গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি

লিচু খুবই সুস্বাদু ও রসালো একটি ফল। লিচুতে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। লিচু সাধারণত গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব লিচু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ,গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় লিচু কি খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি ? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।

তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা,গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি, গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কি হয়  ইত্যাদি বিষয়গুলো।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা-গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি

লিচুর পুষ্টি উপাদানগুলো

লিচু যেহেতু একটি গ্রীষ্মকালীন ফল তাই সাধারণত গ্রীষ্মকালে এই ফল পাওয়া যায়। লিচু খুবই সুস্বাদু, রসালো ও মিষ্টি ফল। লিচু তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক উপাদান।চলুন প্রথমে জেনে নেই, লিচুর পুষ্টি উপাদানগুলো।

লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফিনলিক যৌগ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আইরন, ম্যাঙ্গানিজ, ফাইবার।

আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের জাম খাওয়ার ১০ উপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে ১৩.৬ গ্রাম শর্করা, ক্যালোরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম , লোহ ০.৭ মিলিগ্রাম , ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম । প্রায় মাঝারি আকারের ১০ টি লিচু ১০০ গ্রাম লিচু বোঝায়।

গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা

লিচুতে অনেক প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে।তবে একজন সুস্থ মানুষ লিচু খাওয়ার যেসব উপকারিতা পাবে একজন গর্ভবতী মা লিচু খাওয়ার এসব উপকারিতা নাও পেতে পারে।চলুন আমরা প্রথমে দেখে নেই লিচু খাওয়ার উপকারিতা গুলো।

  • লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা হার্ট বিট ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • লিচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
  • লিচু নিয়মিত খেলে সর্দি ও  সাধারণ  ফ্ল থেকে রক্ষা করে।
  • লিচুতে আছে নাইট্রিক অক্সাইড যা শরীরে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। লিচুতে থাকা অলিগোনল , নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে। এছাড়াও ফ্ল্যাভোনয়েড ভাসকুলার ফাংশন উন্নত করে যা হার্টের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।
  • লিচুর ফিনলিক যৌগ ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং লিভারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
  • লিচু একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল যা হজম শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের গতিবিধি উন্নত করে।

গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কি হয় | গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার অপকারিতা

আমরা এখন জানব গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কি হয়।লিচু খাওয়ার শুধু উপকারী রয়েছে এমন নয় অতিরিক্ত লিচু খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে ।গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো হলোঃ

  • শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলেঃ গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে লিচু খেলে এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে যা একজন গর্ভবতী মায়ের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ডায়াবেটিস ঃ লিচু প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি ও রসালো হয়ে থাকে। আর একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই বেশি পরিমাণে লিচু খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • রক্তক্ষরণঃ বেশি পরিমাণে লিচু খেলে গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • মৃত সন্তান জন্মদানঃ গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে লিচু খেলে শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে এর ফলে গর্ভস্থ সন্তান বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি সন্তান মারাও যেতে পারে
  • এলার্জিঃ গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে লিচু খেলে অ্যালার্জির প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে অনেকটাই।
  • বদহজমঃ একসাথে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে বদ হজম হতে পারে এবং পেট ফুলে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ, গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভবতী মহিলা সীমিত পরিমাণে (সারাদিনে ৩-৪ টি) লিচু খেতে পারবেন। 

গর্ভবতী মায়েরা সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ফেস করেন। আমরাও উপরে দেখলাম বেশি পরিমাণে লিচু খেলে গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ও শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়েছেন অল্প পরিমাণে লিচু খাওয়া যেতে পারে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি না, খেলেও কেমন পরিমাণে খেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ আম খাওয়ার ১০ উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন।

লিচু খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময়

পৃথিবীতে প্রত্যেকটি জিনিসের একটি সঠিক নিয়ম রয়েছে তেমনি লিচু খাওয়ার ও সঠিক নিয়ম ও সময় রয়েছে ।

  • সকালে উঠে খালি পেটে লিচু খাওয়া যাবেনা। এতে আপনার পেট ফোলা সহ গ্যাসট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
  • সকালে নাস্তা করার পর অথবা দুপুরের খাবারের পরে অন্তত ৩০ মিনিট পরে লিচু খেতে হবে।
  • একসাথে অনেকগুলো লিচু খাওয়া যাবেনা । একসাথে অনেকগুলো লিচু খেলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। একসাথে ৭ থেকে ৮ টি লিচু খাওয়া যেতে পারে।

শেষ কথাঃ |গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা |গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কি হয়

প্রিয় পাঠক, আমরা জানি লিচু একটি মৌসুমী ফল। আমরা উপরে দেখলাম লিচু খাওয়ার যেমন উপকারিতা আছে তেমন কিছু অপকারিতা ও আছে। আপনাদের সুবিধার্থে আজকের এই পোস্টে আলোচনা করেছি গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কি হয়,গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। যেন গর্ভবতী মায়েরা লিচু খাওয়ার সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে,কি কি মাছ খাওয়া যাবে না দেখে নিন।

গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের এই পোস্টটি শেষ করছি। পোষ্টটি আপনার উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার পরিচিত জনের সাথে যেন তারাও জানতে পারে গর্ভবতী মায়ের লিচু খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি,গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে কি হয়,গর্ভাবস্থায় লিচু খাওয়া যাবে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url