গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ - গায়ে হলুদের নিয়ম

 প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোস্টটিতে আমরা গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের জানাতে চলেছি। আমাদের দেশে অনেক ধর্ম আছে যারা  বিয়েতে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি পালন করে থাকে। কিন্তু গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ? তা অনেকেই জানেন না। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করব।

তাহলে চলুন গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ - গায়ে হলুদের নিয়ম

গায়ে হলুদের নিয়ম 

গায়ে হলুদ বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা থাকে। অনেক ধর্মে গায়ে হলুদ কথাটি চালু রয়েছে। আজকের এই পোস্টে আমরা গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।

বিয়ে মানে আনন্দ উৎসবের একটা নতুন আমেজ। যা বিভিন্ন রঙে গান-বাজনা আনন্দে কাটানো কিছু মুহূর্ত। বিয়ে বাড়ির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের অংশের মধ্যে একটি হল গায়ে হলুদ। আর এই গায়ে হলুদকে আকর্ষণীয় গড়ে তুলতে বিভিন্ন রং, বাদ্যযন্ত্র ও ছন্দের মেলা নিয়ে এ অনুষ্ঠানটি বিয়ে বাড়িতে পালন করা হয়ে থাকে। গায়ে হলুদ ছাড়া যেন বিয়েটা অসম্পূর্ণ।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের আকিকা দেওয়ার সঠিক নিয়ম

তাই বিয়ে বাড়ির মূল অনুষ্ঠান হিসেবে গায়ে হলুদ একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আগেকার যুগে দাদী নানীরা বিয়েতে গায়ে হলুদ মাখানোর সময় বর কনেকে বিভিন্ন গীত শোনাতো। কিন্তু এখনকার সময় এটি আর হয় না কারন এখন নিত্য নতুন গান বাজনা প্রাচীনকালের নারীবাদীদের গীত গুলো প্রায় বিলীন করে দিয়েছে।

এই উৎসবটি হয়ে থাকে এক পক্ষের দিক থেকেই বর কিংবা কনে যার যার বিয়ে বাড়িতে তার তার আত্মীয়-স্বজন নেই এই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়। গায়ে হলুদ ছোট থেকে বড় সকলেই হলুদ বাটা বর কিংবা কনের গায়ে মাখিয়ে থাকেন। গায়ে হলুদটি পালনের জন্য কুলায় গায়ে হলুদের উপকরণগুলো সাজানো হয়ে থাকে।

তারপরেই ছোট থেকে বড় সকল বয়সী মানুষেরা বর কিংবা কনের কপালে হলুদ মাখিয়ে দেয় এবং মিষ্টিমুখ করায় এবং অতিথিদের বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে।বিয়ের অনুষ্ঠানে হলুদ বর কনের একটি শুভ শক্তি হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। নব দম্পতির জীবনে যেন কোন অকল্যাণ না আসে সেজন্য প্রাচীনকাল থেকে গায়ে হলুদের প্রথাটি চালু রয়েছে।

বৈদিক যুগ থেকে ভারতীয় হিন্দুসমাজে গাত্রহরিদ্রা বা অধিবাস বিয়ের অনুষ্ঠানের অবশ্য পালনীয় শাস্ত্রাচার ও লোকাচার হিসেবে পালিত হয়ে এসেছে। গায়ে হলুদের অনেক নিয়ম গুলো আদিবাসী উপজাতির ভিতর থেকে যোগ হয়েছে।

গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ

বিয়ে করা ইসলামের দিক থেকে একটি সুন্নত কাজ যা আমাদের  নবী মুহাম্মদ সাঃ  নিজে করেছেন এবং আমাদের করার নির্দেশ দিয়েছেন।বিবাহ অতি গুরুত্ববহ একটি ইবাদত। কিন্তু গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ? সে বিষয়ে অনেকেই জানতে চাই, তাই আজকের এই পোস্টটি আমরা গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেব। তাহলে চলুন গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এ সম্পর্কে কিছু জেনে নিন।

