মোহরানার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং আপনার সাধ্যমত মোহরানা দিয়ে আপনার স্ত্রীকে হালাল করতে হবে।

দেনমোহর কেন দেওয়া হয়

দেনমোহর হলো প্রত্যেক নারীর ন্যায্য মর্যাদা এবং  বিয়ে উপলক্ষে স্বামীর পক্ষ থেকে সম্মানী। ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী প্রত্যেক স্বামী তার স্ত্রীকে বিবাহের সময় বাধ্যতামূলক তার সম্পদের কিছু অংশ অথবা সোনা, রুপা অথবা নগদ অর্থ উপহার দিবে। আর এটি স্ত্রীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ রজব মাসে কি আমল করব তা জেনে নিন

ইসলামে দেনমোহরের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এটি প্রত্যেকটা স্বামীর উপরে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই বিয়ের সময় প্রত্যেক স্বামীকে তার স্ত্রীর জন্য ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নগদ অর্থ অথবা কিছু সম্পদ দিয়ে বিবাহ করতে হবে। এটি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ঋণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বিবাহ করার এবং দেনমোহর পরিশোধদ করা তৌফিক দান করুন আমীন।

পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান

বিয়ে একটি সামাজিক বৈবাহিক সূত্রের বন্ধন। বিয়ের জন্য অবশ্যই দেনমোহর দেয়া উচিত। ইসলামে এটি বাধ্যতামূলক। মৌখিক বিয়ে পড়ানোর সময় বা কাবিননামায় স্বাক্ষর করার আগে এবং স্ত্রীকে স্পর্শ করার আগে দেনমোহর দেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেকেই তা মানেন না। পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে অনেকেই বলে থাকেন। কিন্তু অনেকে এটি সচেতন না হয়ে পরে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন।

দেনমোহর হলো স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ। আর এই ঋণ বিয়ের সময় শতকরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকে দেনমোহর বাকি রেখে বিয়ে করে থাকি এবং অনেকেই ছেড়ে দেওয়ার সময় বা তালাকের সময় দেনমোহর দিয়ে থাকেন এবং অনেকেই দেন মোহনা শোধ করে মারা যায় ‌। আপনার স্বামী যদি মারা যাই তাহলে অবশ্যই তার সম্পত্তির অংশ হতে আপনার দেনমোহরের সমপরিমাণ সম্পত্তি স্বামীর সম্পত্তি হতে দিতে হবে।

কারণ দেনমোহর পরিশোধ করা ইসলামে প্রত্যেক স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু এটাকে অনেকেই গুরুত্ব না দিয়ে পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এবং বাকিতেই অনেকে ই বিবাহ করে থাকেন। যে স্বামী তার স্ত্রী দেনমোহরের টাকা শোধ না করেই মারা যাবে কেয়ামতের দিন তাকে যেনা কারীর কাতারের দাঁড়াতে হবে এবং সে ব্যভিচার

মোহর বাকি রেখে বিয়ে করা যায় কি

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। দেনমোহর একটি স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার। যা বিয়ের সময় তার স্বামী তাকে উপহার বা সম্মানী হিসেবে দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক পুরুষে আছে যারা মোহর বাকি রেখে বিয়ে করে থাকে কিন্তু এটা কতখানি ইসলামে গুরুত্ব রয়েছে তা জেনে নিব।

স্ত্রীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা রেখে বিয়ের সময় মোহর ধার্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই এটি শোধ না করেই মারা যায়।

বিয়ের সময় আপনি মোহরানা বা কি করে বিয়ে করতে পারবেন কিন্তু মোহরানা যেহেতু বাধিতামূলক আপনাকে শোধ করতে হবে। তাই বিয়ের সময় মোহরানা শোধ করাটাই উত্তম কাজ। কিন্তু আপনি বাকিতে বিয়ে করলে পরবর্তীতে একটা নির্ধারিত সময় নিয়ে যদি মোহরানা পরিশোধ করতে চান বা পারেন, তাহলে কোন সমস্যা নেই এটি বৈধ হবে।

বিয়ের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয় বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ -(সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস : ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস : ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ২৭২৮)

আরো পড়ুনঃ মহররম মাসে কয়টি রোজা করতে হয়

কোন ব্যক্তি যদি মোহর আদায়ের নিয়তে কোন মহিলাকে বিয়ে করে অথবা পরে সে নিয়ত পূর্ণ না করে সে আল্লাহকে ধোকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখানো এবং সে নারীকে ভোগ করলো কেয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীদের দলে যুক্ত হবে। আহমদ, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩)

তাই আমাদের মধ্যে কোন দীনি ভাইয়ের যদি বিবাহের সময় মোহর দেওয়ার সাধনা থাকে তবে সে যেন নির্দিষ্ট একটি সময় নেই এবং সে সময়ের মধ্যে যেন তার স্ত্রীর ঋণ শোধ করে। আল্লাহতালা আমাদের সকলকে হালাল রুজি এবং হালাল স্ত্রী দান করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)।

পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধানঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক গন আজকের এই আর্টিকেলে দেনমোহর কি? দেনমোহর কখন দেওয়া হয়? দেনমোহর কেন দেওয়া হয়? পরবর্তীতে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান, মোহর বাকি রেখে বিয়ে করা যায় কি? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি বিষয়গুলো সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে একজন মুসলিম হিসেবে আপনার অবশ্যই এ বিষয়গুলো জানা উচিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের তথ্যমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url