আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত এ বিষয়ে অনেকে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে জানবো। কারণ আখেরি চাহার সোম্বা নিয়ে অনেকেরই নানা মতবাদ রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত এ বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পারবেন।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লে অবশ্যই আপনি আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত এ বিষয়ে সঠিকভাবে জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্রঃ আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত

আখেরি চাহার সোম্বা কি

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত এ বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। এ নিয়ে অনেকেই বাড়াবাড়ি করে থাকেন কিন্তু অনেকে জানে না এই আখেরি চাহার সোম্বা কি এর গুরুত্ব কতখানি এবং আখেরি চাহার সোম্বা মানুষ কেন পালন করে থাকে। চলুন আগে আখেরি চাহার সোম্বা কি এ বিষয়ে আগে ক্লিয়ার হয়নি।

আরো পড়ুনঃ আখেরি চাহার সোম্বা কয় তারিখ ২০২৩

আখেরি চাহার সোম্বা আরবি এবং ফরাসি শব্দ। আখেরি শব্দের অর্থ হলো শেষ এবং সোম্বা শব্দের অর্থ হলো বুধবার। অর্থাৎ আখেরি চাহার সোম্বা অর্থ দাঁড়ায় শেষ বুধবার। এ দিনটি সারা মুসলিম জাতির জন্য একটি খুশির দিন এ দিনটি সকল মুসলিম জাতির খুব আনন্দের সাথে উদযাপন করে। আখেরি চাহার সোম্বা হল সফর মাসের শেষের বুধবার।

এই দিনটিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর  সুস্থতা লাভ করেন। তাই সারা মুসলিম উম্মাহ এই দিনটিকে অনেক আনন্দের সাথে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করে থাকেন। তবে অনেকেই ভেবেছিলেন তিনি আর সুস্থ হবেন না। তবে হঠাৎ সফর মাসের শেষ বুধবার সুস্থ হওয়ায় সকলেই অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। আখেরি চাহার সোম্বা কি এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আশা করি জানতে পেরেছেন।

সফর মাসকে অশুভ মাস বা মুসিবতের মাস ভাবা কুসংস্কার

সফর মাস কে ঘিরে নানা কুসংস্কার ও বিদআত নিয়মকানুন চালু রয়েছে যা প্রাচীন আরব কাল থেকে এর  রীতি বা নিয়ম চলে আসছে। প্রাচীন আরবকাল বা জাহিদের যুগে সফর মাস কে অশুভ মাস বলে আখ্যায়িত করা হতো। সফর মাসে আরব বাসী কোন শুভ কাজ বা অনুষ্ঠান সম্পাদন করত না।

এবং অনেকেই তা এখনো এ পর্যন্ত এই মাসকে অশুভ বলেই গণ্য করে থাকেন যা একটি কুসংস্কার এবং বিদাআতি কর্ম। আসলে সফর মাস যে কুসংস্কার বা অশুভ একটি মাস এর কোন ভিত্তি বা সঠিক দলিল নেই। আল্লাহ তাআলার মনোনীত প্রত্যেকটা দিন, মাস বা সময় বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। তাই সফর মাস কে নিয়ে কুসংস্কার বা মুসিবতের মাস বলার কোন ভিত্তি নেই।

ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুসংস্কারের কোন জায়গা নেই। আপনি যদি মনে করেন আজকের দিনটি শুভ এবং কালকের দিনটি অশুভ তাহলে এটি সম্পূর্ণ আল্লাহর সাথে শিরিক করা। সাধারণত এই বিষয়গুলো অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষেরা পালন করে থাকেন। তাই ঈমান রক্ষা করতে চাইলে কখনোই এ বিষয়গুলো বিশ্বাস করবেন না।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত

এইদিকে সফর মাসের শেষের বুধবার অর্থাৎ আখেরি চাহার সোম্বা এ নিয়ে অনেক ওলামাগণ মতবাদ প্রকাশ করে থাকেন। আখেরি চাহার সোম্বা কি পালন করা কি বিদআত এ বিষয়ে অনেকেই হয়তো সঠিকভাবে না জেনে আখেরি চাহার সোম্বা অনেকেই গুরুত্ব সহকারে পালন করে থাকে। আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত চলুন এই বিষয়ে আমরা জেনে নিই।

আরো পড়ুনঃ জুম্মার দিনে মহিলাদের নামাজ

আখেরি চাহার সোম্বা এই দিনটিতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সফর  মাসের শেষের বুধবার এই দিনটিতে সুস্থতা লাভ করেন। এই নিয়ে কোন সহি হাদিস প্রমাণিত হয়নি নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কোন দিন অসুস্থ হয়েছিলেন এবং কোন দিন সুস্থতা লাভ করেছিলেন এ বিষয়ে কোন হাদিসের ভিত্তি নেই।

