কালমেঘ খাওয়ার ১১টি উপকারিতা - চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই প্রতিবেদন আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছি। রোগ ব্যাধি নিয়ে আমাদের জীবন, তাই এই রোগ ব্যাধি সারাতে আপনি কালমেঘ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন। কারণ অনেকেই আছেন যারা কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না।

কালমেঘ খাওয়ার ১১টি উপকারিতা

তাহলে চলুন আর দেরি না করে ঝটপট আমরা কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকি। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

কালমেঘ এর ইংরেজি নাম

কালমেঘ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের আমরা কালমেঘের ইংরেজি নাম সম্পর্কে জানাবো। অনেকে কালমেঘকে আবার চিরতা নামে চিনে থাকেন আর কালমেঘ এবং চিরতা একই জিনিস।

কালমেঘ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর অন্য প্রচলিত নাম আলুই। Lamiales বর্গের অন্তর্ভুক্ত Acanthaceae পরিবারের এই গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Andrographis paniculata । ইংরেজিতে creat অথবা green chiretta হিসাবে বেশি পরিচিত।

কালমেঘের পাতা কোথায় পাওয়া যায়

কালমেঘের পাতা কোথায় পাওয়া যায় এ বিষয়ে আপনারা অনেকেই হয়তো জানতে চাইবেন আসলে কালমেঘ একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ যার রয়েছে বহু গুণাবলী কাল মেঘ বা চিরতা উপকারিতা সম্পর্কে এবং কালমেঘ এর পাতা কোথায় পাওয়া যায় এ বিষয়ে আপনাদের আমরা জানাবো।

আরো পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয় কালমেঘ। বাংলাদেশের মাঠে-ঘাটে কিংবা বনবাদাড়ে অবহেলা-অযত্নে বেড়ে ওঠে। রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় ভালো জন্মে। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ।

কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা

কালমেঘ বা তা একই জিনিস। এক এক অঞ্চলে এক এক নামে এই কালমেঘ বা চিরতা নামে পরিচিত। কালমেঘ প্রাচীনকাল থেকে চীনে ভারতীয় আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কালমে মেঘের পাতা সবুজ এবং এর রয়েছে বিশেষ গুনাগুন এবং উপকারিতা।

বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে এর। কালমেঘের স্বাদ তিক্ত। এই গাছের সমস্ত অংশ খুব তিক্ত হয় যার কারণে এই গাছটিকে তিক্ততার রাজাও বলা হয়। এটি আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক বিভিন্ন ধরণের রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

পেটের সমস্যাঃ পেটের সমস্যার জন্য কারমেঘ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।কালমেঘের ব্যবহারের ফলে পেটের গ্যাস, বদহজম, পেটের কৃমি ইত্যাদি দূর হয়। তাই আপনার পেটের সঙ্গে সমস্যা থাকলে আপনি নিয়মিত কালমেঘ সেবন করলে উপকার পাবেন।

জ্বর হলেঃ ডেঙ্গু থেকে চিকুনগুনিয়া বা সাধারণ জ্বর সব জ্বরের মহা ঔষধ হিসেবে এই কালমেঘ বা চিরতা রয়েছে বিশেষ গুণ। আপনি যদি ভাইরাল জ্বর আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং সে ভাইরাল জ্বর আপনার লিভারে ক্ষতি করে থাকে কিন্তু এই জ্বর যদি সরাতে চান তাহলে আপনি এই কালমেঘ পাতা ব্যবহার করলে আপনি সমস্ত  জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন।কালমেঘের পাতা পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন। এবার গুঁড়ো করে এক গ্লাস জলে ৩-৪ গ্রাম কালমেঘের গুঁড়ো ফুটিয়ে দিনে দুইবার পান করুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালমেঘ পাতা বিশেষ উপকারী। শরীরের ডায়াবেটিসের নমুনা দেখা গেলে আমাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এই গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিসের ভূমিকা ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।

হার্ট ভালো রাখেঃ হার্টের সুরক্ষার্থে কালমেঘর পাতা আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। এ সময় ধমনীতে ফ্যাট জমা রক্তনালী শক্ত হয়ে যায়। তাই আপনার রক্ত জমাট বাঁধার সমাধান করতে পারে এই কালমেঘ পাতা এবং পাশাপাশি আপনার  হার্ট সংকোচন করতে সাহায্য করবে।

কৃমির বিনাশ করতেঃ পেটের যাবতীয় কীট ও ইনফেকশন দূর করতে এ পাতা বিশেষ উপকারী।পেটের কৃমি দূর করতে কালমেঘের পাতার বড়ি বা পাতার রস খেলে উপকার দেয়। কৃমি দূর করতে খালি পেটে নিয়মিত এক সপ্তাহ কালমেঘের পাতা রস খান।