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি ইসলামিক কোন  রীতি না। কিন্তু আপনি তাই বলে যে মনে করবেন যে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি করলে গুনাহ হবে তা কিন্তু নয়। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে এক ধরনের স্থানীয় রীতি বা প্রচলিত সামাজিক আচার। আমাদের ইসলাম ধর্মে বিয়েতে গায়ে হলুদ মাখা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা নতুন জামা পরার অনুমতি রয়েছে।

(আবদুর রহমান ইবন আওফ (রাঃ) হলুদ লাগিয়ে রাসূল (সঃ) সম্মুখে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু রাসূল (সঃ) তা অপছন্দ করেন নি এবং তিরস্কারও করেন নি ) ।

কিন্তু আজকের সমাজে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান নামে বিভিন্ন অশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গায়ে হলুদ বিষয় হলেও এটা কি এখন নাজায়েজ বানিয়ে ফেলছে কিছু কিছু নামধারী মুসলিমগুলো। হলুদ অনুষ্ঠান মানেই মুরুব্বিরা নব দম্পতিকে গায়ে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে অনুষ্ঠানটি খুব নমনীয়ভাবে পালন করে থাকে। কিন্তু এখনকার সময়ে হলুদ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বিভিন্ন গান-বাজনা সাজগোজ সৌন্দর্য প্রদর্শন, নিষিদ্ধ বাদ্য বাজানো, অশ্লীল গান, গায়ে হলুদের নামে অশ্লীল শিষ্টাচার। 

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা কি জায়েজ

প্রিয় পাঠক আমরা ইতিমধ্যেই এই পোস্টটি পড়ে জানতে পেরেছি গায়ের হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে, কিন্তু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা কি জায়েজ তার সম্পর্কে অনেকে জানেন না, তাহলে চলুন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা কি জায়েজ সম্পর্কে জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ বছরের শেষ দিন পালন করা যাবে কিনা

বিয়ের মূল অনুষ্ঠান হিসেবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানকে ধরা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে এটা কোন ইসলামের সংস্কৃতি নয়। বিয়ে অনুষ্ঠান এবং গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান দুইটা ভিন্ন জিনিস। আর গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি এসেছে মূলত হিন্দুদের প্রথা থেকে, যা মুসলমানেরা এ অনুষ্ঠানটি সদরে গ্রহণ করে নিয়েছে।যা ইসলামে একেবারে হারাম এবং নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানটি হলো হিন্দুদের সংস্কৃতি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বর্তমান সমাজে আমরা যা দেখে থাকি তা হল- হল ঘর ভাড়া কমিউনিটি সেন্টার, সৌন্দর্য প্রদর্শন অশীল বাদ্যযন্ত্র গান বাজনা, নারীদের রুপ, প্রদর্শন, হিন্দুদের মত হলুদের ডালা সাজানো যা ইসলামে হারাম। হলুদের অনুষ্ঠান হতে হবে নমনীয় ও শালীন।

হলুদের অনুষ্ঠানে শুধু কনের বাবা-মা এবং মুরুব্বিরায় কোণের গায়ে বা বরের গায়ে হলুদ মাখাতে পারবে এটি কোন বাধকতা নাই,  যেকেউ  সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য  বা মে কোনো সময়ে গায়ে হলুদের ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু হলুদের অনুষ্ঠান গান বাজনা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন গুলো ইসলাম হারাম করা হয়েছে, এইভাবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করলে কখনোই সেটা ইসলামে স্বীকৃতি দেবে না।

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর ঘটনাটি নিম্নরূপঃ

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তাঁর  শরীরে হলুদ সুগন্ধির চিহ্ন ছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার আব্দুর রহমান তখন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল ! আমি এক আনসারী নারীকে বিবাহ করেছি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৯৩৭)

জাফরান সংশ্লিষ্ট এ সুগন্ধি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. নিজে ব্যবহার করেনি।  সেটা তাঁর স্ত্রীর ব্যবহার করা রং থেকে তাঁর দেহে বা পোষাকে লেগেছিলো। কারণ হাদিসে পুরুষের জন্য জাফরান রং ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ২১১০)। 

