পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়

আপনি নিশ্চয়ই পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্যই। আজকের এই পোস্টটিতে পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাব। পক্স বা বসন্ত একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোগ। বসন্তকালে এ রোগটি বেশি দেখা দিয়ে থাকে। তাই অনেকেরই পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।

পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়

আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

সূচিপত্রঃ পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়

ভূমিকাঃ পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়

অনেক সময় দেখা যায় পক্স বা বসন্ত রোগ আমাদের শরীরে আক্রান্ত হয় থাকে । যা একটি ভাইরাস জনিত সংক্রমণ রোগ। আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুনঃ এলার্জি ভালো করার উপায়

আপনারা যারা পক্স বা বসন্ত রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমরা বসন্ত রোগের নিরাময়ের সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করব। তাহলে চলুন পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিন।

বসন্ত রোগ কিভাবে ছড়ায়

বসন্ত কালে যেমন প্রকৃতির নতুন সাজে সাজে এবং হালকা শীতল আবহাওয়া আমাদের শরীরে হানা দেয়, ঠিক তেমনি এ সময়টা ঠিক ঝড়ের মতো ছোবল মারে বসন্ত রোগ। প্রায় সব ঋতুতেই এই রোগ কমবেশি হলেও শীতের শেষে এ রোগটি বেশি দেখা যায়। আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময় উপায় সম্পর্কে আপনাদের সামনে বিস্তারিত ভাবে জানাবো। তাহলে চলুন তার আগে আমরা বসন্ত রোগ কিভাবে ছড়ায় তা জেনে নিন।

চিকন পক্স বা জলবসন্ত অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। ভেরিসেলা জোস্টার নামক এক ধরনের ভাইরাস এ রোগের কারণ। এই রোগের প্রথম বিবরণ পায় আমরা ৯০০ শতাব্দীতে। তখন এটাকে এক ধরনের শান্ত গুটি বসন্ত বলা হতো। কিন্তু ১৭৬৫ সালে ভোগেল এটার নামকরণ করেন' ভেরিসেলা'। ১৭৬৬ সালের মোরটেম এর নাম দেন চিকন পক্স। ১৭৬৭ সালে হেবারডেন গুটি বসন্ত বা স্মল পক্সের সাথে চিকন পক্সের পার্থক্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক ঘোষণা দেয় পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে স্মল পক্স। কিন্তু চিকন পক্স নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলোতে চিকন পক্স বা জলবসন্ত এক মারাত্মক সমস্যা। তবে একবার কেউ এ রোগে আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় বার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তার শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির ফলে দ্বিতীয়বার এ রোগের ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

চিকন পক্স যেভাবে ছড়ায়

১. রোগীর হাঁচি কাশি থাকে

২. আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে

৩. আক্রান্ত রোগীর জিনিসপত্র ব্যবহার করলে

৪. আক্রান্ত রোগে নিঃশ্বাসে বাতাসে সংস্পর্শে

৫. আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি থাকলে এবং সেখানকার বাতাসের সংস্পর্শে এলে।

৬. আক্রান্ত রোগীর শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার পাঁচ দিন আগে থেকে এবং ফুসকুড়ি শুকিয়ে যাওয়া র ৬ দিন পরে কেউ সংস্পর্শে এলে। মনে রাখতে হবে ভারিসেলা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই উপসর্গ দেখা দেয় না। সাধারণত ১৪ থেকে২১ দিন  বা ১৭ দিন পর্যন্ত রোগটি শরীরে সুস্থ অবস্থায় থাকে। পরে ধীরে ধীরে এই উপসর্গ দেখা দেয়।

পক্স বা বসন্ত রোগের উপসর্গ কী

বসন্ত ঋতুর সময় এই রোগটি হয়ে থাকে। এ রোগটি ছোট থেকে মধ্য বয়সের মানুষের বেশি হয়ে থাকে। এটি একটি ভাইরাস জনিত সংক্রমণ রোগ। আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়গুলো  সম্পর্কে সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করব। তার আগে পক্স বা বসন্ত রোগের উপসর্গ কি তা ভালোভাবে জেনে নিন।

আরো পড়ুনঃ কিডনি রোগের লক্ষণ

১। প্রধান এবং প্রথম উপসর্গ হলো জ্বর এবং শরীরের ও ফুসকুড়ি ওঠা। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে এবং ব্যথা হয়।

২। র‌্যাশ ফুসকুড়ি প্রথম দিনেই উঠতে পারে। পিঠে এবং বুকে এ ফুসকুড়ি গুলো প্রথম দেখা দেয়। পরে মুখে ও মাথায় উঠে।

৩। পায়ের তলা ও হাতের তালুতে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।

৪। সাধারণত প্রথম দিনেই ফুসকুড়ি গুলোর ভেতরে পানি জমা হতে থাকে। সেগুলো দেখতে ফোসকার মত হয়। কোন কোন ফুসকুড়ি আবার তরল পদার্থপূর্ণ। কোন কোন ফুসকুড়ি আবার পূঁজে পূর্ণ হয়।

৫। তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই আপনার পুরো শরীরে ফুসকুড়ি বিস্তার লাভ করে। এবং সমস্ত শরীর ছড়িয়ে পড়ে।

৬। শরীর চুলকাতে থাকে।

৭। এরপর ধীরে ধীরে ফুসকুড়ি গুলো শুকাতে থাকে। শুকানোর পর ফুসকুড়ি আবরণ গুলো আস্তে আস্তে ঝরে যেতে থাকে। এবং দুই সপ্তাহের মধ্যেই শরীরের সব আবরণ গুলো  ঝরে  যায়।

বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়

যদিও চিকনপক্স ও জলবসন্ত একটি ভাইরাস জনিত সংক্রমণর রোগ তবুও এটি ভয়পাবার কিছু নেই। এখন বসন্তের প্রতিশোধক ভ্যাকসিন রয়েছে। জন্মের পর থেকে ৪৫ দিন পর থেকে যে কোন সময় বসন্তের ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। আজকের এই পোস্টে পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।

এটি ভাইরাস সংক্রমিত রোগ হলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ শিশু জন্মের৪৫ দিনের পর থেকে যেকোনো সময় বসন্তে রোগের ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। আর যারা এই ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা ও সচেতনতা বা চিকিৎসকের পরামর্শ এ রোগ সাধারণ ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই।

১। রোগ সনাক্ত হওয়ার প্রথম দিন থেকে হাত ও নখ ছোট করে কাটতে হবে।

২। সব সময় ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে এবং রোদ পরিহার করতে হবে।

৩। গরুর গোস্ত, চিংড়ি, ইলিশ ইত্যাদি এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এ সময় রোগীকে অনেক পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয়। শাকসবজি এবং পাকা ফল বেশি করে খেতে হবে। এবং পানির পরিমাণ বেশি পান করতে হবে। শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে রোগীকে বেশি বেশি করে খেতে হবে।

৪। জলবসন্ত হলেও আপনি গোসল করতে পারবেন, কিন্তু গোসলের পর আপনার শরীর নরম কাপড় দিয়ে আস্তে আস্তে মুছবেন। এবং স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করা যাবে।

৫। রোগীর কাপড়-চোপড় বিছানার চাদর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ সময় ডাবের পানি খুবই উপকারী ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া এবং গোসল করলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।

বসন্ত রোগের প্রতিশোধক ঔষধ

এ রোগটি প্রধানত শীত ও বসন্ত ঋতু সন্ধিক্ষণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময় এই রোগটি দেখা যায়। আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক কিছু আলোচনা করেছি। বসন্ত রোগ একটি ভাইরাস সংকরমিত রোগ তাই বসন্ত রোগের প্রতিশোধক ওষুধ সম্পর্কে জানা আমাদের সকলেরই জরুরী। তাহলে চলুন পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে বসন্ত রোগের প্রতিশোধক ঔষধ গুলো কি তা জেনে নিই।

আজকে আমরা বসন্ত রোগের প্রতিষেধক ঔষধ হিসেবে তিনটি ওষুধের কথা উল্লেখ করব। এই তিনটি ওষুধ বসন্ত রোগের প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১। Variolinum 

২। Vaccininum 

৩। Malandrinum 

উপরোক্তর তিনটি ওষুধের মধ্যে যেকোনো একটি ওষুধ দুই ফোঁটা মাত্রায় সকালেও সন্ধ্যা খালি পেটে সেবন করলে আপনার শরীরের বসন্তের আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ওষুধটি সকালের সন্ধ্যায় খালি পেটে এক ফোঁটা করে সেবন করা উচিত। এভাবেই ওষুধটি পরপর ৭ দিন সেবন করতে হবে।

বসন্ত রোগের হোমিও ঔষধ

শীতের আগমনে এবং শেষে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রমণ হয়ে থাকে। তেমনি একটা বসন্ত রোগ। যা একটি ভাইরাস জনিত সংক্রমণ রোগ। পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে আপনি হোমিও ওষুধের ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় হিসেবে বসন্ত রোগের হোমিও ঔষধ গুলো কি তা জেনে নিই।

১। প্রথম অবস্থায় উচ্চজ্বরে,গায়ে ব্যাথা ও দুর্বলতায় – Baptisia Q ।

২। মাথাযন্ত্রণা, পিঠে ভীষণ ব্যাথা ও অস্থিরতায় – Cimicifuga 30 ।

৩। প্রচণ্ড সর্দি কাশি থাকলে প্রথমে Bryonia 30 ও পরে Antim Tart 30 ।

৪। গুটিতে পুঁজ ও জ্বরে – Marc Sol 30।

৫। মুখে লালা,গলক্ষত,দুর্গন্ধ থাকলে – Marc Vivus 30।

৬। মুখ ফোলা ও চুলকানি থাকলে – Sulphur 30 অথবা Apis mel 30।

৭। গুটি পচবার সময় – Arsenic Iod 30।

৮। মুখে, গলায় ঘা ও ব্যাথা – Rhus tox 30।

আরো পড়ুনঃ গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

৯। মামড়ি ওঠার সময় – Kali sulph 30।

১০। আরোগ্য অবস্থায় শরীরের অত্যন্ত দুর্বলতা নিবারনের জন্য – China 30।

১১। আক্রান্ত অবস্থায় জ্বর থাকলে বায়োকেমিক ওষুধ Ferrum Phos 6x ও Kali mur 6x পর্যায়ক্রমে সেবন করবেন।

১২। সুস্থ হবার পর শরীর থেকে রস দূরীভূত করার জন্য প্রায় ২/৩ মাস Rhus tox 30 নিয়মিত সেবন করবেন।

শেষ কথাঃ পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায়

আপনারা যারা আমাদের এই পোস্টটি সম্পন্ন পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। আজকের এই পোস্টে আমরা পক্স বা বসন্ত রোগের নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। বসন্ত রোগ একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোগ ।

এই রোগ শীতের শেষে এবং বসন্তের শুরুতে বেশি দেখা দেয়। তাই পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় গুলো সম্পর্কে আমাদের সকলেরই জানা জরুরী, এবং আমাদের এই রোগগুলো থেকে সচেতন থাকা সকলেরই উচিত। আজকের এই পোস্টে পক্স বা বসন্ত রোগ নিরাময়ের উপায় সম্পর্কে যারা সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েছেন। আশা করি তারা অনেক উপকৃত হয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url