সাজনা পাতার উপকারিতা - সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা নিশ্চয়ই সাজনা পাতার উপকারিতা জানতে আমাদের এই পোষ্টটি ওপেন করেছেন। তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের এ পোস্টে আমার আপনাদের সাজনা পাতার উপকারিতা এবং সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাবো। সাজনা ডাটা ও সাজনার পাতার শাক আমরা অনেকেই খাই। কিন্তু সাজনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানি না।
তাই আপনাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমরা সাজনা পাতার উপকারিতা ও সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করব । তাহলে চলুন দেখে নিই সাজনা পাতার উপকারিতা কি কি এবং সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ কতটুকু।
সূচিপত্রঃ সাজনা পাতার উপকারিতা - সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ
- সাজনা পাতার উপকারিতা
- সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ
- সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
- সাজনা পাতার রেসিপি
- সাজনা পাতার গুনাগুন
- সাজনা পাতার উপকারিতা - সাজনা পাতার পুষ্টিগুণঃ শেষ কথা
সাজনা পাতার উপকারিতা
শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমরা বিভিন্ন শাকসবজির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেই জানি। আমাদের দেহের পুষ্টি সাধন করতে যেমন বিভিন্ন শাকসবজি ও ভিটামিন, মিনারেল, আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে থাকে তেমনি বিভিন্ন গাছের পাতার এবং মসলাতেও আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে ছোলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
তেমনি একটি হলো সাজনা পাতা। যার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আজকের এই পোস্টে আমরা সাজনা পাতার উপকারিতা এবং সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাদের সামনে কিছু তথ্য তুলে ধরব।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
সাজনা পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি এন্টি অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের ব্যথা দূর করতে
সাজনা পাতায় থাকা ক্যালসিয়াম দুধের চাইতেও বেশি পুষ্টি সাধন করে থাকে, তাই এটি ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও পূরণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন ব্যথা সারাতে সাজনা পাতার বিশেষ উপকারিতা রয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ
আমরা অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার সমস্যায় ভুগে থাকি, এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আপনাকে সাজনা পাতা বিশেষভাবে সহায়তা করবে। আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা দূর করতে চান, তাহলে প্রতিদিন দুইবার পাকা সাজনা পাতার রস দুই থেকে তিন চামচ সেবন করবেন তাহলে আপনি উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
রুচি বৃদ্ধি করতে ও শক্তি বৃদ্ধিতে
আপনার মুখের স্বাদ ফেরাতে সাজনা পাতা ভেজে ভর্তা করে খেলে আপনার শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং মুখে রুচি ফিরে আসবে।
শ্বাসকষ্ট সমস্যা
সাজনা পাতা সিদ্ধ করে সেই ঘন রসটি সাথে আদা ও হিং মিশিয়ে সেবন করলে আপনার হেঁচকি ওঠা এবং শ্বাসকষ্ট সমস্যা দূর হবে।
কোলেস্ট্রল কমায়
প্রতিদিন সকালে এক কাপ সাজনা পাতার চা খেলে দেখবেন আপনার কোলেস্ট্রল অনেকটাই কমে গেছে।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি
আপনি যদি আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে চান প্রতিদিন অবসাদ দূর করে আপনার ত্বকটি সতেজ করে তুলতে পারে সাজনা পাতা।
এলার্জি জনিত সমস্যা
এলার্জি জনিত সমস্যা হলে সাজনা পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ
প্রাচীনকাল থেকে সাজনা পাতার ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। সাজনা পাতা বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। তাই আজকের এই পোস্টে আপনাদের জন্যই আমরা সাজনা পাতার উপকারিতা এবং সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কিছু জানাবো।
