আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সকলে ভালো আছেন। আজকে আমরা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে আলোচনা করব। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে সঠিকভাবে জানে না। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ

তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকি। আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ

অনেকেই আখেরি  চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকেই আখেরি চাহার সোম্বা জায়েজ মনে করে পালন করে থাকেন। আখেরি চাহার সোম্বা একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ দিন মনে করে থাকেন। কিন্তু সহি হাদিস দলিল অনুযায়ী এর কোন ভিত্তি নেই এটি সমাজে প্রচলিত একটি নামমাত্র মারাত্মক বিদাআত।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা কয় তারিখ ২০২৩

আর মুমিনদের উচিত আল্লাহ তায়ালার মননীত সঠিক দিনগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বসহকারে পালন করা। মমিনদের সকল কাজেই ইসলামিক পন্থায় হওয়া জরুরী। আর যে কাজগুলো বিদাআত ইসলামে যার কোন ভিত্তি নেই সে কাজগুলো থেকে প্রত্যেক মুমিনেরই দূরে থাকা উচিত।

আখেরি চাহার সোম্বা একটি মারাত্মক বিদাআতি কাজ। তাই আমাদের সকল মুসলিম জাতির উচিত এ আখেরি যাহার সোম্বা পালন থেকে বিরত থাকা। তাই আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ  তা অবশ্যই এই আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।

আখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস

আখেরি চাহার সোম্বা মূলত ফার্সি পরিভাষা। ফার্সি শব্দ আখেরি অর্থ শেষ। চাহার অর্থ সফর মাস এবং সোম্বা অর্থ বুধবার। অর্থাৎ সফর মাসের শেষ বুধবারে মোহাম্মদ (সা.)-এর সাময়িক সুস্থতাকে স্মরণ করে মুসলমানরা যে ইবাদত করেন, তাই আখেরি চাহার সোম্বা। অনেক মুসলিম জাতি আখেরি চাহার সোম্বা  পালন করে থাকেন কিন্তু আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে সঠিকভাবে অনেকেই জানেনা। আজকে আমরা  আখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের কিছু জানাবো।

সফর মাসের শেষের দিকে  কিংবা রবিউল আওয়াল মাসের প্রথম দিকে কোন এক মধ্যরাতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই সময়ের কোন এক মধ্যরাতে নবী জান্নাতুল বাকি গোরস্থানে উপস্থিত হয়ে সকল কবরবাসীর জন্য মোনাজাত করেন। এ সময় মুক্ত ক্রীতদাস হিবা তার সঙ্গে ছিলেন।

হিবা বললেন যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন আল্লাহ তাআলা আমাকে দুটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটি পছন্দ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন। একটি হলো পৃথিবীর সকল ধন ভান্ডারে চাবি ও দীর্ঘ আয়ু এবং অপরটি হলো জান্নাত।

তখন হিবা আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করলেন আপনি কোনটি পছন্দ করেছেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন আমি দ্বিতীয়টি পছন্দ করেছি, অতএব জান্নাত।

এরপর ভোরবেলা বাড়ি ফিরে এসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং তিনি বুঝতে পারেন তার এই অসুখী মৃত্যুর সূচনা।মোহাম্মদ (সা.) ও তার মুক্ত ক্রীতদাস আবু সওয়ায় হিবার কথোপকথন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। তার অসুস্থতার জন্য কোন ওষুধই কাজ করছিল না। কিন্তু কোন একদিন সকালবেলা তিনি সুস্থতা বোধ করেন এবং তার নাতি  ইমাম হাসান হোসেন দের নিয়ে দুপুরের খাবার খান।

এবং সুস্থভাবে চলাফেরা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই সুস্থতা দেখে সকল আরববাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। এবং সকলেই দলে দলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে আসেন এবং সকলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুস্থতা কামনা করে দান খায় এবং আনন্দ উদযাপন করেন।

হজরত আয়েশা রাঃ এর বিবরণ থেকে জানা যায়, সফর মাসের শেষ বুধবার মোহাম্মদ সাঃ হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন। যদিও দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে নামতে মুহাম্মদ (সা.) আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু ওই ঘটনাকে আজও মুসলিমরা প্রতিবছর স্মরণ করেন। সফর মাসের শেষ বুধবার ওই ঘটনা ঘটে বলে এর নামকরণ হয় আখেরি চাহার শোম্বা। 

