রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত

আসসালামু আলাইকুম, আজকের এই আর্টিকেলে আমরা রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব। আপনারা যারা এই রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান তারা আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।

রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত

তাহলে চলুন রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন এবং আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করি।

সূচিপত্রঃ রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত

দান-সদকা করার নিয়ম

আল্লাহতালার নৈকত লাভ এবং সন্তুষ্টির জন্য আমরা দান সদকা করে থাকি। আল্লাহ তাআলার ইবাদতের মধ্যে দান সদকা করা একটি উত্তম ইবাদত। আজকেরে আর্টিকেল আমরা রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। দান সাদকা করার নিয়ম সম্পর্কে কিছু জানে নেই।

আরো পড়ুনঃ ওযু ছাড়া কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কিনা

দান-সাদকা অনেক বড় ইবাদত। দান-সাদকার ক্ষেত্রে কুরআন এবং হাদিসে অনেক খাত বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু দান-সাদকা পাওয়ার প্রথম হকদার কে? দান-সাদকা শুরু করতে হবে কাকে দিয়ে? এ বিষয়ে জানা জরুরী চলুন তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দান সাদকার প্রথম হকদার কে সেটি জেনে নিন।

আপনার পরিবার যদি অভাবী হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে আপনাকে আপনার পরিবারের হক আদায় করতে হবে। আপনার পরিবার যদি অভাবী হয়ে থাকে তাহলে কখনোই আপনার দান হাদিসের আলোকে গ্রহণযোগ্য হবে না।

একটি হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, উত্তম দান তা, যা দিয়ে মানুষ অভাবমুক্ত থাকে। আর যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে তাদের থেকে (দান করা) শুরু কর। (বুখারি)

সুতরাং দান করতে হবে পরিবার থেকে। প্রথমেই বাবা-মাকে দান করতে হবে। অতঃপর স্ত্রী-পুত্রকে। দাস-দাসি ও আত্মীয়-স্বজনকে। এভাবে পাড়া-প্রতিবেশি এভাবে পর্যায়ক্রমে দূরত্বে দান করতে হবে। এভাবে দান করার কথাই বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর কুরআন এবং প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে। যা পালন করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা আমাদের কর্তব্য এবং আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতি হয়ে এটি পালন করার চেষ্টা করব।

দানের ক্ষেত্রে উত্তম হবে যে দানটি আপনার চিরস্থায়ী হবে এবং সে ব্যক্তির আমলনামায় সে দানের সোয়াবটি কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে।

মৃত ব্যক্তির নামে সদকা করা

আমরা মৃত ব্যক্তির আত্মার মাগফেরাত কামনা করে অনেকেই মৃত ব্যক্তির নামে সাদকা করে থাকি। মৃত ব্যক্তির নামে সাদকা করার মাধ্যমে যে ব্যক্তি দ্বারা সাদকা দিবেন তারও অনেক উপকার হবে। এবং মৃত ব্যক্তির নামে ছদকা করলে তার সেই সদকার সোয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। সাদকা আপনি যেকোনো সময় করতে পারেন কিন্তু রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত অনেক রয়েছে। কারণ রমজান মাস আল্লাহ তাআলার ইবাদতের একটি বিশেষ মর্যাদশীল মাস।

হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা হলে সে কবরে তার দ্বারা উপকৃত হবে এবং তার আমলনামায় সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছেঃ

عَنْ عَائِشَةَ – رضى الله عنها – أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ – صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّى افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا ، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল যে, আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছে। আমার ধারণা, মৃত্যুর আগে কথা বলতে পারলে তিনি দান করতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করি তবে কি তিনি সওয়াব পাবেন? তিনি বলেন: হ্যাঁ। [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ২৩/ জানাযা, অনুচ্ছেদ: হঠাৎ মৃত্যু। সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: ১৩/ যাকাত, পরিচ্ছেদ: ১০. মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে সদাকা করা এবং করলে এর সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে যাওয়া]

রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত

পবিত্র রমজানুল মোবারক সবার কাছে একটি মর্যাদা শীল মাস এই মাসের এবাদত গুলো আল্লাহ তায়ালা সকল মাসের  চেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করেছেন। রমজান মানুষকে দানশীলতা, উদারতা ও মহত্বের শিক্ষা দেয়।

কোনো প্রকার অপচয় না করে রোজার মাসে মানুষের সেবায় দান-সদকা করলে অভাবী মানুষের কল্যাণ হয় এবং মানবতা উপকৃত হয়। রমজানে সাদকা করার ফজিলত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা আমাদের মুসলিম ও মুমিনকে তাদের মনের উদারতা বৃদ্ধি করে ও মহত্বের সৃষ্টি করে।

আরো পড়ুনঃ রোজা অবস্থায় ফেসবুক চালানো যাবে কিনা

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক-পবিত্র করুন, (নেকির পথে) তাদের এগিয়ে দিন এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করুন। (সুরা তওবা : ১০৩)।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে কাউকে অধিকতর দয়ালু দেখিনি।’ (মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানের হাত এতটা প্রসারিত ছিল যে, সকালবেলা যদি ওহুদ পরিমাণ সম্পদও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রাখা হয়, আমার মনে হয়, মাগরিব আসার আগেই তিনি সব দান করে শেষ করে ফেলবেন। (বোখারি ও মুসলিম)।

রমজানে দানের আধিক্যরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন।

রমজান মাসে আমাদের সকলের উচিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা এবং দানের হাত প্রসার বৃদ্ধি করা। রমজান মাসে প্রতিটা কাজের জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্তর গুণ নেকি বাড়িয়ে দিবেন এবং রমজান মাসের প্রতিটি আমল ফরজ আমলের সমান নেকি আল্লাহ তা'আলা আমাদের আমলনামায় লিখে দিবেন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম রমজান মাসে বেশি বেশি দান ও সাদকা করতেন এবং আমাদেরও রমজান মাসে বেশি বেশি দান ও সাদকা করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সে হিসেবে রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ফরজ হিসেবে আল্লাহতায়ালার কাছে গণ্য।

রমজান মাস এমনই একটি মাস যে মাসে নফল ইবাদত করলে আমাদের ফরজ ইবাদতের সমান নাকি দেওয়া হয় যা অন্য কোন মাসে দেওয়া হয় না তাই আমরা রমজান মাসে বেশি বেশি দান ও সাদকা এবং আল্লাহর এবাদতে মগ্ন থাকব এতে করে আমাদের কল্যাণ রয়েছে।

দান ও সাদকার গুরুত্ব

যার দাম ও সাতকা করার পণ্য ক্ষমতা রয়েছে অবশ্যই তাকে করা জরুরি কারণ ইসলামী গান ও সাদকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত দান সাদকা মাধ্যমে আমরা আল্লাহতালার নৈকট ও সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। তাই রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত অত্যাধিক। রমজান মাসে দান-সাদকার  তেমন ফজিলত রয়েছে তেমনি রয়েছে অন্যান্য মাসেও। তাই শুধু রমজান মাসে নয় অন্যান্য মাসেও দান ও সাদকা করতে পারবেন।

বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে - আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত অন্যকিছু গ্রহণ করেন না - আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

দান ও সাদকা ইসলামে একটি গুরুত্ব অংশ। দান ও সাদকা যত গোপনে করা যায় ততই মঙ্গল। আল্লাহতালা গোপনে দানকারীকে ইত্যাদির পছন্দ করেন। তোমরা গোপনে দান করো। এবং ডান হাতে দান করো যেন বাম হাত না টের পাই।

যে ব্যক্তি গোপনে সদকা দেয় তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই সাত জনের মধ্যে হিসাব করেছেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা তার ছায়ায় ছায়া দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্যকোনো ছায়া থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘এবং এমন ব্যক্তি যে সদকা করল, অতঃপর তা গোপন করল, এমনকি তার বাম হাত জানল না, তার ডান হাত কি দান করছে।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

আরো পড়ুনঃ যাকাত কখন দিতে হবে

মৃত্যুর পর সদকায়ে জারিয়ার দ্বারা মৃত ব্যক্তির অনেক উপকৃত হয় মৃত্যুর পর প্রতিটা ব্যক্তি আমলনামা বন্ধ হয়ে যায় আপনি যদি সাদকায়ে জারিয়া করে যান তাহলে ওই ব্যক্তির আমলনামা খোলা থাকবে।

আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মানুষ মরে যায় তখন তার আমাল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিন প্রকার ব্যতীত: সদকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।’(বর্ণনায় মুসলিম)

রমজানে দান সাদকা করার ফজিলতঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের আর্টিকেলে রমজানে দান সাদকা করার ফজিলত, দান ও সাদকার গুরুত্ব, রমজানের দান সাদকা করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।

এরকম তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারন আমাদের ওয়েবসাইটের নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল পাবলিশ করা হয় ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url