যাকাত কখন দিতে হবে - যাকাত দেওয়ার উত্তম সময়

এই আর্টিকেলে আমরা যাকাত কখন দিতে হবে এবং যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় সম্পর্কে আপনাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে চলেছি। কারণ রমজান মাস চলছে আর রমজান মাসের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যাকাত। যা আমাদের রমজান মাসে আদায় করে থাকি। তাই যাকাত কখন দিতে হবে এবং যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় সম্পর্কে জানা সকল মুসলিমের জন্য একান্ত জরুরী।

যাকাত কখন দিতে হবে

আপনারা যারা যাকাত কখন দিতে হবে এবং যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় জানতে চান তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে যাকাত কখন দিতে হবে এবং যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ যাকাত কখন দিতে হবে - যাকাত দেওয়ার উত্তম সময়

যাকাত কাকে বলে

রমজান আল্লাহ তাআলার বরকতের মাস এই মাসের ইবাদত অনেক মূল্যবান। পাশাপাশি আমাদের দান খয়রাতো করতে হবে। ইবাদতের মাধ্যমে যেমন আপনি সত্তর গুণ নেকি পাবেন তেমনি দানের মাধ্যমে আপনার আত্মশুদ্ধি এবং আপনার সম্পদের পবিত্রতা রক্ষা হবে।

মুসলমানদের হিসাব পরিমান সম্পদের কিছু অংশ রয়েছে যায়ে রমজান মাসে গরিব দুঃখীদের মাঝে ব্যয় করতে হয়। আজকেরে আমরা যাকাত কখন দিতে হবে এবং যাকাত উত্তম সময় সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আগে যাকাত কাকে বলে সে বিষয়ে জেনে নেই।

আরো পড়ুনঃ রোজা অবস্থায় চুল দাড়ি কাটা যাবে কিনা

যাকাতের আভিধানিক শব্দের অর্থ হল পবিত্রতা,

বিশুদ্ধতা ও বৃদ্ধি পাওয়া। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোন মুসলিমের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রতি বছরে তার সম্পত্তির শতকরা২.৫০% হারে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।

যাকাত কখন দিতে হবে

আজকের আর্টিকেলে আমরা যাকাত কাকে বলে সে বিষয়ে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি। অনেকেই আছেন যারা যাকাত সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না, তাই যাকাত কখন দিতে হবে সে বিষয়েও ধারণা রাখেন না। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য আমরা যাকাত কখন দিতে হবে সে বিষয়ে জানাবো।

প্রত্যেক মুসলমানের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সম্পত্তির শতকরা ২.৫০% হারে নির্দিষ্ট অর্থ ব্যয় করতে হয়। যাকাত শুধু রমজান মাসে নয়, আপনি চাইলে যে কোন সময় ব্যয় করতে পারেন । তবে আপনার সম্পত্তি এক বছর আপনার কাছে রক্ষিত থাকতে হবে সে সে সম্পত্তি যেকোনো সময়ে রক্ষিত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলেই আপনি সেই মাসেই যাকাত আদায় করতে পারবেন।

অনেকেই এই কাজটি রমজান মাসে অনেক সওয়াবের আশায় করে থাকেন, কিন্তু এটি ঠিক নয়। আপনি রমজান মাসে যাকাত আদায় করলেও যেমন নেকি আদায় করতে পারবেন, ঠিক অন্য মাসে দিলেও আপনার যাকাত আদায়ের হক পূর্ণ হবে। যাকাত শব্দের অর্থ হলো পবিত্রতা, তাই যাকাত দিলে আপনার সম্পদের পরিমাণ কমবে না বরং বৃদ্ধি পাবে।

যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় কখন

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জাকাত আদায় করতে হয়। যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় কখন তা আমরা আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব। রমজানের রোজা যেমন আমাদের আত্মশুদ্ধি করে, তেমনি যাকাত আমাদের সম্পর্কে পবিত্র করে।