১। বস্তুত হিন্দুধর্মালম্বী ও আদিবাসী উপজাতীদের থেকেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের উৎপত্তি হয়েছে। সেখান থেকে মুসলিম সমাজে এর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মুসলিম সংস্কৃতিতে গায়ে হলুদের অবস্থান কোনো কালেই ছিলো না।

২। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ দীর্ঘস্থায়ী বিবাহিত জীবন, বংশবিস্তার, নবদম্পতির সুখ-শান্তি কামনা এবং অপশক্তির প্রভাব দূর করতে ধর্মীয় আবশ্যকীয় রীতি হিসেবে এ গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। যা স্পষ্ট শিরক।

গায়ে হলুদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

গায়ে হলুদ তো আমরা সকলের বিয়েতেই করে থাকি কিন্তু গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করা কি সঠিক? গায়ে হলুদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে তা আমাদের সকলেরই জানা জরুরী তাই আজকের এ পোস্টে আমরা গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ এবং গায়ে হলুদের নিয়ম সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক কিছু জানতে পেরেছি তাহলে চলুন গায়ে হলুদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।

আমরা মুসলিম হলেও মুসলিমের নিয়ম কানুন গুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে পারি না কিংবা অনেকে জানা সত্ত্বেও মানেন না ।  অনেকেই বেদাত, শিরকে লিপ্ত থাকে। তেমন একটি হল গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। যাকে ইসলামিক কালচারের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে বলা হয়ে থাকে এটি একটি ইসলামী কালচার। আসলে কি এটা ঠিক? মানুষ এটাকে ঘুচেও দেখে না, যে এই রীতিটা কোথা থেকে এসেছে। 

ভারতবর্ষে মুসলমানরা আসার পর তারাও আচার-অনুষ্ঠানে দেশীয় রীতিপদ্ধতি অনুসরণ করে। বিয়ের এ রীতিগুলি মূলত মঙ্গোলীয় এবং অন্যান্য আদিবাসী উপজাতি থেকে এসেছে। যা একটি হিন্দু সংস্কৃত বিয়ের উৎসবের একটি অংশ। এটি কখনো ইসলামী সংস্কৃত হতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ আকিকা দেওয়ার নিয়ম

ইসলাম বিয়েতে গায়ে হলুদ দিতে নিষেধ করেননি কিন্তু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান যাক যেমন পূর্ণভাবে করা অশ্লীল গান-বাজনা সৌন্দর্য প্রদর্শন নারীদের রূপ প্রদর্শন যা ইসলামে একেবারেই হারাম এবং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হলুদ একটি উপকারী উপাদান আপনি যখন ইচ্ছা তখনই হলুদটি আপনার শরীরে মাখতে পারেন। কিন্তু মুসলমানেরা এই হিন্দু প্রথাটাকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান যাক জমাক ভাবে করে থাকে।

সনাতন ধর্ম বা মুসলমান ধর্মের হলুদ হল একটি শুভ উপকরণ। তারা মানেন হলুদ গায়ে মাখলে অশুভ লক্ষণ গুলো কেটে যাবে। যা শুধু মুসলমান ব্যতীত অনেক ধর্মে দেখা যায়। কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্মে শুভ অশুভ বলে কিছুই নেই। আপনার কোন বিপদ আসুক বা না আসুক আপনাকে সব সময় রক্ষা করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা।

বিয়ে মুসলমানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবাদত। এই ইবাদত শরীয়ার মেনে চলা একজন মুসলিমের দায়িত্ব

গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ - গায়ে হলুদের নিয়মঃ শেষ কথা

গায়ে হলুদ করা কি জায়েজ, গায়ে হলুদের নিয়ম, গায়ে হলুদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা কি জায়েজ? উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে আজকেরে আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম আর্টিকেল আরো করতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url