পুষ্টি গুণ -
১। প্রোটিন ৯. ৪০ গ্রাম
২। শক্তি ৬৪ ক্যালরি
৩। ফাইবার ৩.০ গ্রাম
৪। কার্বোহাইড্রেট ৮. ২৮ গ্রাম
৫। ফ্যাট ১.৪০ গ্রাম
৬। পানি৭৭.৬৭ গ্রাম
৭। আমিষ – ২.৯ গ্রাম,
৮। চর্বি – ০.২ গ্রাম,
৯। শর্করা – ৫.১ গ্রাম,
১০। খাদ্য আঁশ – ৪.৮ (গ্রাম),
১১। ক্যালসিয়াম – ২৪ মি. গ্রাম,
১২। আয়রন – ০.২ মি. গ্রাম,
১৩। ভিটা-এ – ২৬ মি. গ্রাম,
১৪। ভিটা-বি১ – ০.০৪ মি. গ্রাম,
১৫। ভিটা-বি২ – ০.০৪ মি. গ্রাম,
১৬। ভিটামিন-সি – ৬৯.৯ মি. গ্রাম
সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম
সাজনা পাতায় রয়েছে অলৌকিক গুণাবলী। এটি পৃথিবীর সবচাইতে পুষ্টিকর উপাদান। সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। আজকের এই পোস্টে আমরা সাজনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে কিছু তথ্য জানাতে তাহলে চলুন সাজনা পাতার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।
আরো পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাজনা বা সাজনা ডাটা সবজি হিসেবে আমরা খেয়ে থাকি, কিন্তু সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকে জানে না কারণ সাজনা পাতা আমাদের বিভিন্ন রোগের প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করে থাকে তাহলে চলার সাজনা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।
সাজনা পাতার শাক
আমরা অনেক সময় সাজনা পাতার শাক খেয়ে থাকি। প্রথমে শাকগুলো কে ভালোভাবে ছড়িয়ে ধুয়ে নিতে হবে এরপর সেদ্ধ করে রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি এবং কাঁচামরিচ কুচি লাল করে ভেজে শাক গুলো ভেজে গরম গরম পরিবেশন করুন।
সাজনা পাতার চা
সাজনা পাতা আপনি চা হিসেবেও খেতে পারেন। কারণ এই সাজনা পাতার চা আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। সাজনা পাতা শুকিয়ে গুড়ো করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক কাপ চা খেয়ে ফেলবেন দেখবেন আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে।
সাজনা পাতার গুড়ো
সাজনার পাতা ক্রিমিনাশক হিসেবে কাজ করে। ক্রিমি সমস্যা করলে সাজনা পাতা গুড়ো করে অথবা অন্য খাবারের সাথে খান। এবং ৬ চামচ সাজনা পাতার গুঁড়া একটি গর্ভবর্তী বা স্তন্যদানকারী জন্য বিশেষ পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
সাজনা পাতার রেসিপি
আপনার নিশ্চয়ই আমাদের এই পোস্টটি পড়ে সাজনা পাতা উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেয়ে নিশ্চয়ই সাজনা পাতার রেসিপি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তাই আপনাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমরা সাজনা পাতার রেসিপি সম্পর্কে কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। চলুন তাহলে রেসিপি গুলো কি তা জেনে নিন।
সাজনা পাতার শাক
রেসিপি প্রথমে আমরা রাখি সাজনা পাতার শাক। কারণ আমরা প্রায়ই সাজনা শাক সচরাচর খেয়ে থাকি। গরম পানিতে সিদ্ধ করে পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি, কাঁচা মরিচ কুচি পরিমাণমতো লবণ দিয়ে ভেজে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।
সাজনা পাতার পাকোড়া
পাকোড়া আমরা সকলেই পছন্দ করি আর সেটি যদি হয় সাজনা পাতার পাকোড়া তাহলে তো কোন কথাই নেই তাই প্রথমে সাজনা পাতার পাকোড়া তৈরি করতে হলে আপনাকে সাজনা পাতা-১০০ গ্রাম, মসুর ডাল-২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ও আলু-২০০ গ্রাম করে, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, লবণ ও তেল পরিমাণমতো।
প্রথমে মসুর ডালগুলো আপনাকে এক ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং ভালোভাবে ব্লেন্ডারে বেটে তার ভেতরে সজিনা পাতা গুলো দিয়ে এবং ধনেপাতা, পেঁয়াজ কুচি, আলু কুচি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে বড়ার মত গোল গোল করে তেলে ভেজে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।
সাজনা পাতার রুটি