লিভার সুরক্ষাঃ কালমেঘ লিভার ও কিডনির চিকিৎসায় উপকারী। কালমেঘ পাতা আপনাকে লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কালমেঘ গুঁড়া গ্রহণে কার্বন টেট্রাক্লোরাইডের মতো বিভিন্ন রাসায়নিকের থেকে লিভারকে সুরক্ষিত করে।

ত্বকের সুরক্ষাঃ কালমেঘের মধ্যে রক্ত পরিশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি সরিয়ে দেয় এবং তাই ত্বকের রোগ সারাতে সহায়তা করে।

ভাইরাল রোগঃ কালমেঘ পাতা রস ভাইরাল সংক্রামণে উপকার করে। কালমেঘ সাধারণ ঠান্ডা এবং সর্দি জন্য একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে কালমেঘ রস সেবনে সর্দির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

টনসিল দূর করতেঃ টনসিলের সমস্যা কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী অস্বস্তির কারণ হয়ে যায়, গলায় ইনফেকশন হয়ে যায় অনেকের। এক্ষেত্রেও কালমেঘ পাতা উপকারী বন্ধুর ভূমিকা পালন করে।'

ক্ষতস্থান নিরাময়ঃ কালমেঘ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে।এটি অতিরিক্ত কোলাজেন এবং প্রদাহকোষের হ্রাস হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও এটি দাগ কমাতে সহায়তা করে। এর জন্য আপনাকে ক্ষতস্থানে স্বল্প পরিমাণে কালমেঘ গুঁড়া প্রয়োগ করতে হবে।

বদহজম ও অম্বলঃ কাল মেঘ বদহজম ও অম্বলে বিশেষ উপকারী। হজম প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে এবং খাবারগুলি সঠিকভাবে হজম করতে অপর্যাপ্ত অ্যাসিড উপস্থিত থাকার ক্ষেত্রে এটি উপকারী হতে পারে।

কালমেঘ খাওয়ার নিয়ম

কাল মেঘ ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত এবং এর ব্যবহার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কাল মেঘ দিয়ে মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধি সারানো সম্ভব। তাইতো প্রাচীনকাল থেকে এই কাল মেঘ আয়ুর্বেদিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আপনাদের জানাবো আপনি যদি সঠিক নিয়মে কালমেঘ খাওয়ার নিয়ম না জানেন তাহলে আপনি কখনোই আপনার ভালো সুফল পাবেন না। তাই কালমেঘ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন।

কালমেঘের প্রায় প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন অসুবিধায় পাতার রস, কান্ড ভেজানো পানি ও মূলেরও উপকারিতা আছে।

কালমেঘ পাতা ভালো করে ধুয়ে হালকা গরম পানি মিশিয়ে ছাঁকনিতে ছেঁকে নিতে হবে। এই কালমেঘ পাতার রস যেকোনো রকম ঠাণ্ডালাগা জনিত রোগ খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে এর স্বাদ অত্যন্ত তিত্‍কুটে, তাই রস খাওয়ার সাথে সাথে এক চামচ মধু খেতে পারেন।

আপনি যদি এই নিয়ম মেনে খেতে পারেন তাহলে আপনি বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পাবেন এবং আপনার শরীর সুস্থ থাকবে।

কালমেঘ খাওয়ার অপকারিতা

কালমেঘ বা চিরতা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে বহুগুণ কিন্তু রয়েছে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা কালমেঘ কার অপকারিতা। যা সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে কোন উপকার পাবেন না। তাই কালমেঘ খাওয়ার অপকারিতা গুলো কি তা সম্পর্কে জেনে নিন।

কালমেঘ পাতার অপকারিতাঃ

১। কালমেঘের সেবনও কিছু ক্ষেত্রে আপনার ক্ষতি করতে পারে অতিরিক্ত কালমেঘ সেবনে অ্যালার্জি হতে পারে।

২। অন্যান্য ওষুধের সাথে কালমেঘ গ্রহণ করলে মিথস্ক্রিয়া হতে পারে। তাই আপনি যদি কোনো ওষুধ সেবন করেন তাহলে কালমেঘ খাওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিন।

৩। কালমেঘের অতিরিক্ত সেবনে নিম্ন রক্তচাপ এবং সুগার কমে যেতে পারে। তাই সময় সময় রক্তচাপ এবং সুগারের মাত্রা কমে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ বড়ই খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

৪। কালমেঘ অত্যধিক সেবনের ফলে ক্ষুধার মাত্রা কমে যেতে পারে।

৫। গর্ভাবস্থায় এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় কালমেঘ চূর্ণের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

৬। প্রতিদিন কালমেঘ পাতার রস খেলে নির্দিষ্ট বয়সে মাথা ব্যথা এবং ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুগণ আমরা অনেকেই চিরতা খেতে পছন্দ করি অথবা বিভিন্ন উপকারিতার জন্য খেয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ এর উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা রাখেনা। যেহেতু এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী তাই অবশ্যই আমাদেরকে বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি নিয়মিত খেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url