শবে বরাতের আমল ও ফজিলত

প্রিয় সুধী আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য আমরা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে চলেছি। সামনেই শবে বরাত তাই শবে বরাতের আগমনে মুসলমান জাতি শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে চাই। মুসলিম জাতির পঞ্চম বিশেষ রাতের মধ্যে একটি হল শবে বরাত যার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। 

শবে বরাতের আমল ও ফজিলত

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত হবে আলোচনা করব। তাহলে আর দেরি না করে শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

সূচিপত্রঃ শবে বরাতের আমল ও ফজিলত

শবে বরাতের অর্থ

শবে বরাত তো আমরা মুসলিম বিশ্বের সকলেই পালন করে থাকি। কিন্তু শবে বরাতের অর্থ কি আমরা সকলেই জানি? আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য আমরা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে চলেছি। তার আগে শবে বরাতের অর্থ কিতা জেনে নিন।

শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। ‘শব’ মানে রাত, ‘বরাত’ মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’।

শবে বরাত কাকে বলে

মুসলমান বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো শবে বরাত। কিন্তু শবে বরাত কাকে বলে এ বিষয়ে অনেকেই সঠিক ভাবে জানেন না। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য আমরা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। শবে বরাত কাকে বলে চলুন তাহলে জেনে নিই।

আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালে রোজার ক্যালেন্ডার

১। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা ‘শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী’ বলা হয়েছে।

২। শবে বরাত কথাটির উৎপত্তি হয়েছে ফার্সি থেকে। ফার্সিতে 'শব' মানে রাত, আর 'বরাত' মানে ভাগ্য। শবে বরাতের অর্থ হলো ভাগ্য নির্ধারণের রাত।

৩। ইসলাম ধর্মে মানা হয় এই রাতে আল্লাহ তাআলা একটি বিশেষ রাতে বছরের একটি দিনে সকল বান্দার জীবনে কি কি ঘটবে তা নির্ধারণ করে থাকেন।আর এ রাতটি হল শবে বরাত।

শবে বরাতের আমল

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বছরই আমাদের জন্য পাঁচটি বিশেষ রাত নির্ধারণ করেছেন ।এবং এর রাতগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত। আপনারা অনেকেই শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। আজকের আর্টিকেল আপনার জন্য শবে বরাতের আমল সম্পর্কে আমরা কিছু তথ্য জানাবো। আল্লাহ যেন আমাদের শবে বরাতের আমলগুলো করার তৌফিক দান করেন।( আমিন)

প্রত্যেক বছর মুসলিম জাতির উপরে শবে বরাত এসে উপস্থিত হয়।ইসলামি শরিয়তে ‘শবে বরাত’ এর গুরুত্ব অপরিসীম। যে সমস্ত বরকতময় রজনীতে আল্লাহ্পাক তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন, শবে বরাত তার মধ্যে অন্যতম।

শবেবরাতে যে আমলগুলো করা জরুরি তার মধ্যে হল:-

নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।  এবং পরের দিন নফল রোজা রাখা। ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা। দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া। তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা। এবং আল্লাহর জিকির আযকারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করা উত্তম।

শবে বরাতের রোযা রাখা অধিকতর সাওয়াবের কাজ। হাদিসে আছে, যখন শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিনগত রজনী আসবে। তোমরা রাতে নামাযের জন্য দাঁড়াবে (রাত জেগে ইবাদত করবে) আর দিনে রোযা রাখবে।প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। বিশেষ ইবাদতের জন্য গোসল করাও মোস্তাহাব। ইবাদতের জন্য দিন অপেক্ষা রাত শ্রেয়তর। (ইবনু মাজাহ্: খণ্ড ১ম, পৃষ্ঠা ৪৪৪)

শবে বরাতে নফল ইবাদত-জিকির আযকার করা অতি উত্তম। যে বেশি এ মাসে শবে বরাতে নফল এবাদত জিকির আযকার মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবে আল্লাহ তার উপর রহমত নাজিল করবেন।শবেবরাত মূলত ক্ষমা চাওয়ার রাত, ভাগ্য পরিবর্তনের রাত।

মন থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকদিরও বদলে দেন বলে হাদিসে বলা হয়েছে। তাই আমরা যে যা পারবো আমাদের সাধ্য অনুযায়ী নফল এবাদত গুলো পালন করব আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন। (আমিন)

শবে বরাতের ফজিলত

শবে বরাত হলো আল্লাহ তাআলার ইবাদত বন্দেগীর একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। এ রাতে বিগত দিনের সকল গুনাহখাতা আল্লাহ তায়ালা তার ইবাদতের মাধ্যমে বান্দার সকল গুনাহ খাতা মাফ করে থাকেন ।আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব। শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের আর্টিকেলের সঙ্গেই থাকুন।

শবে বরাত রহমত ও মুক্তির এক মহিমান্বিত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতে মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের দরজা তার বান্দাদের জন্য খুলে দেন। এবং বান্দাদের বিশেষ ইবাদতে খুশি হয়ে আল্লাহ তায়ালা তাদের সকল গুনাহ খাতা গুলো মাফ করে দিয়ে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ সেরা ইসলামিক ওয়েবসাইটসমূহ

আল্লাহর সঙ্গে অংশীদারত্ব স্থাপনকারী  করে ও অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে তাদের আল্লাহ কখনো পছন্দ করে না এবং ক্ষমাও করেন না। তারা আল্লাহর অশেষ রহমত থেকে বঞ্চিত হন।

শবে বরাতের বিশেষ ফজিলত এর মধ্যে হলো এই রাতে সৃষ্টিজগতের ভাগ্য বণ্টন করা হয়। মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত, যা পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ রাতে এক বছরেরটি প্রকাশ করা হয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি কি জানো, অর্ধ শাবানের রাতের কার্যক্রম কী?’ আয়েশা (রা.) বললেন, ‘না, হে আল্লাহর রাসুল।’ নবী (সা.) বললেন, ‘এই বছর যতজন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং মারা যাবে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাতেই মানুষের আমল পৌঁছানো হয় এবং এই রাতেই তাদের রিজিক অবতীর্ণ হয়।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ১৩০৫)

মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে, অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫) 

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কাছে না পেয়ে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে আছেন। তিনি বললেন, “ (হে আয়েশা) তোমার কি এ আশঙ্কা হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমার ওপর জুলুম করতে পারেন? ” আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসুল, আমার ধারণা হলো আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। ” তিনি বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন এবং কালব গোত্রের ছাগল-ভেড়ার পশমের চেয়েও অধিকসংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন। ”’ (তিরমিজি, হাদিস: ৭৩৯) 

এ রাতের রয়েছে বিশেষ ইবাদতের ফজিলত যা আমাদের সকলকে  আমল করার আল্লাহ তৌফিক দান করেন এবং বিগত দিনের সকল গুনাহ খাতা গুলো আমাদের আমলের মাধ্যমে যেন মোচন করতে পারি। আল্লাহর রহমত ও কল্যান থেকে যেন আমরা বঞ্চিত না হই। তাই খাস দিলে আমরা এই রাত্রিতে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পার করব। (ইনশাল্লাহ)

শবে বরাতের নামাজ

শবে বরাত মুসলিম বিশ্বের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের রাত। আমরা যারা খাঁটি মুসলিম ঈমানদার রয়েছি, তারা মুসলিম ধর্মের সকল রীতিনীতি পালন করে থাকি। আপনারা অনেকেই শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কে সঠিক নিয়ম জানেন না। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শবেবরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে ইতিমধ্যে আপনাদের অনেক কিছু জানিয়েছি। শবে বরাতের নামাজ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের এই আর্টিকেলের সঙ্গে থাকুন।

শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো নামাজ কোরআনে বা হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে আছে, রাসূল (সা.)বলেন, যখন শাবান মাসের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল নামাজ পড়বে এবং দিনে রোজা পালন করবে। ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। এটি ইবনে মাজাহ শরিফের ১৩৮৪ নম্বর হাদিস।

আর তাই দুই রাকাত করে যত খুশি তত বার নামাজ পড়তে পারেন। আর তার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। সূরা ফাতিহার পরে যে কোনো সূরা দিয়ে নামাজ পড়লেই নামাজ হয়ে যাবে। (ইনশাল্লাহ)

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত

শবে বরাত হচ্ছে সৌভাগ্যের রাত বা রজনী। আল্লাহ তা'আলা এই দিনে সারা বিশ্বের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে থাকে। শবে বরাত যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ রাতা এই দিনে আমলগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ যা আমাদের ভাগ্যকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। 

আজকেরে আর্টিকেলে আমরা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের সামনে কিছু তথ্য নিয়ে আজকের এই পোস্টটি সাজিয়েছি শবে বরাতের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে যারা জানেন না তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে শবেবরাতের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জেনে নিন।

নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।

যারা এ নিয়তি পারেন না  তারা বাংলায় নিয়ত করলে এই ভাবে করতে পারেন: ‘শবে বরাতের দুই রাকাত নফল নামাজ/ সালাত কিবলামুখী হয়ে পড়ছি, আল্লাহু আকবর’।

শবে বরাতের দোয়া

আরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ‘লাইলাতুম মিন নিসফা শাবান’। এটি ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাত’ নামে বেশি পরিচিত। এ রাতের বিশেষ আমল গুলোর মধ্যেও রয়েছে অনেক ফজিলত। তাই আমরা শবে বরাতের দোয়া সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারব। আপনারা যারা শবে বরাতের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটি ওপেন করেছেন তাদের জন্য আজকে আমরা শবে বরাতের দোয়া সম্পর্ক কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।

আরো পড়ুনঃ শাবান মাসে কি আমল করব - শাবান মাসের ফজিলত

 নিসফা শাবানের রাতের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। তাই বেশি বেশি দোয়া করা উত্তম। হাদিসে এসেছে- ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আর তা হলো-

১. জুমআর রাতের দোয়া।

২. রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া।

৩. নিসফা শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাতের দোয়া।

৪. ঈদুল ফিতর তথা রোজার ঈদের রাতের দোয়া।

৫. ঈদুল আজহা তথা কুরবানির ঈদের রাতের দোয়া।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)

আল্লাহর কল্যাণ রহমত অনুগ্রহ পেতে এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়তেন।

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি রিজকি। (নাসাঈ)

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার গোনাহ মাফ করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার রিজিকে বরকত দিয়ে দাও।

শবে বরাতের আমল ও ফজিলতঃ শেষ কথা

শবে বরাতের আমল ও ফজিলত, শবে বরাতের অর্থ, শবে বরাত কাকে বলে? শবে বরাতের দোয়া, শবে বরাতের নামাজের নিয়ত, শবে বরাতের নামাজ, শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাতের আমল কি করবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

তাই যত পারেন বেশি বেশি নকল ইবাদত করুন এবং নফল নামাজ ও নফল রোজা পালন করুন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম তথ্যমূলক ইসলামিক পোস্ট আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url