আখেরি চাহার সোম্বা তাৎপর্য

আখেরি চাহার সোম্বা তৎপর্য সম্পর্কে আপনাদের সামনে আমরা আলোচনা করব। আখেরি চাহার সোম্বা নিয়ে অনেক আলেমদের মধ্যে মতবাদ রয়েছে। আখেরী চাহার সোম্বা আরবি সফর মাসের শেষ বুধবার। বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের  মুসলিমগণ এই দিবসটিকে অতি মর্যাদা সহকারে স্মরণ করে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ জুম্মার দিনে মহিলাদের নামাজ

হুজুরের (সা.) অসুখের শুরু হয় মাথা ব্যথা থেকে। হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একদিন রাতে হুজুর (সা.) কবর জিয়ারতের জন্য বের হলেন। আমিও তাঁর পেছন পেছন গেলাম। আমার সন্দেহ হলো, তিনি বোধহয় আমার হক অন্য কাউকে দিয়ে দেবেন। কিন্তু না, তিনি দীর্ঘ সময় কবরবাসীর জন্য দোয়া করলেন। 

সফর মাসের শেষ বুধবার হঠাৎ হযরত (সা.) সুস্থ হয়ে ওঠলেন। সাত কুয়োর পানি দিয়ে গোসল করলেন। কলিজার টুকরো ফাতেমা এবং দুই নাতিকে সঙ্গে করে ভালো খাবার খেলেন। জামাতের সঙ্গে জোহরের সলাতে ইমামতি করলেন। নবীর সুস্থতা দেখে সাহাবীরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন। নবীর সুস্থতা কামনা করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর রাস্তায় স্বর্ণ-রূপা-নগদ অর্থ-উট-ভেড়া সাদকা ও দান খয়রাত  করতে লাগলেন।

আখেরী চাহার সোম্বা সম্বন্ধে বলা হয় যে, নবী সাঃ এই দিনে তাঁহার পীড়ায় কিছুটা উপশম বোধ করেছিলেন এবং গোসল করেছিলেন। এইদিনের পর আর তিনি গোসল করতে পারেননি এবং কিছুদিন পর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সবশেষে ১২ রবিউল আউয়াল তিনি ইন্তেকাল করেন।

আখেরি চাহার সোম্বা এর দোয়া

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে অনেকেই হয়তো জানতে পেরেছেন। আখেরি চাহার সোম্বা এর দোয়া সম্পর্কে যারা খুঁজে থাকেন তাদের জন্য যানা জরুরী। আখেরি চাহার সোম্বা এর কোন দোয়া কুরআন ও হাদিসে প্রমাণিত নেই।

আপনি যদি কোথাও আখেরি চাহার সোম্বার দোয়া বা হাদিস পেয়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন এটি কুরআন ও হাদিসের বাইরে। কারণ আখেরি চাহার সোম্বা যেখানে কোন অস্তিত্ব নেই কোরআন বা হাদিসে আখেরি চাহার সোম্ব প্রমাণিত নয়, তাহলে কি করে আখেরি চাহার সোম্বার দোয়া থাকতে পারে।

কিন্তু অনেক ভন্ড পীর বা ইমাম রয়েছে যারা কোরআন হাদিসের আলোকে না মেনে বিভিন্ন বিদাআতি কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে থাকে এবং নিজে নিজেই আখেরি চাহার সোম্বার দোয়া আবিষ্কার করে থাকেন। আপনি যদি তাদের আবিষ্কৃত আখেরি চাহার সোম্বার দোয়া পাঠ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি বিদাআতি এবং গুনাহ কাজে লিপ্ত হবেন।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি জায়েজ? আখেরি চাহার সোম্বার ইতিহাস, আখেরি চাহার সোম্বা তাৎপর্য, আখেরি চাহার সোম্বা এর দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়টি ইসলামের সাথে সম্পর্কযুক্ত সে হত অবশ্যই আমাদেরকে জেনে রাখা উচিত। আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদাআত

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url