জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

জলপাই এর উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই প্রতিবেদনে আলোচনা করব। জলপাই একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর শীতকালীন ফল। জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ বহুগুণ। যারা জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করে আমাদের এই প্রতিবেদনটি ওপেন করেছেন তারা সঠিক জায়গায় এসেছেন।

জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ঝটপট জলপাই এর উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকি। জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

জলপাই এর উপকারিতা

জলপাই বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর শীতকালীন একটি ফল। এই ফল অত্যন্ত টক যারা টক পছন্দ করে তাদের কাছে এই ফলটি অনেক পছন্দের। জলপাইয়ের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এতই যে এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সারাতে সক্ষম। তেমনি জলপাইয়ের দিল রয়েছে বহু উপকারিতা।

আরো পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি যদি শীতকালীন সময়ে ফলের তালিকায় জলপাই রাখেন ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করেন তাহলে বিভিন্ন উপকারিতা পাবেন এবং রোগ বালাই থেকে দূরে থাকবেন। তাই আমাদের সকলেরই জলপাইয়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হবে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিতভাবে জানাবো। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর জলপাই এর উপকারিতা সম্পর্কে চলুন তাহলে কিছু জেনে নিন।

১। জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরস ঠিকভাবে কাজ করে। পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

২। জলপাই প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। সর্দি, জ্বর ইত্যাদি দূরে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

৩। জলপাই অ্যালার্জি প্রতিরোধে সহায়তা করে। জলপাইয়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য ক্ষত সারাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

৪। জলপাইয়ের মনো স্যাচুরেটেড চর্বিতে থাকে প্রদাহবিরোধী উপাদান। বয়সের কারণে অনেকেরই হাড়ের ক্ষয় হয়। হাড়ের ক্ষয়রোধ করে জলপাই তেল।

৫। জলপাইয়ে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ চোখের জন্য ভাল। যাদের চোখ আলো ও অন্ধকারে সংবেদনশীল তাদের জন্য ওষুধের কাজ করে জলপাই।

৬। জলপাই ভিটামিন ই-এর ভাল উৎস। জলপাইয়ে আছে মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাট। জলপাইয়ের ভিটামিন ই কোষের অস্বাভাবিক গঠনে বাধা দেয়। ফলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমে।

৭। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ক্ষেত্রে জলপাই বেশ উপকারী। জলপাই রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে

৮। কালো জলপাই লৌহের বড় উৎস। রক্তের লোহিত কণিকা অক্সিজেন পরিবহন করে। কিন্তু শরীরে লৌহের অভাব হলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। ফলে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। লৌহ শরীরের এনজাইম চাঙা রাখে।

৯। জলপাইয়ের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হার্ট ব্লক হতে বাধা দেয়। জলপাইয়ে রয়েছে মোনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা আমাদের হার্টের জন্য খুবই উপকারী।

১০। জলপাইয়ের তেলে রয়েছে লো কোলেস্টেরল যা ওজন এবং ব্লাডপ্রেশার কমাতে সহায়ক।

১১। জলপাইয়ের তেলে আছে ফ্যাটি এসিড ও এ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ত্বক ও চুলের যত্নে কাজ করে। জলপাইয়ের ভিটামিন ই ত্বকে মসৃণ রাখে। চুলের গঠনকে আরও মজবুত করে।

জলপাই এর অপকারিতা

জলপাই টক জাতীয় ফল। শীতকালীন এই ফলটি অনেকের কাছে প্রিয় বিশেষ করে জলপাইয়ের আচার। তবে কাচা জলপাইয়ের অনেক উপকারিতা রয়েছে। জলপাই এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি। জলপাই একটি বিশেষ উপকারী ফল যা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আরো বৃদ্ধি পায়।

তবে এটি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। জলপাই এর উপকারিতা ও পুষ্টি গুণের পাশাপাশি এর অপকারিতা রয়েছে। যারা জলপাইয়ের আচার পছন্দ করেন তারা খালি পেটে জলপাই খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন এবং যারা অতিরিক্ত জলপাইয়ের আচার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন কারণ অতিরিক্ত জলপাইয়ের আচার আপনার পেটের সমস্যাও গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চাইছেন তারা জলপাই কম খাবেন কারণ জল পাই শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। সবশেষে বলতে চাই জলপাই খাওয়ার তেমন কোন অপকারিতা নেই তবে নিয়ম মেনে খাওয়াটাই সবচাইতে ভালো।

কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ

জলপাই একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল অনেকেই জল পায় কাঁচা খেতে বা অনেকে আচার খেতে পছন্দ করে। কিন্তু জলপাই আচার করে খাওয়ার চাইতে কাঁচা জলপাই খাওয়ার পুষ্টিগুণ বেশি। যারা জলপাই খেতে পছন্দ করেন বা জলপাই খেতে পছন্দ করেন না তাদের কে জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হবে আপনি যদি জলপাইয়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে না জানেন তাহলে এই উপকারী ফলটি খেতে মিস করবেন। তাহলে চলুন জলপাই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

জলপাইয়ের পুষ্টিগুণঃ প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ে খাদ্যশক্তি ৭০ কিলোক্যালরি, ৯ দশমিক ৭ শর্করা, ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি।

জলপাই খাওয়ার নিয়ম

এখন বাজারে চলছে জলপাইয়ের মৌসুম। টক স্বাদের এ দেশি ফলটি অনেকের কাছেই প্রিয়। জলপাইয়ের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই অংশে জলপাই খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। জলপাইয়ে রয়েছে বহু পুষ্টিগুণ। জলপাইয়ের টক, ঝাল, মিষ্টি আচার খেতে কে না ভালোবাসে! জলপাই বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় আসলে জলপাই খাওয়ার কোন নিয়ম বাধা নেই আপনার যেভাবে খুশি আপনার রুচি সম্মতভাবে এই ফলটি খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

জলপাই কাঁচা খাওয়ার পাশাপাশি খাওয়া যায় ভর্তা করে, টক রান্না করেও ভাতের সাথে খেতে পারেন। অথবা জলপাইয়ের আচার করে বছরের পর বছর সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। সবুজ রঙের এ ফলটিতে রয়েছে প্রচুর উপকারিতা। তাই বছরের এ সময়ে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অন্তত একটি করে জলপাই রাখুন। কারণ এই মৌসুমীর একটি জলপাই আপনার দেহের সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর করতে সাহায্য করবে।

জলপাই এর আচার বানানোর নিয়ম

জলপাই এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই প্রতিবেদনে আপনাদের আমরা জলপাই এর বিভিন্ন উপকারিতার কথা জানিয়েছি যারা জলপাই খেতে ও জলপাইয়ের আচার খেতে পছন্দ করেন। আজকে আপনাদের এমন একটি আচারের নিয়ম সম্পর্কে জানাবো যে আচার নিমিষেই খেয়ে শেষ হয়ে যাবে।

খিচুড়ি, গরম ভাতে মজাদার এই জলপাইয়ের আচার খেলে আপনার মুখের রুচি আরো বাড়িয়ে তুলবে।কিন্তু জলপাইয়ের আচার কিভাবে বানাবেন এই নিয়মটি জানেন না তাদের সুবিধার্থে আপনাদের আমরা জলপাইয়ের আচার বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন কিভাবে আপনারা জলপাইয়ের আচার বানাবেন সে নিয়মটি জেনে নিন।

জলপাইয়ের টক ঝাল মিষ্টি আচারঃ

প্রস্তুত প্রণালীঃ জলপাই ১ কেজি, চিনি ১ কাপের বেশি, শুকনা মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, বিট লবণ ১ চা চামচ, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, সিরকা ১/৪ কাপ, হলুদ রং সামান্য, রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ, সরিষার তেল ১ কাপ, ভিনেগার হাফ চা চামচ, লবণ পরিমাণমতো।

আচার বানানোর নিয়মঃ প্রথমে জলপাইগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।জলপাই ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে হাত দিয়ে চটকে নিন। পরে একটি বাটিতে জলপাই চটকানো চিনি, লবণ, পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ গুঁড়া, বিট লবণ, সিরকা, হলুদ রং দিয়ে মেখে রেখে দিন ৩০ মিনিট।

পরে কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে হালকা আঁচে রসুন কুচি ফোড়ন দিন খেয়াল রাখবেন যেন ফোড়ন গুলো পুড়ে না যায়। জলপাইয়ের মিশ্রণ ঢেলে ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে নিন। হয়ে এলে চুলার তাপ কমিয়ে ভিনেগার মিশিয়ে নামিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল মজাদার জলপাইয়ের টক ঝাল মিষ্টি আচার।

জলপাইয়ের রসালো আচারঃ

প্রস্তুত প্রণালীঃ জলপাই ১ কেজি, তেজপাতা ২ পিস, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, হলুদ, মরিচ, ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ করে, আদা ও রসুন বাটা ১ চা চামচ, লবণ, চিনি স্বাদমতো, রসুন হাফ কাপ, আস্ত শুকনামরিচ ৫/৬ পিস, সরিষার তেল ১ কাপ, সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ, সিরকা ২ টেবিল চামচ, ভিনেগার হাফ চা চামচ।

আচার বানানোর নিয়মঃ জলপাইগুলোকে ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। এবার ২/৩ মিনিট ফুটন্ত পানিতে জলপাইগুলোকে সিদ্ধ করে নিন। পরে লবণ, হলুদ মাখিয়ে কিছু সময় রৌদ্রে শুকিয়ে নিন। একটি বাটিতে হলুদ, মরিচ, ধনে গুঁড়া, লবণ, চিনি, সরিষা বাটা, সিরকা দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে শুকনা মরিচ ও রসুনের ফোড়ন দিন।

পরে মসলা পেস্ট দিয়ে সামান্য ভাজুন। জলপাই দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। নামানোর আগে চুলার তাপ কমিয়ে ভিনেগার দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন। ভিনেগার দেওয়ার ফলে এই আচারগুলো অনেক দিন ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যাবে আপনি চাইলেও নরমাল ফ্রিজে এই আচার রেখে সংরক্ষণ করতে পারবেন।

আপনি জলপাইয়ের আচার খেলেও জলপাই এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ পাবেন। আশা করি আমাদের জলপাইয়ের আচারের রেসিপিটি আপনার পছন্দ হবে।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে জলপাই এর ১১টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ, জলপাই এর উপকারিতা, জলপাই এর অপকারিতা, কাঁচা জলপাই এর পুষ্টিগুণ, জলপাই খাওয়ার নিয়ম, জলপাই এর আচার বানানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু আমাদের মধ্যে অনেকেই জলপাই খেতে পছন্দ করে সেহেতু অবশ্যই এ বিষয়গুলো জেনে তারপরে খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ বড়ই খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url