কিন্তু এ নিয়ে সারা মুসলিম উম্মাহ সফর মাসের শেষের বুধবার বা আখেরি যাওয়ার সংবাদ দিনটি নবীর সুস্থতা কামনা করে অনেক আনন্দ উদযাপন করে থাকেন। অসুস্থতা শুরু হওয়ার পরে মাঝে কোনদিন তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। এবং কয়েকদিন পর তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১২ ই রবিউল আওয়াল মৃত্যু বরণ করেন।

এ নিয়ে সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, বুখারী সংকলিত হাদিসে আয়েশা (রাঃ) বলেন: “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন আমার গৃহে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেল। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার উপরে ৭ মশক পানি ঢাল যেন আমি আরাম বোধ করে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। তখন আমরা এভাবে তাঁর দেহে পানি ঢাললাম।

এরপর তিনি মানুষদের নিকট বেরিয়ে যেয়ে তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তাদেরকে খুৎবা প্রদান করলেন বা ওয়াজ করলেন।” {সহীহ বুখারীঃ ১/৮৩, ৪/১৬১৪, ৫/২১৬০} তাই আখেরি চাহার সোম্বা কি বিদআত না জায়েজ এ বিষয়ে আজকের আলোচনা থেকে অবশ্যই কিছু জ্ঞান লাভ করতে পেরেছেন।

আখেরি চাহার সোম্বার আমল

অনেক অমুসলিম ওলামায়েগণেরা নির্দিষ্ট কিছু বিধি-বিধানের মাধ্যমে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করে থাকে। ধর্ম বা ইসলাম মতবাদের মতে অনেক মধ্যে এ নিয়ে অনেক মতবাদ প্রকাশ করেছেন। আখেরি চাহার সোম্বা অর্থাৎ সফর মাসের শেষ বুধবার শুকরিয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর কিছুটা সুস্থতা লাভ করে এবং গোসল করে মসজিদে ইমামতি করেন।

সারা আরব জাতি আখেরি  চাহার সোম্বা বুধবার নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখতে ভিড় জমায়। আরব যুগের এই দিনটিকে অনেকেই আনন্দের সাথে উদযাপন করে এবং অনেক মুসলিম জাতি এই দিনটিকে যায় যে মনে করেন। আখেরি চাহার সোম্বা আমল কিছু রয়েছে যা অনেকেই এই দিনটিতে পালন করেন।

উত্তম রূপে গোসল করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন কেউবা দান খয়রাত করেন এবং আখেরি চাহার সোম্বা সফর মাসের শেষের বুধবার দিনটি আল্লাহর জিকির আজগরের মাধ্যমে পালন করে থাকেন। সফর মাসের শেষের বুধবার কোন বিশেষত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নেই।

এ দিনকে ধরে কোন রোগ নামাজ রোজা জিকির, সাদকা, দান, দোয়া ইত্যাদি পালন করলে আপনি অন্য দিনের চাইতে বেশি নেকি বা সোয়াব অর্জন করবেন এই ধারণা ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। তবে ইসলামিক কিছু হয়ে আখেরি চাহার সোম্বা নিয়ে বেশ কিছু আমলের কথা বলা হয়েছে। বইগুলো হলো মকছিদুল মমেনিন ,বারো চান্দের ফজিলত, তাযকিরাতুল আখেরাত ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ আল্লাহর গায়েবী সাহায্য পাওয়ার আমল

এই বইগুলো পড়লে আপনি আখেরি চাহার সোম্বার নামাজ এবং কিছু বিশেষ আমলের কথা জানতে পারবেন। এই বইগুলোতে আখেরি চাহার সোম্বা দুই রাকাত নামাজের বিশেষ কিছু নিয়ম দেওয়া হয়েছে আখেরি চাহার সোম্বা অর্থাৎ সফল মাসের শেষের বুধবার দিন সূর্যদয়ের কিছুক্ষণ পর দুই রাকাত নামাজ পড়তে হবে।

সে রাকাতের সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস ১১ বার পাঠ করতে হবে। এবং নামাজ শেষ করে ৭০ বার দুরুদ শরীফ অথবা পাঠ করতে হবে। যারা এই আমলগুলো করে থাকেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো এই দিনটি অর্থাৎ আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি  বিদআত যারা জানতে চাইছেন তাদের জন্য বলব এই দিনটি  পালন করা বিদআত।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআতঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে আখেরি চাহার সোম্বা কি? সফর মাসকে অশুভ মাস বা মুসিবতের মাস ভাবা কুসংস্কার, আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা কি বিদআত? আখেরি চাহার সোম্বার আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যেহেতু এ বিষয়টি মুসলিমরাই পালন করে থাকে সেহেতু অবশ্যই আমাদেরকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url