গমের আটা-১০০ গ্রাম, বেসন-৪০ গ্রাম, সাজনা পাতা-৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ-৫০ গ্রাম এর সাথে আদা, জিরা, কাঁচামরিচ, তেল, লবণ পরিমাণমতো নিতে হবে। প্রথমে সাজনা পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে বেটে নিতে হবে। আদা, পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিতে হবে। জিরা ভেজে গুঁড়া করে নিতে হবে। এবার আটার সাথে বেসন ভালো করে মেশাতে হবে।
একে একে মিশ্রণের সাথে সাজনা পাতা, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা ও অন্যান্য মসলা মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে রুটি তৈরির খামির বানাতে হবে। কিছুক্ষণ খামির রেখে দিয়ে রুটির জন্য গোলা তৈরি করে রুটি বেলে নিতে হবে। চুলায় তাওয়া গরম করে সাধারণ রুটির মতো রুটি ভেজে নিতে হবে।
মসুর ডালের সাথে সাজনা
মসুর ডাল-১ কাপ, সাজনা- ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি, তেল, হলুদ গুঁড়া;, রসুন কুচি, মেথি, সরষে বাটা, লবণ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা পরিমাণমতো নিতে হবে। মসুর ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে রাখবেন। তারপর পাত্রে পানি চাপিয়ে তাতে মসুর ডাল, রসুন কুচি, হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে।
অন্য পাত্রে তেল দিয়ে সাজনা ভেজে তাতে মেথি দিয়ে তুলে নিয়ে পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভেজে তেলসহ ডালে ঢেলে দিতে হবে। কাঁচামরিচ কালি ও ধনেপাতা দিয়ে চুলা থেকে নামাতে হবে।
সাজনা দিয়ে ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছ-৩ টুকরা, সজিনা ৪-৫টি, পেয়াজ কুচি-১টি বড় সাইজের, কাঁচামরিচ, মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া হলুদ গুঁড়া, গুঁড়া, জিরা বাটা, তেল ও লবণ পরিমাণ মতো নিতে হবে। ইলিশ মাছের টুকরাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সাজনাগুলো ২ ইঞ্চি করে কেটে নিতে হবে।
তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি ও সব মসলা, লবণ কড়াইতে দিয়ে সাজনা দিতে হবে। সাজনা দিয়ে অল্প কষিয়ে নিতে হবে। বসানো হলে তাতে মাছগুলো উপরে ছড়িয়ে দিন এবং হালকা করে নেড়েচেড়ে পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।
সাজনা পাতার গুনাগুন
প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে আপনারা যারা সাজনা পাতার উপকারিতা এবং সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমাদের এই পোস্টটি ওপেন করেছেন, তারা নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে সাজনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। সাজনা পাতা একটি বহু গুণে গুণান্বিত একটি ঔষধি উপাদান।
আরো পড়ুনঃ বড়ই খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে জনপ্রিয় এবং বহুল প্রচলিত একটি ওষুধের স্থান দখল করে আছে। সাজনা পাতায় রয়েছ ২৪ টির ও বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তাহলে চলুন সাজনা পাতার গুনাগুন গুলো কি তা আরো একবার জেনে নেই।
১। সাজনা পাতায় রয়েছে অ্যানিমিয়া দূর করার কার্যকারী ক্ষমতা। শকের চাইতে ২৫ গুন ক্যালসিয়াম রয়েছে সাজনা পাতায়।
২। গেটেবাত এর জন্যে সাজনা পাতা বেটে হাটুতে বা যে স্থানে ব্যাথা হয় লাগিয়ে রাখলে ব্যাথা মুক্তি পাওয়া যায়।
৩। এলার্জি জনিত সমস্যা হলে সাজনার পাতা বেটে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৪। সাজনার পাতা বেটে রসুন, হরিদ্রা, লবন ও গোলমরিচ সহ খেলে কুকুরের বিষ্ট নষ্ট হয় এবং দুষ্টস্থানে প্রলেপ দিলে এক সপ্তাহে ফুলা কমে যায় ও জ্বরে আরাম হয়।
৫। রান্না করা সাজনা পাতা খেলে ইনফ্লুয়েঞ্জার জ্বর ও যন্ত্রনাদায়ক সর্দিতে উপকার পাবেন।
৬। এটি রক্ত সংবহণতন্ত্রের ক্ষমতাও বাড়ায়। সাজনার কচি পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রন হয়।
সাজনা পাতার উপকারিতা - সাজনা পাতার পুষ্টিগুণঃ শেষ কথা
প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে সাজনা পাতার উপকারিতা, সাজনা পাতার পুষ্টিগুণ সহ সাজনা পাতার গুনাগুন, সাজনা পাতার রেসিপি, সাজনা পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন