টক ঢেঁড়স খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য সম্পর্কে জানাবো। গ্রামগঞ্জে এই টক ঢেঁড়স অনেকের  কাছে চেনা একটি ফল। কিন্তু টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো না জানার কারণে এই ফলটি এড়িয়ে যাই।

টক ঢেঁড়স খাওয়ার ১৩টি উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে ঝটপট এই মহামূল্যবান টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকি। অবশ্যই টক ঢেঁড়স খাওয়ার আগে আমাদেরকে এই বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে।

সূচিপত্রঃ টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা

সবজি হিসেবে যেমন ঢেঁড়স খুব পরিচিত একটি সবজি। তেমনি ভাবেই টক ঢেঁড়স আমাদের কাছে খুবই পরিচিত একটি সবজি বা ফল। খাওয়ার পাশাপাশি আপনি টক  ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুনো পাবেন বহুগুণ। আমাদের গ্রামে গঞ্জে টক ঢেঁড়স ফলটি আনাচে-কানাচে হয়ে থাকে কিন্তু এ টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানার কারণে আমরা অনেকেই হয়তো এই ফলটি  বা সবজি টি এড়িয়ে যাচ্ছি।

আরো পড়ুনঃ মেথি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

আপনি ঢেঁড়স খেলে যে উপকারিতা পাবেন তার চেয়ে দ্বিগুণ উপকারিতা পাবেন এই টক ঢেঁড়স বা চুকোর ফলটিতে। এর পাতা ফুল কান্ড ফল সবাই উপকারী ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। ছোট্ট এই গাছটি বা ফল টির কথা যতই বললি না কেন ততই কম। চলুন তাহলে আমরা টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা কি রয়েছে সে বিষয়ে জেনে নিন।

ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখেঃ আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে ঢেঁড়সের সাথে বন্ধুত্ব করুন। এর পাতায় ফুল ও ফল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী।  পরিসংখ্যান বলছে ইতিমধ্যেই আমাদের দেশ সারা বিশ্বের মধ্যে ডায়াবেটিস ক্যাপিটালে পরিণত হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়, প্রতি বছর নতুন করে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তের সংখ্যাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বহু গুণ। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশ করা একটি রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে ভারতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়ান, যা আগামী কয়েক বছরে আরও বৃদ্ধি পাবে।

এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে, তা জানা আছে? গবেষণা বলছে প্রতিদিন ৬–৮ টা ঢেঁড়স খেলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে।

ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করেঃ এই সবজিটা খেলে আপনার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এই ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি আমাদের শরীরের কোষ বিভাজনা বিশেষ কাজ করে থাকে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা অনেকক্ষণ আমাদের পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধার প্রবণতা কমিয়ে আনে। যার ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাই তারা প্রতিদিন ডায়েটে টক ঢেঁড়স  রাখতে পারে।

কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়ঃ নিয়মিত এক বাটি করে ঢেঁড়সের তরকারি খেলে কিডনির ভেতর জমতে থাকা ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।

ফলেটের ঘাটতি পূরণ করেঃ আমাদের শরীরকে শক্তিশালী করে রাখতে ফলেট অন্যতম একটি উপাদান। তাই আমাদের শরীরে ফলেটের ঘাটতি যেন সবসময় পূরণ থাকে এজন্য নিয়ম করে প্রতিদিন ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে ঢেঁড়সের কার্যকরী ক্ষমতা অনেক। এই সবজিটি ফাইবার সমৃদ্ধি। এই উপাদানটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

হাড় মজবুত করেঃ ঢেঁড়সে উপস্থিত ফলে হাড়ের গঠনে উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো ৩৫-৪০ এর পর থেকে প্রতিটি মহিলার নিয়ম করে ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।

আসলে একাধিক গবেষণায়  দেখা গেছে. আমাদের দেশে মহিলাদের বয়স ৪০ পেরতে না পেরতেই তাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ হাড়ের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। তাই প্রত্যেক মহিলাদের উচিত ৪০ পর থেকেই ঢেঁড়স খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলা।

শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধেঃ ঢেঁড়শের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি ইনফ্লামেটোরি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যাজমার লক্ষণ বৃদ্ধি প্রতিরোধে এবং অ্যাজমার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ঢেঁড়স বেশ উপকারী।

ভ্রুণ তৈরিতেঃ গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে।

চুলের যত্নেঃ ঢেঁড়শ চুলের কন্ডিশনার হিসেবে বেশ ভালো। এটি খুসকি দূর করে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।

বিষণ্ণতা দূর করেঃ ঢেঁড়শ বিষণ্ণতা, দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। যারা বেশি মানুষিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ঢেঁড়স একটি আদর্শ খাদ্য।

লৌহিত রক্তকণিকা বাড়িয়ে তুলেঃ এতে উপস্থিত বেশ কিছু পুষ্টিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।

গ্যাস বা বদহজমঃ ঢেঁড়স রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার শরীরে থাকা ফাইবার শুধুমাত্র হার্টের খেয়াল রাখে না, সেই সঙ্গে বাওয়েল মুভমেন্টে উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে কনস্টিপেশন, বদ–হজম এবং গ্যাস–অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

টক ঢেঁড়স এর পুষ্টিগুণ

ঢেঁড়স সবজিকে আমরা অনেকেই গুরুত্বহীন ভেবে থাকি। কিন্তু এই ঢেঁড়স আমাদের শরীরে অজান্তে কত রোগ প্রতিরোধ করে থাকে তা ধারণার বাইরে। টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক রয়েছে আমাদের সকলকে ঢেঁড়সের এই পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হবে।

পুষ্টিগুণঃ প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁড়শে রয়েছে শক্তি ১৪৫ কিজু, শর্করা ৭.৬ গ্রাম, ফাইবার ৩.২ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.১ গ্রাম, প্রোটিন ২.০ গ্রাম, ভিটামিন সি (২৫%) ২১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম (৮%) ৭৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম (১৬%) ৫৭ মিলিগ্রাম। ঢেঁড়শ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি

টক ঢেঁড়স খাওয়ার নিয়ম

রান্নার উপকরণ হিসেবে টক ঢেঁড়স বা চুকোর আমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি ফল বা সবজি। টক  ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের আমরা টক ঢেঁড়স বা চুকোর  খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। এ গাছের পাতা দিয়ে ছোট মাছ রান্না করলে অনেক সুস্বাদু হয়। এই ফল গাছটি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এবং ভারতীয় মানভূম অঞ্চলে এ শাক বহুল প্রচলিত। এই গাছটি আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে। গ্রামগঞ্জে তেমন একটা এই গাছটি দেখা মেলে না।

চুকোর উপগুল জাতীয় উদ্ভিদ। এটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন চুকায়, চুকুর, টক ঢেঁড়স, ভেন্ডি, চুকুরি চুপড়ি, চুকা, অনেক দেশেই এই গাছটি বাণিজ্যিক হিসেবে চাষ করা হয়। এবং আফ্রিকা এই গাছের আদিনিবাস বলে জানা যায়। চুকরের পাতায় বা ফলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, কেরোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন অন্যান্য খাদ্য উপাদান রয়েছে।

চুকোর পাতা দিয়ে ভেষজ চা বানিয়ে খাওয়া যায় যা আফ্রিকায় এখনো প্রচলিত রয়েছে। এবং এর পাতা সিদ্ধ করে লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। এর পাতা বা ফুল সিদ্ধ করে রসুন দিয়ে মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে মুখরোচক করে খাওয়া যায়। মায়ানমারে চুকোরের চাটনি অনেক জনপ্রিয়।

টক ঢেঁড়স এর রেসিপি

টক ঢেঁড়স, চুকোই চুকুর, চুত্রিক কতইনা নাম রয়েছে এই ফলটির। একা জেলায় বা অঞ্চলে এই ফলের পরিচিতি এক এক নামে। একটি বিশেষ গুণান্বিত ফল এই ফলটি আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন তবে বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ টক ঢেঁড়সে রেসিপি হিসেবে আচার করে অনেকেই খেয়ে থাকে।

টক ঢেঁড়স আপনি বিভিন্নভাবে খেতে পারেন যেহেতু টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ এত যে যতই বলা যায় এই দেশটির ব্যাপারে ততই কম। আজকে আপনাদের আমরা টক ঢেরস খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আজকের এই অংশে টক  ঢেঁড়স এর রেসিপি সম্পর্কে জানাবো। এ রেসিপিটি তৈরি করতে যেসব উপাদান গুলো লাগবে তা দেখে নিন।

উপাদানঃ ১৫ থেকে ২০ টি টক ঢেঁড়স, ৮ থেকে ১০ টি শুকনো মরিচ,২টি তেজপাতা ,২টি এলাচ,২ চা চামচ সর্ষের তেল,১ চা চামচ আমচুর পাউডার,১ চা চামচ বীটলবন,প্রয়োজন মত নুন,১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ১/২ কাপ গুড় /চিনি।

রেসিপি তৈরিঃ প্রথমেই ফলগুলো থেকে পাপড়িগুলো আলাদা করে নিবেন। পাপড়ি গুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এবং প্যানে পরিমাণ মতো সরিষার তেল দিয়ে এলাচ থেঁতো করে তেজপাতা দিয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ নুন ও গুড়/ চিনি দিয়ে টক ঢেঁড়স গুলো ঢেলে দিন হালকা আঁচে নাড়তে থাকুন। এবার টক ঢেরসগুলো শুকিয়ে এলে তাতে হলুদ শুকনো মরিচ ভেজে গুঁড় করে তারপর ছিটিয়ে দিন।

এবং তাতে আচারের মসলা এক চামচ দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। টক ঢেঁড়স টি আঠালো হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এটি প্লেটের ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন বা কিছুদিন সংরক্ষণ করতে পারেন নরমাল ফ্রিজে রেখেও। এই টক ঢেঁড়সের চাটনি টি আপনি রুটি বা ভাতের সাথেও খেতে পারেন।

আজকের এই রেসিপিটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে আপনি যদি টক ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ পেতে চান তাহলে অবশ্যই এ রেসিপিটি বাসায় একবার ট্রাই করবেন।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলে টক ঢেরস খাওয়ার উপকারিতা সহ আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনারা যারা টক ঢেঁড়স খেতে পছন্দ করেন সাধারণত তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো আজকের এই আর্টিকেল। যে কোন খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই আমাদেরকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে।

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url