যাকাত কার উপর ফরজ - কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে

রমজান মাসে অনেকেই যাকাতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা যাকাত কার উপর ফরজ এবং কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে এ বিষয়ে আপনাদের জানাবো। ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের একটি যাকাত। যা আমাদের আদায় করা প্রত্যেক স্বাবলম্বী মানুষদের উপর ফরজ করা হয়েছে। তাই আমাদের তো অবশ্যই যাকাত কার উপর ফরজ তা জানতে হবে।

যাকাত কার উপর ফরজ

অনেকেই আছেন যারা যাকাত কার উপর ফরজ এবং কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে সে বিষয়ে জানতে চান, তাই আমরা আজকের এই আর্টিকেলটি যাকাত কার উপর ফরজ এবং কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে এ বিষয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন যাকাত কার ওপর ফরজ এবং যাকাত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা তুলে ধরব।

সূচিপত্রঃ যাকাত কার উপর ফরজ - কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে

যাকাত কার উপর ফরজ

যাকাত ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ। যাকাত একটি মুসলমানকে স্বাবলম্বী করে তুলতে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বোধকে ও উন্নয়নকে আরো শক্তিশালী করতে বিশেষভাবে কাজ করে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা যাকাত কার ওপর ফরজ এবং কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে সে বিষয়ে আপনাদের সামনে বিস্তারিত কিছু আলোচনা করব। তাহলে চলুন আগে যাকাত কার উপর ফরজ এ বিষয়ে জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা

মুসলমানদের মধ্যে এমন প্রাপ্তবয়স্ক নর- নারী যাদের নিসাব পরিমান সম্পদ রয়েছে তাদের যাকাত আদায় করতে হবে। কারণ তারা হিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এবং তাদের জন্য যাকাত ফরজ। যাদের ওপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে তাদের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে।

১। যেমন আপনার কাছে যদি নিসাব পরিমাণ

২। সোনা ৭.৫ তোলা=৯৫.৭৪৮ গ্রাম প্রায় থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে যাকাত আদায় করতে হবে।

৩। এবং রুপা ৫২.৫ তোলা=৬৭০.২৪ গ্রাম ।

৪। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।

৫। এবং সেই সম্পদের পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।

৬। সারা বছরের যাবতীয় সব চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলেই শুধু জাকাত ফরজ হবে।

৭। নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর থাকলেই শুধু ওই সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হবে।

৮। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ঋণমুক্ত হতে হবে। ঋণ মুক্ত হওয়ার পর নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।

৯। আপনার যদি নিসাব পরিমাণ টাকা থাকে তার ওপরও জাকাত দিতে হবে। কারণ, এ নোটগুলো রূপার বদলেই চলমান। সুতরাংএর মূল্য রূপার নিসাবের সমপরিমাণ হলে, তার জন্য যাকাত ফরজ হবে এবং যথারীতি তাকে যাকাত আদায় করতে হবে।

১০। সব ধরনের সম্পদ ও সামগ্রীর ওপর যাকাত ফরয হয় না। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসার পণ্যে যাকাত ফরয হয়।

 ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা যাকাত কার উপর ফরজ সে বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পেরেছি। ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। কারণ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের যাকাত একটি। তাই প্রত্যেক মুসলমানের ওপর যাকাতের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা যাকাত আমাদের সম্পদকে পবিত্র করে। চলুন তাহলে ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব কতটুকু সে বিষয়ে জেনে নিই।

যাকাতের আভিধানিক অর্থ হলো, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা, বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। যাকাত আপনার সম্পদকে পবিত্র করে এবং বিভিন্ন বিপদ আপদ ও কৃপণতা থেকে মানুষকে হেফাজত করে। যাকাত ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি। তাই নিসাব পরিমাণ অর্থ এক বছর পূর্তি হলে আল্লাহর উদ্দ্যেশে যথাযথ পন্থায় ব্যয় করাই যাকাত। যিনি যাকাত অস্বীকার করবেন তিনি কখনোই একজন খাঁটি ঈমানদার মুমিন নয়।

আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করবে না প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয়। {তিরমিজি, মেশকাত হাদিসঃ ১৭৭৯}

যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। প্রত্যেক মুসলমানেরই ঈমানকে খাঁটি অশক্তিশালী করে তুলতে যাকাত ও সালাতের অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। কুরআন মজীদে বহু আয়াতে সালাত ও যাকাত আদায় করার আদেশ করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অশেষ রহমত ও মাগফিরাতের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধিরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۝۱۱۰

তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। {সূরা বাকারাঃ ১১}

বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে, রাসূল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন সে যদি ঐ সম্পদের যাকাত আদায় না করে, তাহলে তার সম্পদকে কিয়ামতের দিন টাকপড়া বিষধর সাপের রূপ দান করা হবে। যার চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে যা কিয়ামতের দিন তার গলায় বেড়ির মত পেঁচিয়ে দেয়া হবে। অতপর সে সাপটি তার চোয়ালে দংশন করে বলতে থাকবে আমিই তোমার সম্পদ,আমিই তোমার কুক্ষিগত মাল।

তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের উচিত নিসাব পরিমাণ থাকলে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পন্থায় আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে যাকাতের গুরুত্ব বোঝার তৌফিক দান করুন (আমীন)।

কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে

যাকাতের আবিধানিক অর্থ পরিশুদ্ধ হওয়া,বৃদ্ধি পাওয়া। তাই যাকাতের মাধ্যমে আপনার সম্পদ পবিত্র করা একান্ত ইসলামী শরীয়াতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই সকলের জানা জরুরী কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে। কারণ যাকাত আপনি সঠিক পন্থায় সঠিকভাবে না আদায় করলে কোনভাবেই যাকাতের হক আদায় হবে না। তাই অবশ্যই আমাদের কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে সে বিষয়ে জানতে হবে।

আরো পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

এমন কিছু মানুষ রয়েছে যাদের আপনি যাকাতের জন্য নির্ধারণকরতে পারবেন নিম্নে সে শ্রেণীর ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করা হলোঃ

১। ফকির - ফকির বলতে যে ব্যক্তির থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই।

২। মিসকিন - মিসকিন হলো অসহায় দরিদ্র যার কর্ম ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু তার আয়ের চাইতে ব্যয়ের পরিমাণ অত্যাধিক।

৩। যারা যাকাত আয় এবং ব্যয়ে কর্মচারী রত রয়েছে

৪। নওমুসলিম অর্থাৎ যারা অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে, তাদেরকে দেয়া।

৫। দাসমুক্তির জন্য। (বর্তমানে যদিও এগুলো দেখা যায় না)।

৬। ঋণ মুক্তির জন্য। জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরনের জন্য সংগত কারণে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত প্রদান করা যাবে।

৭। যেসব ব্যক্তিবর্গ ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদ যুক্ত রয়েছে সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে যাকাত দেয়া যাবে।

৮। মুসাফির - মুসাফির অবস্থায় কোনো ব্যক্তি বিশেষ কারণে তার ধন সম্পদ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে যাকাত প্রদান করা যাবে।

যাকাতের ফজিলত

দৈহিক ইবাদত হিসেবে নামাজ যেমন খুবই জরুরি, তেমনি আর্থিক ইবাদত হিসেবে যাকাতের ও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া নামাজ এবং যাকাত একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জরিত। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা যাকাত কার ওপর ফরজ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি। অনেকেই আছেন যারা যাকাতের ফজিলত সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা যাকাতের ফজিলত সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।

অন্য এক হাদিসে আছে, সদকায় সম্পদ হ্রাস পায় না এবং ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ শুধু বান্দার সম্মানই বাড়িয়ে দেন, আর আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বনকারীকে আল্লাহ উপরে উঠিয়ে দেন’। (মুসলিম শরীফ,২৫৮৮)

যাকাত আদায় করা ধনীদের উপর ফরজ। এটি ধনীদের ঋণ গরীবদের ওপরে ধনীরা যদি মনে করে থাকেন যে এটি তাদের ওপর কোননা করছেন তাহলে এটি ভুল ধারণা কারণ ধনীদের সম্পদের ওপর গরিবের হক রয়েছে যা হল যাকাত। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অর্থাৎ ধনীদের ধন-সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।(সূরা আয যারিয়াত)

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারীদের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ নিয়ে থাকেন। সূরা সাবা’র ৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যা কিছু (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দান করবেন। আর তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন-তাদের সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন। {সূরা তাওবা আয়াত ৯ : ১০৩}

সিয়ামের মতো যাকাতও শুধু আমার মোহাম্মদের উম্মতের উপরই ফরজ নয়, অন্যান্য নবীর উম্মতদের উপরও যাকাত ফরজ ছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, আর আমি ইব্রাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক আরও দান করেছিলাম ইয়াকুব আর প্রত্যেককেই সৎকর্মপরায়ণ করেছিলাম, আর তাঁদের নেতা করেছিলাম, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে সৎপথ প্রদর্শন করত; তাদের আদেশ করেছিলাম সৎ কাজ করতে নামাজ কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে, তাঁরা আমারই উপাসনা করত। {সূরা-আম্বিয়া, আয়াত ৭২-৭৩}

মহান আল্লাহ ইসলামে ভ্রাতৃত্বের সীমার মধ্যে শামিল হওয়ার জন্য যাকাত প্রদানকে অন্যতম হিসাবে ঘোষণা করেছেন। যেসব কাজ করলে আল্লাহ মানুষের উপর রহমত ও বরকত নাযিল করেন তাঁর মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে যাকাত দেওয়া।

আরো পড়ুনঃ যাকাত কখন দিতে হবে - যাকাত দেওয়ার উত্তম সময়

তাই কিয়ামতের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি ও আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সঠিক পন্থায় যাকাত আদায় করা জরুরি। যাকাত আদায়ের পাশাপাশি অন্যকে যাকাত দানে উৎসাহিত করা আমাদের সকলের কর্তব্য। কারণ যাকাত আদায়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্য দূর করবে।

যাকাত কার উপর ফরজ - কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবেঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ ইসলামের পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে অন্যতম যাকাত নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে যাকাত কার উপর ফরজ? কোন ধরনের মানুষকে যাকাত দিতে হবে? যাকাতের ফজিলত ইসলামের যাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই বিষয়গুলো জানা উচিত।

কারণ একজন স্বাবলম্বী মুসলিমের ওপরে যাকাত ফরজ করেছে আল্লাহ তা'আলা। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url