বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়

বদ নজর থেকে বাঁচতে আপনাদের জন্য আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানাবো। অনেকেই আছেন যারা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। আমাদের প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি আপনার ও বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়

তাহলে চলুন আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কিছু আমল ও করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন। বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন।

সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদ নজর

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের আমরা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানাবো বদ নজর এমনই একটি কুদৃষ্টি যা মানুষের জীবনকে বিনষ্ট করে দিতে পারে। তাই আমাদের সকলকে ও বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নানা রকম হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ

কেউবা ভালো চোখে দেখে কেউ বা মন্দ চোখে। আর এ দৃষ্টিভঙ্গের জন্যই অনেক সময় কোন ভালো জিনিসের প্রতি আমাদের কুদৃষ্টি পড়ে এবং বদ নজর লাগে।খারাপ নজর লাগলে নজরকৃত ব্যক্তি বা জিনিস ক্ষতি ও ধ্বংসের সম্মুখীন হয়।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদ নজর কে কুদৃষ্টি বলা হয় যার মাধ্যমে একজন মানুষের ক্ষতি হয়ে থাকে। বদ নজরে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একদম সত্য।ইমাম কুরতুবি (রহ.) লিখেছেন, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা এ বিষয়ে একমত যে ‘চোখ লাগা’ এবং এর মাধ্যমে ক্ষতিসাধিত হওয়া প্রমাণিত সত্য।

তাই কারও ক্ষেত্রে বদনজর বা কুদৃষ্টি লেগে গেলে, এই বিশ্বাস রাখতে হবে এই দৃষ্টিশক্তির মধ্যে এমন ক্ষমতা (খারাপ) মহান আল্লাহই দান করেছেন। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর ওপর ভরসা করা, তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

কোরআন হাদিসে বদ নজরের বিষয়

মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই খারাপ যা আপনার জীবনকে বিনষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। তাই বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের নজর বিষয়ক বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। কোরআন ও হাদিসে বদ নজর বিষয়ক কয়েকটি হাদিস আলোকপাত রয়েছে।

কাফেররা যখন উপদেশবাণী শোনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, এ তো এক পাগল’। (সুরা কলম, আয়াত : ৫১)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বদ নজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা নজরের প্রভাব সত্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৮)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, আয়াতে ‘তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘তোমার প্রতি বদ নজর দেবে।’ অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রোগী বানিয়ে দেবে, যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাজত না থাকে। আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে, বদ নজরের কুপ্রভাবের বাস্তবতা রয়েছে, আল্লাহর হুকুমে। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৪১০)

সাহাবি আবু সহল ইবনে হুনাইফ। বদনজর বিষয়ে তার ঘটনা সুবিখ্যাত। একবার গোসল করার জন্য তিনি কাপড়-চোপড় খোলেন। গৌরবর্ণ, সুঠাম দেহী ও উন্নত গড়নের অঙ্গ-সৌষ্ঠব। হঠাৎ তার ওপর নজর পড়ে আমের ইবনে রবিআর। আর সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে, ‘আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ও কান্তিময় দেহ কারো দেখিনি।’

এরপর সাহল ইবনে হুনাইফের দেহে ভীষণ জ্বর এসে যায়। মহানবী (সা.) এ সংবাদ পেয়ে আমের ইবনে রবিআকে আদেশ দেন, সে যেন অজু করে অজুর পানি থেকে কিছু অংশ পাত্রে রাখে। তারপর তা যেন সাহল ইবনে হুনাইফের দেহে ঢেলে দেওয়া হয়। আদেশ মোতাবেক কাজ করা হলে সহল ইবনে হুনাইফ রক্ষা পেলেন। তার জ্বর চলে গেল এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।

এ ঘটনায় মহানবী (সা.) আমের ইবনে রবিআকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হয়েছিল, তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া করলে না কেন? মনে রেখো, বদনজর লেগে যাওয়া সত্য।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৭১৪)

মানুষের ভালো কিছু দেখলে যে দোয়া পড়তে হবে

বদ নজর খুবই খারাপ একটি দৃষ্টিভঙ্গি। আর এ থেকে বাঁচতে এবং বাচ্চাদের বস নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কারণ বদ নজর কথাটি সত্য এবং এ ঘটনাগুলো ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য। বদ নজর সাধারণত মানুষের ভালো কিছু দেখলেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। তাই মানুষের ভালো কিছু দেখলে আপনার কুদৃষ্টি যেন সে জিনিসের উপর না পড়ে এর জন্য দোয়া পড়তে হবে।

আরো পড়ুনঃ ১২ রবিউল আউয়াল কত তারিখ ২০২৩

আবার বিভিন্ন কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, "মাশাআল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ" বলা উচিত। এতে কুদৃষ্টির প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যায়। আর ওই ব্যক্তি বা জিনিস কুদৃষ্টির প্রতিক্রিয়া দেখে মুক্ত থাকে। বদ নজর পড়া মানুষের নিজস্ব কোন দোষ নেই তাই বদ নজর যেন সে জিনিসে না পড়ে তাই উক্ত দোয়াটি আমাদের সকলেরই পড়া উচিত।

ছোট বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় বা দোয়া সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি আপনার বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

বদনজর থেকে বাঁচাতে নবীজি (সা.) ছোটদের কোলে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন। হাদিসের গ্রন্থগুলোতে এমন অনেক বর্ণিত হয়েছে। এখানে একটি দোয়া উদ্ধৃত করা হচ্ছে। হজরত হাসান ও হুসাইনকে (রা.) নবীজি (সা.) এই বাক্যগুলো দিয়ে ফুঁ দিতেন

আরবিঃ أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ

উচ্চারণঃ উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।

অর্থঃ আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সবধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)

বদ নজর থেকে রক্ষা পেতে যে আমল করবেন

বদ নজরকেউ বদ নজরে আক্রান্ত হলে তার জন্য উপশমও বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এমন কিছু আমল হচ্ছে আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একবার কোনো রোগে আক্রান্ত হলেন। তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন জিবরাইল (আ.) বললেন

আরবিঃ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ.

উচ্চারণঃ বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।

অর্থঃ আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫১২) সুতরাং দোয়াটি পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার ফুঁ দিলে ইনশাল্লাহ, ধীরে ধীরে বদ নজর কেটে যাবে।

এছাড়াও প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে পড়ে ফুঁ দিলে সে ব্যক্তির উপর সারাদিন কোন যাদু টোনা কাজ করবে না। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সুরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষায়) জিন ও বদ নজর থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন সুরা দুটি অবতীর্ণ হলো, তখন ওই সুরা দুটি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৫৮)

উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে আমরা জানতে পারি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও বড় নজর সত্য । বদ নজর বা কুদৃষ্টি আমাদের যেকোনো কারোর উপরই পড়তে পারে। তাই সতর্ক থাকার পাশাপাশি আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করতে হবে যা আমাদের বদ নজরের প্রভাবগুলো কাটাতে পারবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর দোয়া-দরুদ পড়া। এছাড়াও সূরা ইখলাস ,সুরা ফালাক ও সূরা নাসের মাধ্যমে মানুষ ও জিনের যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহ সবাইকে বদনজর থেকে হেফাজত রাখুন, আমিন।

বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়ঃ শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগণ আজকের এই আর্টিকেলের বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদ নজর, কোরআন হাদিসে বদ নজরের বিষয়, মানুষের ভালো কিছু দেখলে যে দোয়া পড়তে হবে, ছোট বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া, বদ নজর থেকে রক্ষা পেতে যে আমল করবেন এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ রবিউল নামের অর্থ কি - রবিউল নামের ইসলামিক অর্থ কি

এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url