স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

আমাদের দেশে স্তন ক্যান্সার এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি । আজকের এই পোস্টে আলোচনা করব স্তন ক্যান্সার কেন হয়, স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়, স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, স্তন ক্যান্সার কি ভাল হয় ইত্যাদি আরো অনেক বিষয় নিয়ে।

তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই, স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ, স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়, স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সহ আরো অন্যান্য বিষয়গুলো।

পোস্ট সূচিপত্রঃ স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

স্তন ক্যান্সার কি?

আমাদের দেহ অসংখ্য কোষ এর সমন্বয়ে তৈরি। এই কোষগুলো কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু স্তনের কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে তখনই স্তন ক্যান্সার হয়। স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালির লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।

স্তন ক্যান্সার কেন হয় | স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ

স্তন ক্যান্সার নারী ও পুরুষ উভয়ের হতে পারে। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের স্তন ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।প্রতিবছর ২৫৫,০০০ জন নারী রোগীর বিপরীতে ২৩০০ জন পুরুষ রোগী পাওয়া যায়। তাই পুরুষদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা নারীদের থেকে তুলনামূলক অনেক কম হলেও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।

আরো পড়ুনঃ টিউমার ভালো করার ৯ উপায় জেনে নিন।

স্তন ক্যানসার বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক বা বংশগত কারণে আবার হরমোন এর কারণে হতে পারে।আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের খারাপ অভ্যাস এর কারনে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

  • বংশগত কারণে এই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকেই। যেমন-মা, খালা, বোন বা মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে।
  • অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত অ্যাস্ট্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শে থাকেন, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর মহিলাদের মধ্যে যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারের আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা পরিবর্তন যোগ্য নয় মোটেও।
  • অনেক মেয়ে আছে যারা একটু দেরিতে বা বয়স হয়ে বিয়ে করে, ৩০ বছরের পরে বিয়ে করে সন্তানের মা হওয়া সন্তান না নেওয়া ইত্যাদি কারণে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
  • সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাসের কারণে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
  • স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে একটি অনেকেই আছে যারা সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাই না শুধু ফ্যাট বা চর্বি যুক্ত খাবার খাই তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
  • অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া বা একেবারেই শারীরিক পরিশ্রম না করে এমন ব্যক্তির স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি রয়েছে।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন স্তন ক্যান্সার কেন হয় বা স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ গুলো কি কি।

স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ

আমরা এখন দেখে নেব স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলো কি কিঃ

  • স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি স্তনের আকার-আকৃতি পরিবর্তন হওয়া।
  • স্তনের যেকোনো স্থানে ব্যথা অনুভব হওয়া।
  • স্তনের ভেতরে গোটা কিছু হয়েছে এমন অনুভব করা।
  • স্তনের বিভিন্ন অংশ অনেক সময়ই ফুলে যেতে দেখা যায়।
  • নিপল বা স্তনবৃন্তের আশেপাশে বা স্তনের অন্য কোনো জায়গার ত্বকে লাল লাল ভাব হওয়া। 
  • অনেক সময়ই নিপল দিয়ে দুধ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ নিঃসরিত হতে দেখা যায়।
  • নিপল বা স্তনের বোঁটা ভেতরে দেবে যাওয়া।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে, স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ হিসেবে ভাবা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে  চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ রইল।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের মূলত দুই ধরনের কারণ দেখা যায়। প্রথমত, অপরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ এবং দ্বিতীয়ত, পরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ। অপরিবর্তনযোগ্য এই কারণে বলা হচ্ছে যে এই ঝুঁকিসমূহ জেনেটিক বা বংশগত এবং হরমোনের কারণে হয়ে থাকে, যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। আর পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিসমূহ পুরোপুরি আমাদের নিজেদের হাতে থাকে, যা ইচ্ছে করলেই আর একটু সচেতন থাকলেই আমরা প্রতিরোধ করতে পারি। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যেহেতু স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে একটি তাই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
  • বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি।৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিনবছর পর পর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং বা ম্যামোগ্রাম করানো উচিত। ম্যামোগ্রাম হচ্ছে এক্স-রে’র মাধ্যমে নারীদের স্তনের অবস্থা পরীক্ষা করা।
  • সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাসের কারণে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। কেমন ধরনের অভ্যাস থাকলে তা পরিবর্তন করতে হবে।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার আগে এবং হরমোন থেরাপি নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • আপনার যদি পরিবারের কারো ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে থাকে তাহলে চিকিৎসা নেয়ার সময় তা চিকিৎসককে জানাতে হবে।