রমজান মাস হল একটি পবিত্র ও মর্যাদা সম্পূর্ন মাস এই মাসেফরজ, ওয়াজিব সুন্নত ও নফল কাজ আদায় করলে আল্লাহ এর সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করে বান্দাকে নিজ হাতে প্রতিদান প্রদান করবেন। তাই চাইলে আপনি রমজান মাসে আপনার যাকাত আদায় করতে পারেন।

জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং সম্পদের পরিমাণ কমে যায়। যাকাত কোন করুনা নয় বরং এটি গরীবের কাছে বড়লোকদের ঋণ এক আয়াতে বর্ণিত রয়েছে ‘সেসব মুশরিকদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য, যারা জাকাত দেয় না’। (সূরা হামিম আস সাজাদা: ৭-৮)

রমজান যেমন প্রতিটা মুসলমানের জন্য জাহান্নামের ঢাল স্বরূপ তেমনি যাকাত মানুষের বিপদ-আপদে ঢালস্বরূপ। যাকাত আপনি যে কোন সময় প্রদান করতে পারেন তবে রমজান মাসে যাকাত আদায় করা সবচাইতে উত্তম।

দান করা বাধ্যতামূলক নয় কিন্তু জাকাত আদায় করা বাধ্যতামূলক। ইরশাদ হয়েছে- ‘ আর তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর’। (সূরা বাকারা: ১১০)

যাকাত আদায় করলে আপনার হক আদায় হবে এবং অর্থ সম্পদের পবিত্রতা অর্জন হবে। যাকাত আদায়ের মধ্য দিয়ে একজন মুসলিম আর একজনের মুসলিমের হক আদায় হবে। এবং যাকাত আপনার সমাজের অর্থশক্তির মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।

যাকাত নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা আমাদের সমাজ কে শক্তিশালী না করে সমাজের মানুষকে করুনার পাত্র হিসেবে দেখে থাকেন। আপনার যাকাত আদায় করলে আপনাকে এমন মানুষ দেখে যারা আদায় করতে হবে যে মানুষটি সামনে বছর আর যাকাতের জন্য কারো কাছে করুনার পাত্র না হয়।

তাই এমন মানুষকে দেখে যাকাত দেবেন সে যেন সে যাকাতের অর্থ কি নিয়ে কিছু করার উৎসাহ পাই। এবং জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা যাকাতের সময় সস্তা দামে শাড়ি লুঙ্গি কিনে যাকাতের হক আদায় করে থাকেন যা কখনোই আমাদের সমাজের শক্তিশালী বুনিয়াদ হিসেবে আমাদের সমাজকে উন্নতি শিখরে পৌঁছাতে পারবেনা।তাই ডাকাতি হবে এমন যে যাকাতটি আপনি ব্যায় করে একজনকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করবেন।

যাকাত কাদের দেওয়া উচিত

আজকেরে আর্টিকেলে আমরা যাকাত কখন দিতে হবে এবং যাকাত দেওয়ার উত্তম সময় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি যারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই যাকাত কখন দিতে হবে সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যাকাত অর্থ পবিত্রতা বিশুদ্ধতা।

আপনার সম্পদের হিসাব পরিমাণ অর্থ আপনাকে যাকাতের জন্য ব্যয় করতে হবে। যাকাত আপনার সম্পর্কে কমাবে না বরঞ্চ বৃদ্ধি করবে। তাই আমাদের সকলের উচিত সঠিক সময়ে যাকাতের হক আদায় করা।

আরো পড়ুনঃ রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

যাকাত কাদের দেওয়া উচিত এ বিষয়ে আমাদের অবশ্যই জানা জরুরি। কারণ আপনি যাকাতের অর্থ সঠিক ভাবে আদায় না করতে পারেন  তাহলে সে যাকাতই আপনার কখনোই কাজে আসবে না। তাহলে চলুন যাকাত কাদের যাওয়া উচিত সে বিষয়ে জেনে নেই।

কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জাকাত ফকির, মিসকিন ও সেই সব কর্মচারীর জন্য, যারা সদকা উসুলের কাজে নিয়োজিত এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য। আর দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের (সাহায্যের) জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : তওবা, আয়াত : ৬০)

পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে ,

وَأَقِيْمُوْا الصَّلَاةَ وَاٰتُوْا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوْا لِأَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوْهُ عِندَ اللهِ اِنَّ اللهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيرٌ

‘তোমরা নামায কায়িম করো, যাকাত আদায় করো। আর তোমরা নিজেদের জন্য যে উত্তম আমল করে থাকো তার প্রতিদান মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট পাবে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমরা যে সমস্ত নেক আমল করে থাকো তা দেখেন।’-সুরা বাকারা:১১০

১। ফকির ফকির বলতে এমন মানুষ বোঝানো হয়েছে যার কোন সম্পদ নেই। কিন্তু সে কোন কাজে কর্মরত রয়েছে।এমন মানুষকে যাকাত প্রদান করতে হবে। 

২। মিসকিন ও নিঃস্ব। মিসকিন বলতে এমন মানুষ বোঝানো হয়েছে যারা নিঃস্ব যাদের কোন আর্থিক ও বসবাসের সম্পদ বলতে কিছুই নেই।

৩। গোলাম বা দাসমুক্তির জন্য জাকাত দেওয়া। বর্তমানে এই খাতও দেখা যায় না।

৪। জাকাতের অর্থ সংগ্রহকারী। ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে জাকাত সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের আমেল বলা হয়। তাদের সংগৃহীত যাকাতের সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান করা যেতে পারে। 

৫। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি। যার ঋণ আদায় করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ অবশিষ্ট থাকে না। এমন ব্যক্তিকে যাকাত প্রদান করতে পারবেন।

৬। আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তি। যেসব মুসলমান আল্লাহর পথে রয়েছে, তাদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ-সম্পদ না থাকলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে। 

৭। মুসাফির ব্যক্তি। কোনো ব্যক্তি যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কোথাও সফরে এসে সম্পদশূন্য হয়ে পড়ে, তাহলে তাকে বাড়িতে পৌঁছার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জাকাত হিসেবে দেওয়া যাবে।

উল্লিখিত সব খাতে অথবা যেকোনো একটি খাতে জাকাত দিলে তা আদায় হয়ে যাবে। এই খাত গুলোতে যাকাত দিতে পারবেন না, যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা,  রাস্তা ঘাট নির্মাণ এবং অনেকেই মা-বাবা ,দাদা-দাদি, নানা- নানি, নাতি-নাতনি, ফকির-মিসকিন হলেও তাদের জাকাত দেওয়া যাবে না।পক্ষান্তরে নিজের ভাইবোন, চাচা, ফুফু, খালা, মামা, সত্মা, শশুর-শাশুড়ি, জামাতা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত হলে তাদের জাকাত দেওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ রোজা অবস্থায় ফেসবুক চালানো যাবে কিনা

আশা করি যাকাত  কাদের দেওয়া উচিত নয় , আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছেন। আসুন আমরা সঠিকভাবে যাকাতের হক আদায় করি এবং কাদের যাকাত দেওয়া উচিত এবং তাদের যাকাত দেওয়া উচিত নয় এ বিষয়টি সঠিকভাবে জেনে যাকাতের অর্থ ব্যয় করি এবং আমাদের সম্পর্কে বিশুদ্ধ ও পবিত্র করি।

যাকাত কখন দিতে হবে - যাকাত দেওয়ার উত্তম সময়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেল থেকে যাকাত কখন দিতে হবে? যাকাত দেওয়ার উত্তম সময়, যাকাত কাদের দেওয়া উচিত, যাকাত কাকে বলে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই যাকাত সম্পর্কে এ বিষয়গুলো জেনে নেওয়া উচিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আরো করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন