শাবান মাসে কি আমল করব - শাবান মাসের ফজিলত

শাবান মাসে কি আমল করব এবং শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে এসেছি। কারণ শুরু হতে চলেছে শাবান মাস তাই যারা শাবান মাসে কি আমল করব এবং শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে জানেন না তারা আমাদের আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। আজকে আর্টিকেলে আমরা শাবান মাসে কি আমল করব এবং শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো।

শাবান মাসে কি আমল করব

তাহলে চলুন আর দেরি না করে শাবান মাসে কি আমল করব এবং শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিয়ে আল্লাহ যেন আমাদের তা পালন করার তৌফিক দান করেন। আর কথা না বাড়িয়ে শাবান মাসে কি আমল করব তা সম্পর্কে জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ শাবান মাসে কি আমল করব - শাবান মাসের ফজিলত

শাবান মাসের আমল

শাবান মাস মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পূর্ণ মাস। মুসলমানরা এই মাসে রমজানের জন্য আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি শুরু করে। বছরের শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস শাবান। অনেকেই আছেন যারা শাবান মাসে কি আমল করব এ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না, তাই আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের জন্য সাবান মাসে কি আমল করবেন তা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো।

আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালে রোজার ক্যালেন্ডার

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন।আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত অধিক লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

শাবান মাস ইবাদাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। নফল রোজা, নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দুরূদ শরীফ, জিকির আযকার, তাসবীহ তাহলীল, দোয়া কালাম, দান সদাকাহ খয়রাত, উমরাহ হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে পালন করা যায়।

বিগত রমজানের কাজা আদায়

রমজানের প্রস্তুতির জন্য বিগত রমজানের কাজে আদায় করা অত্যন্ত জরুরী যা মা-বোনদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় তারা বিগত রমজানের কাজা রোজা গুলো যথারীতি ভাবে আদায় করে নিবেন।

বেশি বেশি নফল ইবাদত করা ও নফল রোজা রাখা

শাবান মাসে রয়েছে নফল রোজার এবং নফল ইবাদতের অনেক সোয়াব। তাই এ শাবানের মাসে আমরা আল্লাহ তালার বেশি বেশি ইবাদত করব এবং অনেক নেকি অর্জন করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে অনেক নফল রোজা রাখতেন। তা আমরাই রাসূলুল্লাহ এর অনুসরণ করে শাবান মাসে নফল রোজা রাখার চেষ্টা করব।

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা

মুসলমানদের গ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআন যা রমজান মাসে নাযিল হয়েছে। তাই আমাদের শাবান মাস থেকেই কুরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যেন রমজান মাসে আমরা কুরআন বেশি বেশি তেলাওয়াত করে আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় বান্দা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারি।

সদকা করা

রমজান মাস হল ইবাদতের মাস এই মাসে আপনি যত সাদকা করবেন তত আপনার নেকির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার মন খোসা হবে। তাই শাবান মাস থেকেই সাদকা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।ইসলামের সাদকা গুরুত্ব অনেক জিনিস সাদকা করেন আল্লাহ তার উপর খুশি থাকেন।

বেশি বেশি তাজবি তাহলীল পাঠ করা

রমজান আসলে আমাদের তাসবিহ তাহলাল আরো বৃদ্ধি পায় তাই আপনি সাবান মাস থেকেই আপনার আমলে পাল্লা ভারী করতে চাইলে বেশি বেশি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরেই তাজবি তাহালীল পাঠ করুন।

বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়া

শুধু শাবান মাস নয় আল্লাহর দেওয়া পরীক্ষা দিনে আমাদের ইস্তেগফার পড়া জরুরী। তাই সাবান মাস থেকে বেশি বেশি ইস্তেগাফার পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাই শাবান মাসে আমরা সকলেই বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়ি এবং আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হয়ে যায়।

রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা বিশেষ জরুরি সুন্নাত আমল। হাদীস শরীফে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (সিলসিলাতুস সহীহাহ, আলবানী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৩)।

শাবান মাসের দোয়া

শাবান মাস হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বরকতম মাস। এই মাসে আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি আল্লাহর কাছে যে দোয়াটি পাঠ করতেন তা আপনাদের জানাবো। আপনারা যারা শাবান মাসে কি আমল করব এবং শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে চান, তারা আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

সম্পর্কে হজরত আবু বকর বালখি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

‘রজব হলো বীজ রোপনের মাস। আর শাবান হলো ওই বীজে সেচ দেয়ার মাস। অতঃপর রমজান হলো বীজ রোপন ও সেচ দেয়ার পর পরিপূর্ণ ফসল সঞ্চয়ের মাস।অর্থাৎ এই মাসে আপনি আল্লাহর যত বেশি এবাদত বন্দেগী করবেন সে ততো বেশি আমলনামায় নেকি অর্জন করবেন।

আরো পড়ুনঃ সেরা ইসলামিক ওয়েবসাইটসমূহ

বরকতময় মাস রমজান পেতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে বেশি বেশি একাধিক দোয়া করতেন।

দোয়াটি হল:-

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবান ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। অর্থাৎ রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করুন।

আল্লাহ তাআলা আমাদের এই দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। শাবান ও রমজানের আমল গুলো যেন আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারি এবং আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত পেতে পারি। আমিন

শাবান মাসের হাদিস

হিজরি চান্দ্রবর্ষের অষ্টম মাস হলো ‘শাবান’ মাস। এ মাস বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ। হিজরতের দেড় বছর পর পূর্বতন কিবলা ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা বা ‘বাইতুল মুকাদ্দাস’-এর পরিবর্তে মক্কা শরিফের মসজিদুল হারাম অর্থাৎ খানায়ে কাবা তথা কাবা শরিফ কিবলা হিসেবে ঘোষিত ও নির্ধারিত হয় এই শাবান মাসেই। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শাবান মাসে কি আমল করব এবং শাবান মাসের হাদিস সম্পর্ক আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো।

রমজান মাসের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা একটি সুন্নাত আমল এবং একটি বিশেষ কাজ। হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১০৩)। সম্ভব হলে নতুন চাঁদ দেখা সুন্নাত, চাঁদ দেখে নতুন চাঁদের দোয়া পড়াও সুন্নাত; চান্দ্র মাসের তারিখের হিসাব রাখা ফরজে কিফায়া। কারণ, ইসলামি বিধিবিধানগুলো চাঁদের তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। (আল বাদায়েউস সানায়ে)

শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শব মানে রাত, বারাআত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, প্রথম খণ্ড: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)।

শাবান মাসের ফজিলত

আরবি অষ্টম মাস- শাবান। এ মাসের পূর্ণ নাম হলো- ‘আশ শাবানুল মুআজজাম তথা মহান শাবান মাস’। সে কারণেই নবিজী মাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসজুড়ে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি ও রোজা পালন করতেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শাবান মাসে কি ইবাদত করব তার সম্পর্কে আপনাদের ইতিমধ্যেই অনেক কিছু জানিয়েছি। শাবান মাসের ফজিলত অনেক তাই আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের শাবান মাসের ফজিলত সম্পর্কেও কিছু  জেনে নিব।

পবিত্র শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত, অর্থাৎ পনের শাবান রাত হচ্ছে পবিত্র শবেবরাত। ভাগ্য রজনী, এ রাতের অশেষ ফজিলত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। বছরের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি রজনীর অন্যতম এ রাত। এ রাতের করণীয় সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন_ পনের শাবান রাতে (শবেবরাত) তোমরা জেগে থেকে ইবাদত কর এবং পরদিন রোজা রাখ। এ জন্য শবেবরাতে জেগে থেকে ইবাদত করা এবং পরদিন রোজা রাখা উত্তম।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় রজব মাসে- ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে- ২০টি নফল রোজা রাখতেন। রমজানে পূর্ণ মাস (৩০ দিন) ফরজ রোজা রাখতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি শাবান মাসেই নফল নামাজ, নফল রোজা ও নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন।

আরো পড়ুনঃ রজব মাসে কি আমল করব

১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের নফল রোজা রাখা। মাসের শাবান মাসের আইয়ামে বিজের রোজা নিসফা শাবানের অন্তর্ভূক্ত। এমনিতেই মধ্য শাবানের মাস ফজিলতপূর্ণ; তার ওপর এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত আরও বেশি। আশা করি উপরের আলোচনা থেকে শাবান মাসে কি আমল করব? তা জানতে পেরেছেন।

বছরব্যাপী প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা সুন্নাত। প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের নফল রোজাও রয়েছে। মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রয়েছে নফল রোজা। 

এ ছাড়া কোনো সময় ও দিন-তারিখ নির্ধারণ ছাড়া যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেন কোনো ফরজ ওয়াজিব ছুটে না যায় সেই বিষয়ে আমাদের সকলের সতর্ক থাকা উচিত এবং কোনো হারাম বা বেদাআত কাজে লিপ্ত না হয় প্রত্যেক মুসলমানের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

শাবান মাসে কি আমল করব - শাবান মাসের ফজিলতঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আজকের এই আর্টিকেলে শাবান মাসে কি আমল করব, শাবান মাসের ফজিলত, শাবান মাসের হাদিস, শাবান মাসের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা আজকের এই আর্টিকেল থেকে শাবান মাসে কি আমল করব এই প্রশ্নের উত্তর জেনেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url