আশা করছি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় গুলো জেনে নিয়েছেন। উপরিউক্ত উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চললে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

স্তন ক্যান্সার মূলত স্তনের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টিউমার এর ফলে হয়। টিউমার যদি ছোট অবস্থায় থাকে তাহলে স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার এর মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। টিউমার বড় আকার ধারণ করলে মূলত তা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার টিকে নির্মূল করতে পারলেই স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমরা এখন দেখে নেব স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এর কিছু ঔষধ এর নাম।

  • Conium maculatum : স্তন টিউমারের এক নাম্বার ঔষধ হলো কোনিয়াম। এক লক্ষ (CM) শক্তিতে এক গ্রাম ঔষধ কিনে আনতে হবে এবং তা থেকে মাত্র দুটি বড়ি খেতে হবে। তারপর দুই মাস অপেক্ষা করুন। তখন যদি পরীক্ষা করে দেখেন যে, আপনার স্তনে আর কোন টিউমার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাহলে ভালো। না হলে কোন বিশেষায়িত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এর পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ রইল।
  • Thuja occidentalis : সাধারণত যাদের অতীতে নানা রকমের টিকা নেওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে থুজা ঔষধটি খেতেই হবে। আপনি ২০০ শক্তিতে সপ্তাহে এক মাত্রা করে কয়েক মাস খান অথবা এক লক্ষ শক্তিতে (CM) দুই মাস পরপর এক মাত্রা করে খেতে পারেন।
  • Phytolacca decandra : ফাইটোলেক্কা ঔষধটি স্তন টিউমারের আরেকটি সেরা ঔষধ। এটি নিম্নশক্তিতে (Q) ২০ ফোটা করে রোজ দুই বেলা হিসাবে খান দুই মাস ছয় মাস যত দিন লাগে।

এখানে উপরের ঔষধগুলোর নাম ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। স্তন ক্যান্সার যেহেতু মারাত্মক রোগ তাই যেকোনো ধরনের ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবনের অনুরোধ রইল। টিউমার ছোট অবস্থায় থাকলে, স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এর মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।

স্তন ক্যান্সার কি ভাল হয়

আমরা এখন জেনে নেব স্তন ক্যান্সার কি ভাল হয় নাকি হয়না। স্তন ক্যান্সারের বেশকিছু চিকিৎসা রয়েছে সেগুলো ঠিকমতো করালে স্তন ক্যান্সার ভালো হয়। আমরা এখন দেখে নেব কি ধরনের চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার ভালো হয়।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা গুলো হল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কি মাছ খাওয়া যাবে জেনে নিন।

উপরে আমরা স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি এর নাম উল্লেখ করেছি । স্তন ক্যান্সার কোন স্টেজে আছে তার উপর নির্ভর করে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব। আশা করি বুঝতে পেরেছেন স্তন ক্যান্সার কি ভাল হয় নাকি হয়না।

শেষ কথাঃ | স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টে আমরা স্তন ক্যান্সারের বিভিন্ন বিষয়াবলী যেমন স্তন ক্যান্সার কেন হয়, স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়, স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা, স্তন ক্যান্সার কি ভাল হয় ইত্যাদি আলোচনা করেছি। যেন আপনারা স্তন ক্যান্সার নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন এবং নিজেদেরকে সচেতন রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ শিশুদের জ্বর কমানোর ১০ টি ঘরোয়া উপায় জেনে নিন।

পোষ্ট টি আপনার উপকারী মনে হলে শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে যেন তারাও স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ, স্তন ক্যান্সার এর লক্ষণ এবং স্তন ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দেখে নিতে পারে খুব সহজেই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Skbd IT এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url